পুরাণ ঢাকা কি অগ্নি ঝুঁকিতেই থাকবে?

পুরাণ ঢাকায় অনেক সময়ই অগ্নিকাণ্ডের কথা শুনতে পাওয়া যায়৷ প্রতিবছর ই ঘটে থাকে এরূপ অঘটন। সাম্প্রতিক সময়ের বঙ্গবাজার ট্রাজেডি সেই আশঙ্খা এবং বাস্তবতাকে খুব সামনে টেনে নিয়ে এসেছে। ঠিক গতকালকেই (১১ ই এপ্রিল, ২০২৩) আবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে চকবাজারে৷ এলাকার দূরত্ব হিসেবে জায়গা দুটো খুব কাছাকাছি বলা যায়। তবুও নেই পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা। ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন হলেই চলবে না পাশাপাশি ভবনের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাও শক্তিশালী হওয়া বাঞ্চনীয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূর্ঘটনা গুলো ঘটে থাকে পুরাণ ঢাকার বংশাল এলাকায়৷ যেখানে বাড়ি বা ভবন গুলোর নিচে রয়েছে গোডাউন। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে কেমিক্যাল বা দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি সবসময়ই থাকে। ২০২০ সালের দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বিন্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা সহ পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়ে ১৯২৪ টি কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা তৈরী করে। বাসাবাড়ির নিচতলায় গড়ে উঠা এসব গোডাউন পর্যাপ্ত পরিমাণ কেমিক্যালে ঠাঁসা। যেন ভয়াবহ একেকটি বোমা৷ এমনকি গোডাউন গুলো থাকে বাসার নিচতলায়৷ অন্যদিকে বিপদজনক পরিস্থিতিতে বের হবার জন্য অলটারনেটিভ ডোর, সময়োপযোগী অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা কিছুই নেই এসব বাসাবাড়িতে।
সাম্প্রতিক কালে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বরাবরের মতো এ ঘটনা অনেক কিছুকে সামনে নিয়ে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২০১৯ সালে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা তার কর্ণপাত করেননি। অসচেতনতার কারণেই পুড়ে গেছে হাজারো ব্যবসায়ীর সাজানো প্রতিষ্ঠান। ফায়ার সার্ভিস বলছে, বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন নির্বাপণের সময় বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহিৃত করেছেন তারা। এরমধ্যে ছয়টি কারণ অন্যতম।
অগ্নিকাণ্ডের পরপরই বিপুল উৎসুক জনতার ভিড় সেখানে লক্ষ্য করা যায়। যারা মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও ধারণ এবং আগুন দেখতে জমায়েত হন।আগুন নেভাতে বড় বাধা ছিল ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর। দূর থেকে পানি সংগ্রহ,মার্কেটের বিভিন্ন পাশ তালাবদ্ধ থাকা।বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের রাস্তায় বিপুল পরিমাণ মালামাল থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছিল না ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সরঞ্জাম।
রাস্তার পাশে মালামালে আগুন লাগার কারণে তা বরিশাল প্লাজায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তাঁদের বিভিন্ন সময়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে। দূর্ভাগ্যবশত মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ী সেসব বিষয় জেনে ও না জানার মত করে উদাসীনতার চরম অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পুরো মার্কেটসহ বরিশাল প্লাজায়ও ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে সকাল ছয়টা ১০ মিনিটে ২২টি ফায়ার স্টেশনের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। দীর্ঘসময় চেষ্টার পর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে সংস্থাটির ৬৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি কাজ করেন। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের আটজন আহত হয়েছেন, যারা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
বঙ্গবাজার, নিমতলী, চুড়িহাট্টার মতো বিপর্যয় এড়াতে চাইলে এখনই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে দাহ্য পদার্থ ও অলটারনেটিভ ওয়ে বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিজ্ঞানসন্মত ব্যবস্থা হাতে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। রাসায়নিক যেসব গোডাউন রয়েছে তা কোন অবস্থাতেই জনবহুল এলাকায় রাখা যাবে না। সৃষ্টি করতে হবে ক্ষুদ্রতর হলেও জনবিমুখ এলাকার বিশেষত শিল্প এলাকার।
বড় বড় দূর্ঘটনার পর আমরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করি। এরপর সব ভুলে যাই এবং যা হবার তাই হতে থাকে। ২০১০ সালে রাসায়নিক ব্যবহারের বা সংরক্ষণের নীতিমালা তৈরী হয়েছিল নিমতলী দূর্ঘটনার পর৷ যদিও অত:পর সেই নীতিমালা নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। সরকারের নীতিমালা ও প্রত্যক্ষ সরেজমিন ব্যাতীত কখনোই রাসায়নিক ব্যবহারের সুবিধা রাখা উচিত নয়৷ রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা -উপজেলা গুলো দিনে শিল্পের আঁচ পাচ্ছে এবং জনবহুল হয়ে যাচ্ছে বিশ্বায়নের প্রভাবে। সুতরাং, এখানেও যথাযথ ভাবে পরিকল্পনা ছাড়া স্থানান্তর করা উচিত হবে না৷ গত কয়েকদিন আগে যেমন কক্সবাজার কে অগ্নি ঝুঁকি পূর্ণ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, কেমিক্যাল সংরক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভবন মালিকদের অতিলোভী মানসিকতা পরিত্যাগ করাও উচিত৷ অন্তত বাসার নিচতলা গুলো যেন কখনোই গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেয়া না হয়৷ অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী বিনা লাইসেন্সে কেমিক্যালের ব্যবহার করছে তাদের কে শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷
সর্বোপরি, অগ্নি নিরাপত্তা নীতিমালাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের সাথে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণ জরুরি। যেন বিপদজনক পরিস্থিতি তাঁরা প্রশিক্ষিত জ্ঞানের আলোকে অন্তত নিজের জীবন বাঁচাতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ রক্ষা পাক আগুনের ভয়াবহত থেকে। পাশাপাশি পুরাণ ঢাকাকে অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রতিটি মামুষের এগিয়ে আসা জরুরি। শক্ত হাতে পদক্ষেপ নিতে হবে অবশ্যই প্রশাসনকে। সৃষ্টি করতে হবে যথেষ্ট সচেতনতা। পুরাণ ঢাকা রক্ষা পাক আগুনের লেলিহান শিখা হতে।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
