ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রমনা বটমূলে হামলার বিচার দ্রুত শেষ হোক


আব্দুর রহিম photo আব্দুর রহিম
প্রকাশিত: ১৫-৪-২০২৩ দুপুর ৩:৫

আজ শুভ নববর্ষ। বাঙালি জাতির সব চেয়ে আনন্দের দিন এটি। বাসায় ঐতিহ্যবাসী খাবারের আয়োজন থাকছে। তবে রোজা থাকায় সুসলমান বাঙালিরা এবার পান্তা ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন না। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকরা রেওয়াজ অনুসারে হয়তো এ আয়োজন করবেন। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ঘুরে বেড়াবে মানুষগুলো। আয়োজন কিছুটা ছোট হলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকছে। 
বাংলার সার্বজনীন এ উৎসবে বিভীষিকার কথাও মনে পড়ছে। বারবার মনে পড়ছে ২০০১ সালের কথা। আজকের দিনের কথা। ১৪ এপ্রিল ছায়ানটের বর্ষবরণে বোমা হামলা হয়েছিল। ওই মামলায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন বিপুল মানুষ। পুরো দেশে শোক ও ভয়ের আবহ তৈরি হয়। বলতে গেলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল ওই হামলার মধ্য দিয়ে। পরে তো সারা দেশে বিচারালয় এবং বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা হয়। অনেক মানুষ হতাহত হন। কিন্তু রমনা বটমূলে বোমা হামলার বিচার ২২ বছরেও শেষ হলো না। এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি আশাকরি দ্রুত এ মামলা বিচার শেষ হোক। কেননা, অপরাধের বিচার না হলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটা অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। আর রমনা হামলাটা তো অনেক আলোচিত ঘটনা। এটার নিঃসন্দেহে মাইলফলক হয়ে থাকবে। 
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য বলছে, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। ২০১৪ সালে বিচারিক আদালতের রায় হয়। রায়ের ৯ বছর পেরিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ধাপে মামলাটি এখনো হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। হত্যা মামলায় আট আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এবং আপিল হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠেছিল। কিন্তু শুনানি শেষ হয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এ মামলায় ৮৪ জনের মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ১৭ মে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। বোমা হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করে রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। হত্যা মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড হয় এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিচারিক আদালতের এ রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে যায়; যা ২০১৪ সালে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। হাইকোর্টে মামলা শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। পেপারবুক প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়ার পর ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল ২০১৬ সালে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে প্রথম শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শুরুও হয়। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ওঠে মামলাটি। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এ বেঞ্চ মামলাটি ‘আংশিক শ্রুত হিসেবে গণ্য হবে না’ উল্লেখ করে ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। মামলার নথিপত্র এখন হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় রয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ে মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অন্য রা হলেন আকবর হোসেন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। এর মধ্যে ২০০৪ সালে সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ২০১৭ সালে কার্যকর হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও আবদুল হাই পলাতক। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছয় ব্যক্তি হলেন শাহাদাত উল্লা ওরফে জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।
আসামিপক্ষে নিয়োজিত অন্যতম আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের মতে, হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠেছিল। তবে কোনো বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়নি। তিনটির মধ্যে সবশেষ ২০২১ সালে মামলাটি একটি দ্বৈত বেঞ্চে ছিল। বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে বেঞ্চটি পুনর্গঠিত হয়। তারপর আর শুনানি হয়নি। এখন প্রধান বিচারপতি নতুন কোনো বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে শুনানি শুরু হবে। বিচারাধীন কোনো বিষয়ে আমি কখনো লিখি না। কোনো পক্ষকে প্রভাবিত করাও আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই লেখায় কেউ কষ্ট পেলে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার প্রার্থনা- হত্যা মামলাটি দ্রুত হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হোক। দ্রুত শেষ হোক বিস্ফোরক আইনের মামলাটিও। আর যেন এ দেশে বোমা হামলার মতো ঘটনা না ঘটে। শান্তিতে সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক দেশ। নববর্ষে এটাই আমার, আমাদের প্রত্যাশা। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক  

 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া