অগ্নিকান্ড না অগ্নি সন্ত্রাস?

বঙ্গবাজারের ভয়াবহ দূর্ঘটনার পর থেকেই হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার খবর গুলো বেরিয়ে আসছে। অনেকক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্লেখ্য বিষয় হলো, আগুনের ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ক্ষয়ক্ষতিও যথেষ্ট হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দূর্ঘটনার ধরণ, ক্ষয়ক্ষতি,প্রাণহানি না হওয়া - অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই ফরম্যাটে সবকিছু হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে দেশের মানুষ যেমন আতঙ্কিত হচ্ছে এটা সত্যি তেমনী একটা শ্রেণীর হয়তো উপকারো হচ্ছে।
অগ্নিকান্ড না অগ্নি সন্ত্রাস তা নিশ্চিতে আগে উপকার ভোগী শ্রেণীকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন৷ চিন্তা করলে দেখা যাবে দু’ধরনের লোকের উপকার হতে পারে এ ধরনের কর্মকান্ডে। প্রথমত সিন্ডিকেট ধারী ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা বা এ জাতীয় ব্যক্তিবর্গ৷ যেমন বঙ্গবাজারের দোকানগুলোর অধিকাংশ কাপড় পুড়ে যাওয়ায় কাপড়ের দাম বেড়ে যাবে সে ক্ষেত্রে মুনাফাও আসবে অতিরিক্ত। পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতারা বিভিন্ন ভাবে এসব দূর্যোগকালীন সময়ে নানাভাবে অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন৷ এছাড়া বঙ্গবাজারকে যদি একচেটিয়া কাপড়ের সাবলীল দামের একমাত্র মার্কেট বলা হয় তাতেও ভুল হবে না আশাকরি। বঙ্গবাজারের এরূপ ব্যবসায়িক আচরণে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় নিশ্চয়ই প্রভাব পড়ে। এসব কারণকে নিশ্চয়ই হয়েছে বলে গণ্য করার সুযোগ নেই তবে একদম সহজভাবে দেখার মত নয়৷ হয়তো হতেও পারে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দীকে সবাই কোনঠাসা করতে চাবে এটাই তো স্বাভাবিক। মূল্যবোধহীন এই সমাজে সেটা যেকোনভাবেই হতে পারে। সঠিক তদন্ত এই বিষয়ে নিশ্চয়ই প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, বঙ্গবাজারে বড় অঙ্কের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। তাই সরকারের কাছে অনেকে সাহায্য ও চেয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের কল্যাণার্থে ৯ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যম তা পেয়ে গেছে। কোন মধ্যস্বত্ত্বভোগী না থাকায় ব্যবসায়ীরা সরাসরি টাকাটা পেয়েছে৷ নিশ্চয়ই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখানে উদারতা ও যথেষ্ট মমত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে দেশদ্রোহী অপশক্তির ষড়যন্ত্র। যেটা বর্তমান সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও সন্দেহ করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা, মানুষকে আতঙ্কিত করাই তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। কোনভাবেই কি নিয়মিত একই প্যাটার্নের অগ্নিকান্ডে এসব গোষ্ঠীর লোকজনকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ আছে? অন্তত সরকার বিরোধীতার প্রশ্নে এরূপ কর্মকান্ড তারা করতেই পারে। স্বাধীনতার পর হতে প্রায় দীর্ঘ পাঁচ দশকের ইতিহাসে এমনটাই দেখা গিয়েছে৷ যখনই বাংলাদেশ এগিয়েছে তখনই তারা চেপে ধরেছে এদেশের অগ্রযাত্রাকে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় দেশের প্রায় ২২ টি স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এ যাবতকালে বঙ্গবাজার দিয়ে যেমন শুরু হয়েছে তেমনী উত্তরার বিজিবি মার্কেট দিয়ে শেষ হয়েছে৷ এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটার আরেক নিত্যনৈমিত্তিক ঠিকানা নিউ মার্কেটেও (নিউ সুপার মার্কেট) অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ বঙ্গবাজারের মতো এখানেও আগুনের সূত্রপাত হয় ভোরবেলায়। বঙ্গবাজারের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিড়ি বা মশার কয়েলকে কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কারণটা বেশকয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পাওয়া যায় নি৷ লাভের হিসাব কষতে গেলে ব্যবসায়ী নেতা, মৌসুমী বা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, বৃহত্তর কোম্পানি গুলোর রূক্ষ্ণ চক্ষু এবং সবচেয়ে বড় লাভবান রাজনৈতিক ভাবে এদেশীয় অপশক্তির দোসররা। রাজনৈতিক লাভ লোকসানের মাপকাঠিতে তারা সন্দেহের তালিকায় যেমন উপরে তেমনী তাদের হাতে এসব অপকর্ম ঘটানোর যথেষ্ট কারণো রয়েছে।
