রুচির দুর্ভিক্ষ ও রুচিশীলদের দায়বদ্ধতা

সম্প্রতি নাট্যজন মামুনুর রশীদ “রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের মতো লোকের উত্থান হয়েছে” বলে মন্তব্য করে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর হিরো আলম এবং মামুনুর রশীদের পক্ষে বিপক্ষে নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে। সাংস্কৃতি অঙ্গনের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি মামুনুর রশীদ যখন এমন মন্তব্য করেন তখন বুজতে হবে তিনি জেনে শুনে এবং বুঝে মন্তব্য করেছেন। তিনি তাঁর মন্তব্যে জানিয়েছেন তিনি হিরো আলম সম্পর্কে প্রথমে জেনেছেন এবং পরবর্তীতে তাঁর কর্মকান্ড সম্পর্কে খোজঁ খবর নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেছেন হিরো আলমের সকল কর্মকান্ডে। তিনি সম্প্রতি জাতীয় সংসদের উপ নির্বাচনে হিরো আলমের প্রার্থীতা নিয়েও কথা বলেছেন।
মামুনুর রশীদ বলেছেন রুচির দুর্ভিক্ষের কথা। কিন্ত রুচির দুর্ভিক্ষের জন্যতো হিরো আলম দায়ী নয়। রুচির দুর্ভিক্ষের মোক্ষম সময় এবং সুযোগ হয়তো তিনি কাজে লাগিয়েছেন। হিরো আলম শুধু রুচির দুর্ভিক্ষ নয় রাজনীতির দুর্ভিক্ষতাকেও কাজে লাগিয়েছেন। সেটা কাজে লাগিয়ে তিনি মহান জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। মামুনুর রশীদের কাছে দেশবাসীর জানতে চাওয়া এই রুচির দুর্ভিক্ষ কারা তৈরী করেছেন। যাদের দায়িত্ব ছিলো রুচিশিল দর্শক তৈরী করা তাঁরা কি সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। রুচিশিল দর্শক হঠাৎ করে কেন রুচির দুর্ভিক্ষে পতিত হলো। বিগত বিশ থেকে পচিশ বছরে যারা সাংস্কৃতি অঙ্গনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তাঁরা কি রুচিশিল দর্শক তৈরী করার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন নাকি নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা যতটা না সাংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে ভাবছেন তার চেয়ে বেশী ভাবছেন রাজনৈতিক দালালি নিয়ে। সাংস্কৃতি অঙ্গনকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দালালি করে বাড়ী গাড়ীর মালিক হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারের অনুদানের সিনেমা বানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশনে মানহীন নাটক এবং অনুষ্ঠান সমপ্রচার করে দর্শকদেরকে রুচিহীন করেছেন। চলতি শতাব্দির শুরুতে যখন মানহীন এবং অশ্লীল সিনেমার নির্মাণ শুরু হয় তখন আজকের সুশিল সাংস্কৃতিকর্মির অনেকে নির্মাণ এবং অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। তখন দর্শকদের রুচির দুর্ভিক্ষের কথা আলোচনায় আসেনি কারন তাঁরা সবাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। আজ আলোচনায় এসেছে হিরো আলমের জন্য। কারন হিরো আলম একজন অশিক্ষিত, অসুন্দর মানুষ এবং কথা বলেন গাঁয়ো ভাষায়। তিনি সমাজের প্রভাবশালী কোন সাংস্কৃতি কর্মী বা নেতা নয়। ঢাকাইয়া সিনেমার প্রভাবশালী পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল যখন বাংলা সিনেমায় অশ্লীল সংলাপের প্রচলন করেন তখন রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি। পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা অনন্ত জলিল যখন অবাস্তব দৃশ্য এবং হাস্যকর সংলাপের সমন্বয়ে সিনেমা তৈরী করতে থাকলেন তখন রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি। বেসরকারী টেলিভিশনে এবং ইউটিউবে অশ্লিল সংলাপের নাটকে যখন দেশ বরণ্য অভিনেতাদের দেখা যায় তখন রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি। ব্যাচেলার