সাংবাদিক নাদিম হত্যার বিচার হবে কি?

সাংবাদিক কারো বন্ধু নয়- এমন একটা কথার প্রচলন আছে। সত্যিই কি সাংবাদিকরা কারো বন্ধু নয়? আমি বলি সাংবাদিকরা সৎ, নীতিবান ও আদর্শ মানুষের বন্ধু। আর দুর্নীতিবাজ, অসৎ ও দুর্বৃত্তদের শত্রু। আপনি যদি সৎ মানুষ হন; তাহলে সাংবাদিকরা আপনার বন্ধু। আপনার ভালো কাজের খবর সাংবাদিকরা প্রকাশ-প্রচার করে থাকে। আর যদি আপনি হন লুটেরা, দুর্বৃত্ত, আত্মসাৎকারী; তাহলে অবশ্যই সাংবাদিকরা আপনার শত্রু। যেমন জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম স্থানীয় চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর শত্রু। হ্যাঁ, শত্রু। তবে তাদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল না। তাহলে? বিরোধ ছিল অন্য জায়গায়। চেয়ারম্যান বাবু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তিনি দুর্নীতিবাজ। তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে গিয়ে শত্রু হয়েছেন নাদিম। আর এ কারণে তার সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারাতে হলো নাদিমকে। তিনি যদি চেয়ারম্যান বাবুর সাথে আপোস করে চলতেন; হয়তো ভালো থাকতে পারতেন। কিছু অনৈতিক আর্থিক সুবিধাও তিনি পেতে পারতেন। সেটা নাদিম চাননি। অর্থাৎ বাবুর অপকর্মের দোসর হননি তিনি। এ কারণেই তিনি বাবুর শত্রুতে পরিণত হন।
নাদিম হত্যার বিচার দাবিতে সারা দেশের সাংবাদিকরা রাস্তায় নেমেছেন। আমিও তাদের সঙ্গে আছি। আমিও রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছি। বিচার চাইছি। বিচার চাচ্ছেন এ দেশের সাধারণ মানুষও। চাইলে কি বিচার পাব- সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসছে। এবার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর বিশেক আগে আমি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার উপর হামলা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। পরে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। আমি কিন্তু ওই ঘটনার বিচার পাইনি। আমার মতো এমন অভিজ্ঞতা প্রায় সব সাংবাদিকের রয়েছে বলে আমি মনে করি। নিউজ করায় প্রাণনাশের হুমকি পাননি- এমন সাংবাদিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হামলা-মামলা উপেক্ষা করেই আমরা মহান পেশা সাংবাদিকতাকে আঁকড়ে ধরে আছি, থাকব। এবার আসি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে। সাংবাদিকতার ইতিহাসে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন রাজধানীর কাঁঠালবাগানে ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ১১ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদঘাটন করতে পারেনি। এখনো এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সাংবাদিকরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। তবে আন্দোলনের তীব্রতা কমে এসেছে। চার্জশিট দিতে ৯৮ বার সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে হাইকোর্টও বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। ‘জাস্টিস ডিলে, জাস্টিস ডিনাইড’ ( বিচারে বিলম্ব করা মানে বিচার না করা) পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। কেননা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্লু উদ্ধার করতে না পারলে চার্জশিট দেবে না। আর চার্জশিট না দিলে বিচার হবে না। আমরা কেবল বিচার চেয়েই যাব। এর চেয়ে বেশি কিছু তো আমাদের করার নেই। এরই মধ্যে মেয়ে ও জামাই হত্যার বিচার না দেখেই মারা গেছেন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জা। সাগর সারওয়ারের মায়ের কথা আমি জানি না। তবে বছর দয়েক আগে তার অসুস্থতার খবর পত্রিকায় দেখেছিলাম। সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে তাকেও পৃথিবীর মায়া ছাড়তে হতে পারে। এবার আসি তাদের একমাত্র সন্তান মেঘের কথা। সে এখন টগবগে যুবক। তবে তার মাথায় বটবৃক্ষ বাবা-মার ছায়া নেই। সে বাবা-মা হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবে কি-না, সন্দেহ রয়েছে।
শুধু সাগর-রুনি নয়; সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়েছে- এমন ঘটনা খুবই কম। আবার আসি নাদিম হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে। এ হত্যাকাণ্ডের কিন্তু ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। একজন সাক্ষীও আছেন। এ ঘটনায় বাবু চেয়ারম্যানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে বাবুসহ ৭-৮ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকি আসামিরাও গ্রেফতার হবে বলে আশাকরছি। বাবু হত্যাকাণ্ডের পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জড়িত থাকতে পারে। কেননা, খবর প্রকাশের জেরে এর কয়েক মাস আগে তার উপর হামলা করা হয়েছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা তাকে মারধর করেছিলেন। বাবু চেয়ারম্যানও আওয়ামী লীগের নেতা। হামলাকারী তার ছেলে রিফাত হোসেন ছাত্রলীগের নেতা। যদিও নাদিমের মৃত্যুর পর তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একটা বিষয় কিন্তু স্পষ্ট, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ক্ষমতাসীনরা প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুতরাং নাদিম হত্যার বিচার নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
শাফিন / শাফিন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