ঈদের আগে তীব্র তাপদাহের মধ্যে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২২টি স্থানে আগুন লেগেছে। এর মধ্যে রয়েছে বড় তিনটি মার্কেট, একটি ওষুধ কারখানা । এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানহীন বৈদ্যুতিক উপকরণ ব্যবহারও অগ্নিকাণ্ডের একটি বড় কারণ।
ঢাকার উত্তরায় বিজিবি মার্কেট ও বায়তুল মোকাররমে স্বর্ণের মার্কেটে বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন লাগে। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। শর্ট সার্কিট থেকে বিজিবি মার্কেটের আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে বিজিবির টিনশেড মার্কেটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় তা ১১টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে।
কৃত্রিম সৃষ্ট দূর্ঘটনার পাশাপাশি স্বাভাবিক কারণেও আগুন লাগাটা একদম অযৌক্তিক নয়। আমাদের দেশে সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড খরতাপ থাকে। ফসলি জমিসহ খাল-বিল শুকিয়ে যায়। শুকনো গাছের পাতা থেকে শুরু করে সবকিছুই উত্তপ্ত ও দাহ্য অবস্থায় থাকে। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় শুষ্কতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। গ্রীষ্মে আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাপদাহের কারণে নদ-নদী, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। ঠিকমতো সেচকাজ চালাতে পারছে না। পানির অভাবে অনেক মৎস্য খামার শুকিয়ে গেছে। ফল, শাক-সবজিসহ ফসলি ক্ষেত শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সবকিছু শুষ্ক থাকায় আগুন লাগলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রাজধানীতে বিগত কয়েকটি আগুনের ঘটনার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণের মধ্যে প্রচ- তাপদাহে শুষ্ক পরিবেশকে দায়ী করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করছেন, যেসব মার্কেটে ইতোমধ্যে আগুন লেগেছে সেগুলোর বেশিরভাগই পোশাকের মার্কেট। এগুলো দাহ্য বস্তু। সামান্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গ থেকেই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া অনেক মার্কেট আছে বিশেষ করে বঙ্গবাজার টিন ও কাঠের তৈরি হওয়ায় এবং শুষ্ক থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতে টিন দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে আগুন লাগলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চলমান তাপদাহের কথা বিবেচনা করে এবং ঈদের শেষ সময়ের কেনাকাটার ভিড়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে সব ধরনের মার্কেটে আগুন থেকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বৈদ্যুতিক লাইন ঠিক রয়েছে কিনা, সর্টসার্কিট হওয়ার আশঙ্কা, এসিসহ অন্যান্য বৈদ্যুত্যিক সরঞ্জাম সঠিক আছে কিনা তা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে সবসময় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কোথাও আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে দ্রুত সাড়া দিয়ে সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে বড় দুর্ঘটনা না ঘটে।
অগ্নিকান্ড বা অগ্নিসন্ত্রাস যাই হোক না কেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া যেমন সময়ের দাবী তেমনী সঠিক তদন্ত হওয়াটাও জরুরি৷ ইদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মুহূর্তে মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করুক ভয়াবহ এই দূর্যোগ থেকে।
অনন্য প্রতীক রাউত
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
Link Copied