বিদেশ পাঠানোর কথা বলে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ঢাকার সাভারে দীর্ঘদিন যাবত একাধিক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে জামাই-শাশুড়ির একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাতে অভিযোগের বিষয়টি দৈনিক সকালের সময়কে নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া।
অভিযুক্তরা হলেন প্রতারক চক্রের প্রধান মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের শাহান আলীর ছেলে মো: ইলিয়াস হোসেন (৩৫), সিন্ডিকেটের সেকেন্ড-ইন কমান্ড ইলিয়াসের শাশুড়ি ও যশোর জেলার মৃত কফিল মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা পারভিন লাকি (৪৭) এবং সুইটি আক্তার (৩০)। তারা সবাই সাভার পৌরসভার শিমুলতলা এলাকার আজমল হোসেনের মালিকানাধীন আর আর পি গার্ডেনের ৮ তলার একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়াও এই সিন্ডিকেট চক্রে ইলিয়াসের স্ত্রী শোভাসহ ২০ জনের অধিক নারী ও পুরুষ সদস্য সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে অভিযোগ দায়ের করার পর অভিযুক্ত প্রতারক ইলিয়াস হোসেন কতৃক বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও চাপে রয়েছেন অভিযোগের বাদী সাভার পৌরসভার মজিদপুর মহল্লার আব্দুল মজিদ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া ও ভুক্তভোগী মোঃ মামুন মিয়াসহ তার স্ত্রী লাবনী বেগম।
থানায় করা অভিযোগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানার মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আমিন মিয়ার ছেলে মোঃ মামুন মিয়া স্ত্রী - সন্তানসহ পরিবার নিয়ে থাকেন সাভারে। পাশাপাশি সাভারের জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকান আছে তার। এই দোকানে বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র ফটোকপি করার সুবাদে যাতায়াত ছিল প্রতারক সিন্ডিকেটের প্রধান ইলিয়াস হোসেন, শাশুড়ি ফিরোজা পারভিন লাকি, ইলিয়াসের স্ত্রীর বড় বোন সুইটি আক্তার ও ইলিয়াসের স্ত্রী শোভার।
পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ভুক্তভোগী মামুন মিয়াকে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে ২০ লাখ টাকা চায় চক্রের প্রধান ইলিয়াস হোসেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২০২২ সালের পহেলা এপ্রিল সকালে স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন-কমান্ড ফিরোজা পারভীন লাকির পৌর এলাকার শাহিবাগ কমিশনার রোডে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ টাকা, একই স্থানে ১০ এপ্রিল দুপুরে ৪ লাখ টাকা, ১৩ এপ্রিল দুপুরে ৫ লাখ টাকা সহ সর্বমোট ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ১৩ এপ্রিল রাতে লাভনী বেগমের স্বামী মো: মামুন মিয়াকে টুরিস্ট ভিসা দিয়ে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে নিয়ে শুরু হয় তালবাহানা। আবারো দুবাই থেকে ইতালিতে যেতে এবং ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলে লাভনী বেগমকে টাকার জন্য চাপ দেন চক্রের প্রধান ইলিয়াস হোসেন। পরে বাধ্য হয়ে ২৫ এপ্রিল আরো ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ইলিয়াসের শাশুড়ি ফিরোজা পারভিন লাকির হাতে প্রদান
করেন মামুনের স্ত্রী লাবনী বেগম।
এভাবে দফায় দফায় ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরেও ইতালিতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি মামুন মিয়ার। টুরিস্ট ভিসায় দুবাইতে ৯০ দিন অতিক্রম করার পর তার সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ শুরু করেন ইলিয়াস হোসেন। পরে বাধ্য হয়ে ২০২২ সালের ২০ জুলাই নিজ খরচে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসেন মামুন মিয়া।
দেশে এসে চক্রের সেকেন্ড ইন-কমান্ড ফিরোজা পারভীন লাকিকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললে উল্টো মামলার হুমকি দেন ভুক্তভোগী পরিবারটিকে। ইলিয়াস হোসেন দেশে ফিরে চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল সকালে টাকা দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী মামুন মিয়ার স্ত্রী লাবনী বেগমকে ডেকে নেন সাভারের শিমুলতলা এলাকার ভাড়া বাসায়। সেখানে তার স্ত্রীকে মারধর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন চক্রের প্রধান ইলিয়াস হোসেন। পরে লাবনী বেগমকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে স্থানীয়রা।
এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গিয়ে আরো একাধিক ভুক্তভোগির খোঁজ পাওয়া গেছে। চক্রের প্রধান ইলিয়াস হোসেন ও বাংলাদেশের সেকেন্ড ইন কমান্ড ফিরোজা পারভীন সিন্ডিকেটের হাতে ভুক্তভোগী হওয়া আরও অর্ধশত পাসপোর্ট ও ভিসার ফর্ম দৈনিক সকালের সময়ের হাতে আসে। যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায় শুধু প্রতারণা নয় বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিদেশে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। বিদেশে নিয়ে নারীদের জোরপূর্বক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও করে রাখতেন ইলিয়াস হোসেন। এমন কয়েকজন নারীর সাথে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
বিদেশ পাঠানোর কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত ইলিয়াস হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার কথা সত্য নয়, মামুন মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। ৩ মাস তাকে দুবাইতে খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের কাছে কেউ কোন টাকা পাবে না। আর এই টাকা লেনদেন করেছেন আমার শাশুড়ি। আমার সাথে তাদের কোন লেনদেন হয়নি।
একাধিক ভুক্তভোগীর ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাভারের একজন ইউপি সদস্যের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, অন্য ভুক্তভোগীদের বিষয়গুলো এই ব্যাপারের সাথে যায় না, অভিযোগ যেটা নিয়ে হয়েছে সেটা নিয়েই কথা বলাই ভালো। পরে তথ্য প্রমান ও প্রতারণার বিষয়টি পরিষ্কার হলে এই প্রতিবেদকসহ সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালান চক্রের প্রধান ইলিয়াস হোসেন।
স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নারীদের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইলিয়াস হোসেন বলেন, এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিদেশে এগুলো কোন ম্যাটার করে না। চাইলে আপনিও যাইতে পারেন।
অন্যদিকে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে ফিরোজা পারভীন লাকির কাছে জানতে চাইলে জামাই এবং শাশুড়ির মধ্যে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়।
ইলিয়াস হোসেন ও ফিরোজা পারভীন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অনুসন্ধানে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে কমিশনের লোভ দেখিয়ে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত ১৪ বছরে দুই হাজারের ওপর পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা করে জমা নেয়।
বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে লোক পাঠায়। বিদেশে পৌঁছার পর অবস্থানরত ইলিয়াস হোসেনের এজেন্ট দিয়ে পুনরায় প্রতারণা করে তারা। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এক সময়ে ভিকটিমদের কোনো খাবার দাবার দেওয়া হয় না। এ সময়ে ফিরোজা পারভীন লাকির মাধ্যমে ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায়, কিছুদিন পরে কোম্পানি চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন।
এর মধ্যে বিদেশে অবস্থানরতরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী মামুন মিয়ার মত অনেকে নিজেদের চেষ্টায় টিকেট জোগাড় করে দেশে আসার চেষ্টা করেন। এরপর ভিকটিম দেশে ফিরে এলে ইলিয়াস ও তার শাশুড়ি ফিরোজা পারভীন লাকি অভিভাবক এবং ভিকটিমদের উল্টো দোষারোপ করে। তারা দাবি করে, ভিকটিম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে কাজের সুযোগ পেত। এভাবে দীর্ঘদিন যাবত করোনা মহামারির আগে এবং পরে মালয়েশিয়া, দুবাই এবং সৌদি আরব, কম্বোডিয়া, ইতালি, রোমানিয়া, ব্রুনাইসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভিকটিমদের পাঠিয়ে প্রতারিত করে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে ইলিয়াস হোসেন ও তার শাশুড়ি ফিরোজা পারভীন চক্রের সদস্যরা। প্রতারণার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / এমএসএম

সাতকানিয়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তার কিরিচের কোপে নিহত এক দিনমজুর

ফরিদপুর চিনিকলে কর্মকর্তাদের চারদিন ব্যাপী চাকুরিকালীন ইনহাউজ প্রশিক্ষণ শুরু

নড়াইলের লোহাগড়ায় শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ভারত থেকে আসা মরিচের ট্রাকে অস্ত্র-গুলি, ২ ভারতীয় আটক

পাবনায় দু'পক্ষের সংঘর্ষে টেটা বিদ্ধ হয়ে যুবকের মৃত্যু

জুড়ীতে টিকটকে প্রেম, দেখা করতে গেলে মেয়ের স্বজনেরা দিলেন বাল্য বিয়ে: থানায় মামলা

বেনাপোলে এয়ার পিস্তল ও গুলি সহ আটক ২

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরি করে জাহিদুল পেয়েছে আলাদিনের চেরাগ

সুবর্ণচরে স্বেচ্ছাসেবকদল চরক্লার্ক ইউনিয়ন কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শ্রীনগরে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রচনা-ক্বেরাত প্রতিযোগিতা

ত্রিশালে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধের ঘুষ বানিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নাঙ্গলকোটে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
