পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, মানবতা পিছিয়ে পড়ছে

পৃথিবীর আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে আমাদের সামনে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের শেষ পর্যন্ত কোন দিগন্তে নিয়ে যাবে সেটা ধারণার অতীত। এক পা দু পা করে আমরা সভ্যতার একেকটি স্তর পার হয়ে যাচ্ছি। প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। আবার আমাদের কাছ থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধে কেড়ে নিয়েছে। এ কথা আমি বলতে চাই না যে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের সমাজের জন্য অপ্রয়োজনীয়। সভ্যতার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির অবদান অপূরণীয়। কিন্তু আমরা কি কখনো অনুধাবন করে দেখেছি যে প্রযুক্তির অকল্যাণকর দিকগুলো আমাদের অবস্থান কোথায় নামিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য এর জন্য আবিষ্কার ও আবিষ্কারক কোনোটিই অপরাধী নয়, অপরাধী হচ্ছি আমরা ব্যবহারকারীরা। মানুষের চেষ্টা সব সময় এগিয়ে যাওয়া সামনের দিকে। সেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় পেছনে ফেলে আসতে হয় পূর্ব-পুরুষদের জীবন- যাত্রার সাথে জড়িয়ে থাকা অনেক কিছু। অনেক কৌশলগত হাতিয়ার-যেগুলো এক সময় আমাদের জাতীয় অগ্রগতিকে তরান্বিত করেছে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ হয়ে পড়েছে অধিক থেকে অধিকতর যন্ত্রনির্ভর। তার কারণ, প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে হবে আমাকেও। কম সময়ে সহজ উপায়ে বেশী ও টেকসই ফল লাভ করা এখন আমাদের লক্ষ্য। সেজন্য যান্ত্রিকতার উপর নির্ভর না করে উপায় নেই আমাদের।কিন্ত আমাদের মনে রাখতেই হবে, আমরা মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, অন্যান্য প্রাণী বা সব কিছু থেকে আমাদের আলাদা করা হয় বিচার বুদ্ধির জন্য, বিবেকের জন্য। কিন্তু আমরা কি আমাদের বিচার-বুদ্ধি, বিবেককে কাজে লাগাচ্ছি বা লাগাই? আমাদের প্রতিদিন কী পরিমাণ নৈতিক স্খলন, বিবেকের স্খলন হচ্ছে তা আমরা ভেবে দেখি না। আমাদের কাছে থাকা মানবীয় গুণাবলি বিসর্জন দিচ্ছি প্রতিনিয়ত, হারিয়ে যাচ্ছে নীতি- নৈতিকতা, লোপ পাচ্ছে আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা।
মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে,প্রেম-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। মানুষের হৃদয়, মনের পরিপুষ্টি সাধনের পরিবর্তে মাত্রাধিক আরাম ও যান্ত্রিক উপকরণ বাহুল্য তাদের যন্ত্র মানবে পরিণত করছে। জীবনের গভীরত্ব উপলব্ধির অবসর আজ মানুষের নেই। সিনেমা, টেলিভিশন, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ প্রভৃতি মানুষের অবসর সময়কে গ্রাস করেছে। মানুষ এখন অধিকাংশ সময় কাটায় যন্ত্রের সান্নিধ্যে। ফলে তার হৃদয়, মন, আবেগ, অনুভূতি সবই যন্ত্রের সুরে বাঁধা। জীবনকে জানার, জীবনের উদ্দেশ্য বোঝার সময় মেলেনা আজ কারো। মিললেও সে সময়ে একটু কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ জায়গা দখল করেছে। মানবসভ্যতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত যান্ত্রিক কলাকৌশল। সময় বাঁচানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সংস্পর্শে মানুষও হয়ে উঠছে যান্ত্রিক। নিজের জন্য সময় বের করা আজ আর হয়ে ওঠে না একজন করপোরেট চাকরিজীবীর। কিংবা স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাটাও আজ স্মার্টফোন পেলে বাইরে খেলতে যাওয়ার বা ঘুরতে যাওয়ার বায়না করেনা। প্রযুক্তির সংস্পর্শে মানুষ বৈশ্বিক হয়ে উঠলেও ঘরকুনো স্বভাবও তৈরি হচ্ছে শিশুদের মাঝে। তরুণ প্রজন্ম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। সামাজিক কল্যাণমূলক