ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

অন্তঃসত্ত্বা ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী সন্তান কোলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে স্বত্বত্যাগ করে


শামীম আহমদ photo শামীম আহমদ
প্রকাশিত: ৩০-৫-২০২৩ দুপুর ২:৪৮

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ হাসিনা পরিবারের রয়েছে আত্মত্যাগের একটি মহান ইতিহাস। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণের মুখ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু পরিবারকে উদ্ধার করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী বীর সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অশোক তারা যেভাবে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেগম মুজিব ও শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করেছিলেন সেই ঘটনা থেকে বিস্তারিত জানাজায়। বঙ্গবন্ধু ও অশোক তারা গ্রন্থ এবং ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়- উদ্ধারের আগে শেষ দুই দিন বেগম মুজিব ও তাঁর পরিবারকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এমনকি বাড়িতে নড়াচড়া পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি।

১৭ ডিসেম্বর সকালে বাড়িটির সামনে কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই খবর পেয়ে ভারতীয় বাহিনীর মেজর অশোক তারার নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীর একটি দল ১৮ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় হানাদার বাহিনীর দলটি গুলি করতে উদ্যত হয় এবং হুমকি দেয় যে, তাদের আক্রমণ করা হলে তারা বেগম মুজিবসহ অন্যদের হত্যা করবে।

তখনকার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে মেজর তারা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের পথ বেছে নেন। নিরস্ত্র হয়ে ১৮ নম্বর সড়কের বাড়ি ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর মেজর তারা অত্যন্ত কুশলী ভাষায় দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তাদের বুঝান যে, নিজেদের মঙ্গলের জন্যই তাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত। সেদিন বাড়িটিতে থাকা হানাদার সেনারা মারাত্মক খুনের মেজাজে ছিল। বাড়িটির কিছু দূরেই গুলিবিদ্ধ একটি গাড়ি, তার ভেতরে একজন সাংবাদিকের লাশ দেখতে পান মেজর তারা। লাশটি থেকে তখনও রক্ত ঝরছিল। ওই সাংবাদিক বাড়িটির দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে হানাদার বাহিনী তাঁকে গুলি করে। আর আশপাশের লোকজন মেজর তারাকে জানিয়েছিলেন, আরও সকালের দিকে স্থানীয় একটি পরিবারকেও গুলি করে জখম করে হানাদার সৈন্যরা।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মেজর তারার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়- আমি তখন দেখলাম, সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার চালানোই একমাত্র রাস্তা। শেখ মুজিবের পরিবারকে বাঁচাতে হলে সেই মুহূর্তে আমার সামনে আর কোনো পথও ছিল না। আমি হুমকির জবাবে জানালাম, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা গতকালই আত্মসমর্পণ করেছে, কাজেই তারাও অস্ত্র ফেলে দিলেই ভালো করবে। মনে হলো ওই সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণের কোনো খবর পৌঁছায়নি। একেবারে সামনে আসতেই গেটে যে সেন্ট্রি ছিল, সে তার বন্দুকের সামনে লাগানো ধারালো বেয়নেটটা আমার শরীরে ঠেকিয়ে ধরল। বললাম, আমি ইন্ডিয়ার আর্মির একজন অফিসার। একেবারে নিরস্ত্র অবস্থায় আমি একলা তোমাদের এখানে এসেছি। তারপরও কি তোমরা বুঝতে পারছ না, সব খেলা চুকে গেছে? তখনই আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটা হেলিকপ্টার। আমি সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে বললাম- তোমরা কি ওই হেলিকপ্টার দেখতে পাচ্ছ? বুঝতে পারছ কি ঢাকার নিয়ন্ত্রণ এখন কাদের হাতে?