পয়েন্ট নামে অশ্লিল সংলাপ এবং অঙ্গভঙ্গির নাটক নিয়ে কেউ কোন মন্তব্য করেননি কারন মন্তব্য করলে পরবর্তীতে শিল্পী হিসেবে ডাক নাও পেতে পারেন এই ভয়ে। ওয়ের কন্টেনে যখন নগ্নতা থাকে তখন রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা যায় না, কারন ওয়েব কন্টেনে অভিনয় করেন দেশসেরা অভিনেতারা। নগ্নতা আর অশ্লিলতা খুজতে হয় শুধু হিরো আলমের মধ্যে। হিরো আলামের জন্য আজ রুচির দুর্ভিক্ষ শব্দ খুঁজতে হয়। রুচিশীল দর্শক তৈরী করার জন্য সুশিল সাংস্কৃতিকর্মী বা নেতারা অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন কিন্ত তাঁরা কি করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়েছেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকি। তিনি কি পেরেছেন রুচিশিল দর্শক তৈরী করতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির। তিনি রুচিশিল দর্শক সৃষ্টির কথা বলে নাটকের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। তখন কেউ কোন মন্তব্য করেননি। কারন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকি সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সরাসরি থিয়েটার কর্মী থেকে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ছিলেন হারুন অর রশিদ। তিনি কি তৈরী করতে পেরেছিলেন নতুন রুচিশিল দর্শক। আজ রুচির দুর্ভিক্ষের পিছনে তিনি কি দায়ী নয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সনামধন্য নাট্যদল আরণ্যকের সাধারণ সম্পাদক। রুচির দুর্ভিক্ষ তৈরীর পিছনে দায়ী আছেন অনেকেই। বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়শিল্পী তালিকাভুক্তকরণে যখন মাত্র দুটি বা তিনটি নাট্যদলের সদস্যরা অগ্রাধিকার পান তখন কি রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। সাংস্কৃতিঅঙ্গনের পরিচিত মুখ আসাদুজ্জামান নূর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কি পেরেছেন নতুন রুচিশিল দর্শক তৈরীতে ভূমিকা রাখতে। তাঁর সময়ে বাংলা নাটকের অশ্লিলতার যুগ শুরু হয়। বাংলা নাটক এবং সিনেমা যখন অশ্লিলতার যুগে প্রবেশ করে তখন হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেছিলেন রুচিশিল দর্শক। বাকের ভাই, কানকাটা রমজান সহ অসংখ্য চরিত্র তৈরী করে রুচিশিল দর্শক তৈরী করেছিলেন। তাঁর ধারাবাহিকতা বজায় না থাকায় আজ রুচির দুর্ভিক্ষে ভুগছে সবাই। রুচির দুর্ভিক্ষের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উত্থান হয়েছে হিরো আলমের । হিরো আলম সৃষ্টির পিছনে হিরো আলম নিজে দায়ি নয়, দায়ী তথাকথিত সুশিল সমাজ যারা সাংস্কৃতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। রুচির দুর্ভিক্ষ থেকে বের হতে হলে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে নাট্যজন মামুনুর রশিদ, লিয়াকত আলী লাকি, আসাদুজ্জামান নূর সহ নাট্যপ্রাণ নাট্যজনদের। তাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে খোলস থেকে। সততা দিয়ে পরিচালনা করতে হবে সাংস্কৃতি অঙ্গন। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে কিম্বা নিজ দলের নাট্যকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত না থেকে তাদেরকে ভাবতে সমগ্র সাংস্কৃতিঅঙ্গন। তাহলেই দূর হবে রুচির দুর্ভিক্ষ এবং হারিয়ে যাবে হিরো আলমরা।
মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী
ডেপুটি রেজিস্ট্রার
জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়
এবং
সাংস্কৃতিকর্মী
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