কাজকর্মে তাদের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্য সাইটগুলোতে যে পরিমাণ সচেতনতার বার্তা এই প্রজন্ম পোস্ট করছে প্রতিনিয়ত, তার অর্ধাংশও যদি তারা বাস্তবিক সমাজে করে দেখাতো তাহলে আজকের পৃথিবী কবেই সকল নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠতে পারত। যান্ত্রিকতা যেন শুধু যন্ত্রের মাঝেই আবদ্ধ থাকে তা যেন মানুষকে গ্রাস না করে সেদিকে আজ মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে। মানুষকে হতে হবে মানবিক দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন, তার মানবিক চিন্তাভাবনাই পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলবে। যন্ত্র নয়, মানুষ যেন নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ভালো-মন্দের বিচারক্ষমতা দ্বারা যে বিবেক নির্ধারিত হয় সে ব্যাপারে সকলেই একই বিন্দুতে থাকবেন নিঃসন্দেহে তা বলা সম্ভব, ভিন্ন বিন্দুতে থাকবেন ভালো-মন্দ আলাদা করা নিয়ে অর্থাৎ কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ সেটা নির্ধারণে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে। এ ভিন্নতা হতে পারে ব্যক্তি, সমাজ, এলাকা, সময়, ঘটনা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। বিবেকের কাজ হলো কোনো কিছুর ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, সক্ষমতা-অক্ষমতা, নীতির কাছে সঁপে দিয়ে বর্তমানকে ভিত্তি ধরে ভবিষ্যৎ ভাবনাকে বিচার করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানবসত্তাকে সহযোগিতা করা, কিন্তু আসল সিদ্ধান্তে আসতে হবে সত্তা নিজেকেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম চালিকাশক্তি, বলা যায় বর্তমান সময়ের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন ও মানবিক সমৃদ্ধি। তথ্যের অবাধ প্রবাহে বিশ্বাসী গণমাধ্যম-বান্ধব ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা সর্বদাই তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়ন এক স্বর্ণালি অধ্যায় হিসেবে লিখিত থাকবে। আজ গ্রামের একজন সাধারণ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন থাকার অর্থই হচ্ছে তিনি শুধু নিজ দেশে নয়, সারা পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত আছেন। শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা যে তিনি একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণের প্রাক্কালেই যোগাযোগের এই অতি শক্তিশালী যন্ত্রটি আমজনতার হাতে তুলে দিয়ে গণমানুষকে তথ্যায়িত রাখার সন্ধান দিয়েছেন। প্রযুক্তির কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ গবেষক বলেন,প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারই একজন মানুষের স্মৃতিশক্তির বিকাশ ও পরিচর্যার বিষয়টি নির্ধারণ করে। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির জানা উচিত, তাঁকে নিজের স্মৃতিতে কোন বিষয়টি রাখতে হবে আর কোনটি বর্জন করতে হবে।
প্রযুক্তি মানুষের জানার পরিধিকে যে বিশালতা দিয়েছে, তার পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। আদিকালে মানুষ টিকে থাকার জন্য পরাজিত করেছে অনেক হিংস্র প্রাণিকুলকে। কোনো ধারালো অঙ্গ না থাকা সত্ত্বেও কেবল বুদ্ধির জোরে অনেক ধারালো অঙ্গের প্রাণীকে পরাভূত করেছে মানুষ। আজ মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মতো কোনো প্রজাতি নেই এই পৃথিবীতে। একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেছে মানুষ। আর প্রতিযোগিতার অভাবে নিজ প্রজাতির সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এই গ্রহের বাসিন্দারা। মানুষের খুব সহজাত প্রবণতাই হচ্ছে কোনো দ্বন্দ্বে জড়ানো। শান্ত থাকাটা মনুষ্য প্রজাতির রক্তে নেই। আর সেই