এরপরও পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে গড়িমসি করতে থাকে। কিন্তু মেজর তারা বুঝতে পারেন যে, মনস্তাত্ত্বিক সমরে শত্রুপক্ষকে তিনি ধীরে ধীরে ঘায়েল করতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি সতর্কতার সঙ্গে একের পর এককথার অস্ত্র চালিয়ে যেতে থাকেন। সবশেষে চূড়ান্ত শব্দাস্ত্রটি প্রয়োগ করে বলেন- 'এখনই সারেন্ডার করলে আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তোমাদের কথা দিচ্ছি, অক্ষত শরীরে তোমরা নিজেদের হেডকোয়ার্টারে ফিরে যেতে পারবে। আর না করলে তোমাদের লাশের যে কী হবে, তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই।' পরে পাকিস্তানি সৈন্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। প্রাণে রক্ষা পান বেগম মুজিব ও তাঁর স্বজনরা।

ওই বাড়িতে শিশুপুত্র কোলে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। তাঁরা সবাই মেজর তারার অত্যন্ত কুশলী এই কথোপকথন শুনতে পান। উদ্ধারের পর তাঁরা মেজরকে কৃতজ্ঞতা জানান।

পাকিস্তানিরা ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ করবে- এই আশঙ্কায় বঙ্গবন্ধু মার্চের প্রথমদিকেই ড. ওয়াজেদ মিয়াকে আলাদা একটি বাসা ভাড়া নেওয়ার পরামর্শ দেন। ধানমন্ডি ও হাতিরপুল এলাকায় একাধিক বাড়ি দেখার পর ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ১৫ নম্বর (বর্তমান ৮/এ) রোডের ১৭৭ নম্বর বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন। ২৫ মার্চ রাতে ড. ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই বাড়িতে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পর বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা শেখ জামাল ও শেখ রাসেলকে নিয়ে তাঁদের পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ২৭ মার্চ বঙ্গমাতা, ড. ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল ধানমন্ডি এলাকা ছেড়ে খিলগাঁও এলাকার একটি ভাড়া করা বাড়িতে ওঠেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর মগবাজারে যান; এখানে প্রথমে একটি বাড়ির নিচতলায় এবং পরে অন্য একটি বাড়ির দোতলায় আত্মগোপনে ছিলেন। মগবাজার থেকে ১২ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁদের আটক করে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর (বর্তমান ৯/এ) রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে বন্দি করে রাখে।

ওই বাড়িতে কোনো আসবাব ও বিদ্যুৎ ছিল না। ৯ মাস তাঁদের ফ্লোরে থাকতে হয়। এই বাড়িতে বন্দিকালে ২৭ জুলাই ১৯৭১ সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। এখান থেকে ৫ আগস্ট পালিয়ে গিয়ে শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা ৪ জানুয়ারি (১৯৭২) শোনার পর বঙ্গমাতা ধানমন্ডির ১৮ নম্বর (বর্তমান ৯/এ) রোডের ২৩ নম্বর বাড়িটি ভাড়া নেন। ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতে ওঠেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত ৩২ নম্বরের বাড়ি মেরামতের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে নিজের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।

এমএসএম / এমএসএম

ডিজিটাল যুগে নারী: প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন

নিয়ন্ত্রণহীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি; চরম উৎকন্ঠায় জনজীবন

বিটকয়েন বা ভার্চুয়াল কারেন্সি; আগামীর মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য মঙ্গল নাকি অমঙ্গল!

মহা শিবরাত্রির ইতিহাস ও জগতের মঙ্গল কামনা

জিনিস যেটা ভালো , দাম তার একটু বেশি

মব জাস্টিসের প্রভাবে বর্তমান বাংলাদেশ

সুস্থ জাতি গঠনে দরকার নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা

রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও একুশে বইমেলা

বিশ্ব জলাভূমি দিবস: টিকে থাকার জন্য জলাভূমি সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি

দেবী সরস্বতী: বিদ্যা, জ্ঞান, ও শুভ্রতার বিশুদ্ধ প্রতীক

স্বাস্থ্যসেবায় বায়োকেমিস্টদের অবদান: এক অপরিহার্য দৃষ্টিভঙ্গি

আতঙ্ক আর হতাশার মধ্যেই ট্রাম্পের যাত্রা

কন কনে শীতে অযত্নে -অবহেলায় কাটছে পথশিশুদের জীবন