ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

নোয়াব কি অধিকার খর্ব করতে পারে?


সিরাজুল ইসলাম photo সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১০-৪-২০২৩ দুপুর ৪:২৬

আমি যখন কিশোর, তখন থেকেই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। রাজবাড়ী শহর থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক অনুসন্ধান’, ‘দৈনিক সহজ কথা’, ‘সাপ্তাহিক রাজবাড়ী কণ্ঠ’ (এখন দৈনিক) ও ‘দৈনিক গতকাল’ পত্রিকায় কাজ করেছি। সাংবাদিকার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে; তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র। এখনকার মতো ‘শিশু সাংবাদিক’ টার্মটা চালু থাকলে আমিও শিশু সাংবাদিক কিংবা কিশোর সাংবাদিক। আগে ‘শখ’ থাকলেও পরে পেশা হিসেবেই সাংবাদিকতাকে আকড়ে ধরি। পত্রিকায় কাজ করছি অন্তত ২৫ বছর। এই ২৫ বছরে সব পহেলা বৈশাখে পত্রিকা বন্ধ ছিল। পহেলা বৈশাখে আমি ঢাকায় থেকেছি খুবই কম। এমনকি আমার স্ত্রী-বাচ্চাকে রেখেও আমি পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপন করতে গ্রামে ছুটে গেছি। এর কারণ হলো এই উৎসব আমার কাছে ঈদের চেয়ে কোনোও অংশে কম নয়। কেননা, ঈদ শুধুমাত্র মুসলমানের। অন্য ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ সেখানে খুবই কম। কিন্তু পহেলা বৈশাখ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবারই। এ কারণে এটাকে আমার কাছে সব চেয়ে বড় উৎসব মনে হয়। কিন্তু এবার কি আমি বা আমরা (সংবাদকর্মীরা) পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারব? নাকি পত্রিকা বের করার মহা কর্মযজ্ঞে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে অন্য ১০টা দিনের মতোই? আমার মতো এই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন প্রায় সব সংবাদকর্মী। কেননা, সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন ‘নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)’ সম্প্রতি একটি নোটিশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, পহেলা বৈশাখ ছুটি থাকবে। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় ওই দিন পত্রিকা বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নোয়াব। তার মানে পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) পত্রিকা অফিস বন্ধ থাকছে না। এই নোটিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন অসংখ্য সংবাদকর্মী। তারা নোয়াবের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এবং তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সংক্ষুব্ধরা বলছেন, সংবাদকর্মীরা এমনিতেই খুব একটা ছুটি পান না। কিন্তু নোয়াব এবার তাদের এক দিনের ছুটি ‘খেয়ে ফেলার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো না। এটা অন্যায়। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক। আগামীতে ঈদের ছুটি বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন অনেকে। 
এখন কথা হলো ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় পত্রিকা বের করার প্রচলন আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষ করে জাতীয় দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি দিবসে সাধারণত অফিস ছুটি থাকে। কিন্তু কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে পত্রিকা বের করা হয়। এই দিনে যারা কাজ করেন; তাদের নিয়মানুসারে ওভারটাইম মজুরি দেওয়া হয়। কিন্তু এই মজুরিই কি সব? আমাদের কি কোনো ব্যক্তিগত জীবন নেই? টাকার জন্য একটা দিনও কি আমরা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য দিতে পারব না? পহেলা বৈশাখে পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তে অন্যরা ক্ষুব্ধ হলেও আমি হতবাক। কেননা, নোয়াবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফরিদপুরের কৃতি সন্তান জনাব একে (আবুল কালাম) আজাদ। আন্তর্জাতিক এই ব্যক্তিত্ব আমার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়, বটবৃক্ষ। তিনি তরুণ সমাজের আইকন। তিনি আমাকে সরাসরি তার পত্রিকা ‘সমকাল’-এ দুই দফা চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তিনি শুধু যে কেবল শিল্পপতি, তা নয়। তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ছাত্রজীবন থেকে নিয়োজিত; তার সেই লড়াইটা এখনো চলছে। তার চিন্তায় কেবল মানুষের কল্যাণ। তিনি দানবীরও। তিনি স্পষ্টবাদী; অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিচল। তাকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন- এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। এমন একজন মানুষ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নোয়াব পহেলা বৈশাখে পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এতেই আমি হতবাক। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- টেলিভিশন বা কিংবা অনলাইন চালু থাকলে পত্রিকার সমস্যা কোথায়? সমস্যা অবশ্যই আছে। টেলিভিশন কিংবা অনলাইন ২৪ ঘণ্টার সংবাদ মাধ্যম। আগে আসি অনলাইন পোর্টালের বিষয়ে। সেখানে নিয়মিত নিউজ আপলোড করা হয়। সেখানে সর্বশেষ নিউজ যেমন দ্রুত আপলোড করা হয়; আবার কখনো কখনো বহু পুরনো নিউজও থাকে। বাসায় বসে কিংবা চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ার সময়ও স্মার্টফোন দিয়ে প্রয়োজনে নিউজ আপলোড করা যায় হয়। এ জন্য বিশাল বাহিনী লাগে না। দায়িত্বশীল এক বা দুজন মানুষ কোনোভাবে চালিয়ে নিতে পারেন। দুই চার ঘণ্টা একটা নিউজ না দিলেও সমস্যা নেই। এবার আসি টেলিভিশন প্রসঙ্গে। সেখানে সাধারণত ৩টা শিফটে ২৪ ঘণ্টা কাজ হয়। সংবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সিনেমার চালানো হয়। প্রয়োজনে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি বা বিশেষ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার চালিয়েও সময় পার করা যায়। কিন্তু ছাপা পত্রিকার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। এই কাজটা হয় একটা নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা শেষ করতে হয়। সাংবাদিকদের পাশাপাশি সেখানে কম্পিউটার অপারেটর; প্রেস কর্মী ও পরিবহন ব্যবস্থা জড়িত। যেমন সাংবাদিকরা কাজ শেষ করার পর সেটা পাঠানো হয় সিটিপিতে (প্লেট করার জন্য)। এরপর প্লেট পাঠানো হয় প্রেসে। পত্রিকা ছাপানোর পর প্যাকেজিং বা বাঁধাই করা হয়। এরপর পরিবহনে পাঠানো হয় বিভিন্ন জেলায়। সেখান থেকে হকাররা পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের কাছে। একজন রিপোর্টারের প্রতিবেদন লেখা থেকে শুরু করে নানা ধাপে কাজ হয়ে পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছানো বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়িত। নোয়াবের এক সিদ্ধান্তের কারণে সবার ছুটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নোয়াব কি এতগুলো মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারে? সেই প্রশ্ন আমি নোয়াবের কাছেই বিনয়ের সাথে রাখতে চাই। আমি আশা করব আগামীতে জাতীয় দিবসগুলোতেও নোয়াব পত্রিকা বন্ধ রাখবে। এজন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, সম্পাদক পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার বাংলা নববর্ষের জন্য ভাতা চালু করেছে; যা নববর্ষ বোনাস নামে পরিচিত। কিন্তু দুয়েকটা হাউস বাদ দিলে অন্য হাউসের কর্মীরা সেটা পাচ্ছেন না। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সাংবাদিক নেতারা নববর্ষের বোনাস দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেটা কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এবার নোয়াব সব প্রতিষ্ঠানে নববর্ষের বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দেবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছি। লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া