ধারাই আমরা পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে দেখতে পাচ্ছি। এই পৃথিবী দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী, মানুষের কল্যাণে নয় বরং শক্তিমত্তার প্রয়োগে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করে আধিপত্য বিরাজের নিমিত্তেই এই যুদ্ধ। পৃথিবীর মানুষ দেখেছে বিনাশ কেমন, হত্যালীলার বোধ কেমন, আর কতটা হিংস্র হতে পারে মানুষের প্রতি মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী কিছুটা শান্ত ছিল। সর্বোপরি মানুষের সমাজকাঠামোতে এসেছিল বিরাট পরিবর্তন। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ নানান আঞ্চলিক সংগঠন অর্থের প্রসার ঘটিয়ে কায়েম করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ, জীবনযাত্রার মানের ওপর পুরো বিশ্বকে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে দাঁড় করায় সংস্থাগুলো! পৃথিবী কোনো দিকে যাবে, পুঁজিবাদ নাকি সমাজতন্ত্র এ নিয়ে বিরোধ পৃথিবীকে করেছে বিভক্ত, জাতিতে জাতিতে আবার যেন এক ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ! পৃথিবী কার অধীনে থাকবে, আমেরিকা নাকি রাশিয়া, এই প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না অনেক দিন। নিজেদের সব শক্তিমত্তা দিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক দিক থেকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার যে প্রচেষ্টা পৃথিবীকে, সেটাকে বিশ্ব শীতল যুদ্ধ হিসেবেই জানি আমরা, যুদ্ধ নয় তবু যেন এক ভয়াবহ আগ্রাসন একে অপরের ওপর।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখতে পাই জাতিগত সংঘাত। এক ধর্ম অন্য ধর্মের বিকাশকে কীভাবে ব্যাহত করবে, সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত। যত আধুনিক আমরা হচ্ছি, ততই সংঘাত বাড়ছে, মানুষ মারার নতুন নতুন যন্ত্রকৌশল তৈরি হচ্ছে, এতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বাহবাও পাচ্ছে! শক্তিমত্তার প্রদর্শন হয়ে উঠেছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। জাতিগত সংঘাত কোনো জাতিকেই নিঃশেষ করে দিচ্ছে। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের সমস্যাকে কেন্দ্র করে চালানো হয় অভিযান, সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। একেক শক্তির প্রভাবে একেকজন দমিত হচ্ছেন, এর রেশ ধরে অন্য কোনো জায়গায় আরও নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতাবাদ আধুনিক পৃথিবীর কোনো ব্যবস্থা হতে পারে না। এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগতেই পারে, আগামী দিনের পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে। আসলেই আমাদের ভাবিয়ে তুলে আগামীর পৃথিবী কি শুধু শক্তিমত্তার জয়গানে ভরে উঠবে, নাকি সব মানুষ সমান সুযোগে বাঁচবে।
এমএসএম / এমএসএম

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ : গল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠুক সচেতনতার বাঁধ

রাজনীতি আজ নিলামের হাট: কুষ্টিয়া-৪ এ হাইব্রিড দাপটের নির্মম প্রতিচ্ছবি

জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার ভোট দিবে প্রবাসীরা, আনন্দে ভাসছে পরবাসে বাঙালীরা

বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ও বাংলাদেশে তার প্রভাব

বাংলাদেশে ওয়াশিং প্ল্যান্টের বর্জ্য দ্বারা মিঠাপানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ

দলীয় পরিচয়ে পদোন্নতি ও বদলি: দুর্নীতির ভয়াল থাবায় বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সমাধান: FBCCI-এর বিদ্যমান সেবার উৎকর্ষ সাধন

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা: অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য
