প্রবাস জীবনের মোহ সিলেটে শিক্ষার অগ্রগতির অন্তরায়

নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি, আর ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ সিলেট শিক্ষার দিক দিয়ে আজও অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এখানে সেই মৌলিক অধিকারকে মেট্রিক কিংবা কলেজের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়। এই প্রতিচ্ছবিগুলো উঠে আসে শিক্ষা জরিপগুলোতে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর(ব্যানবেইস) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষার হার সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। বর্তমানে সিলেটে শিক্ষার হার ৫১.২ শতাংশ। হবেই না কেনও যেখানে জন্মের পর থেকে সন্তানের মগজে প্রবাস জীবনের মোহ তৈরি করে দেয়া হয়, উৎসাহিত করা হয় রেমিট্যান্সের মেশিন হতে। অভিবাবক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রবাসজীবন। এটি যেন যুগ যুগ ধরে চলে আসা এক প্রচলিত রীতির মতো হয়ে গেছে। যুগ পাল্টে যায়, তবে মনোভাব বদলায় না এখানকার জনসাধারণের।
যুক্তির খাতিরে অনেকেই সিলেটে দরিদ্রতার হার কম কিংবা দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের প্রভাব টেনে নিয়ে আসবে। এটাকে ভ্রম বলে আখ্যায়িত করলে মনে হয় ভুল হবে না। কেননা উন্নত জাতির মানদন্ডে শিক্ষাকে মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে, রেমিট্যান্সকে নয়। সুতরাং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যতই মানসম্পন্ন হুইলচেয়ার ব্যবহার করে এগিয়ে যান, আর যাই হোক উন্নত জাতি হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেয়া যায় না। এছাড়া পূর্বের তুলনায় সিলেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার হার অনেকটা বাড়লেও শিক্ষার মান কতটুকু বেড়েছে এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
ইদানীং সিলেটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে 'স্টুডেন্ট ভিসা' নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চাহিদা অনেক বেড়েছে, তবে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি উচ্চাশিক্ষা অর্জনের প্রবণতা। বেশিরভাগই কাজের কিংবা অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রত্যাশায় স্টুডেন্ট ভিসা ব্যবহার করে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রবাসে।
অন্যদিকে, ২০১১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো(বিবিএস) কর্তৃক সাক্ষরতার হার নির্নয় জরিপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হার ছিলো বরিশালে ৬১.৩ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন অবস্থানে সিলেটে ৪৫.৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে 'ডেইলি বাংলাদেশ' এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেট শিক্ষা ব্যুরোর মতে তিনটি কারনে সিলেটে সাক্ষরতার হার কম। এরমধ্যে প্রথম কারণ হলো বেশিরভাগ লোক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য বিদেশগামী হচ্ছে।
এবার সিলেটে নারীশিক্ষার প্রেক্ষাপটে আসা যাক। সামাজিক নিয়মানুযায়ী একজন মেয়ে শিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে সংসারজীবন বাধ্যতামূলক। সেই সংসারে একটি মেয়ে একজন শিক্ষিকা, সেবিকা, হিসাব রক্ষক এবং ডিশিসন মেকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এজন্যেই বেগম রোকেয়া বলেছেন, “মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হইতে পারে”।
এই আদর্শ হবার পিছনে শিক্ষা কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ঠিক বিপরীতে অবস্থান করছে সিলেট। এখনো নারীশিক্ষাকে অবহেলার চোখে দেখা হয়। উচ্চশিক্ষার কথা চিন্তা করা এক প্রকারের বিলাসিতা। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্যে যতটা মানসিক সমর্থন প্রয়োজন, এমন পরিবেশ সৃষ্টি হতে অনেক দেরি বললেই চলে।
তারপরও স্রোতের প্রতিকূলে গিয়ে যেসব শিক্ষার্থী এগিয়ে যাচ্ছেন, এক কথায় তারা প্রতিনিয়ত নিজের, পরিবারের এবং সমাজের সাথে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত। যেহেতু গনতান্ত্রিক নিয়মে 'মেজোরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড'। সুতরাং বেশিসংখ্যক মানুষকে পিছনে রেখে কমসংখ্যক যতই এগিয়ে যাক না কেনও দিনশেষে উচ্চতর ফলাফল আশা করা যায় না।
এজন্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের প্রচলিত নিয়মের গন্ডিতে আবদ্ধ না হয়ে পরিবর্তনের ধারায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার দায়িত্ব পালনে সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। নারীশিক্ষায় অবহেলা নয় বরং তাদের জন্যে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। মনে রাখা জরুরি, যে গাড়ির এক চাকা বড় আর অন্য চাকা ছোট হয়, সে গাড়ি অধিক দূরে অগ্রসর হতে পারে না, তা কেবল একই স্থানে ঘুরতে থাকবে। এছাড়া রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির দ্বিতীয় চাকা। সুতরাং প্রবাসীদের অবহেলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কিন্তু উন্নত জাতি গঠনে প্রবাস জীবনের মোহ যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সে বিষয়ে সবাইকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। পূর্বের অবস্থার অগ্রগতিকে ফোকাস না করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কতটা অগ্রগতি হয়েছে সেটাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
Link Copied