ঢাকা-১৭’র উপনির্বাচন কী বার্তা দিয়ে গেল?

বিএনপি সব সময়ই বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে রাজনীতি করতে চায়। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই তারা বিদেশি দূতাবাসে চিঠি পাঠায়। বিদেশে তাদের লবিস্টও রয়েছে। তাদের মূল কাজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই; মানবাধিকার নেই; মানুষের নিরাপত্তা নেই- অপপ্রচার করা। ‘গুম-খুনের’ অভিযোগও করছেন তারা। এ বিষয়টি এখন গোপন নয়। মার্কিন ভিসা নীতিও তাদের কর্মের ফল বলেই মনে করা হয়। কিন্তু ভিসা নীতির ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিক দলের নেতারা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হয়। এ কারণে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। এরপর বিএনপি নেতারা ডুগডুগি বাজাতে শুরু করেন। ভাবলেন- এই বুঝি সরকারের পতন ঘটল। তারা মুচকি মুচকি হেসে; দাঁত কেলিয়ে বললেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মের কারণেই এই ভিসা নীতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাল আওয়ামী লীগ। তারা দায়ী করল বিএনপিকে। তবে সরকার অনেকটা সতর্ক হয়ে যায়। সতর্ক হয়ে যায় নির্বাচন কমিশনও। ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে। সিলেট, বরিশাল ও খুলনায়ও অবাধ, নিরেপক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। যদিও বরিশালে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়। এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেছেন সবাই। আমরা আমজনতা ধরেই নিয়েছিলাম পরবর্তী সব নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত। কিন্তু ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন কয়েকটি প্রশ্ন রেখে গেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের অভিযোগ, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে; কিংবা ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার ওপর নৌকার ব্যাজধারী কতিপয় যুবক হামলা করেছে। পুলিশের হাত থেকে তাকে কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিয়মের অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও তিনি একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাত নৌকা প্রতীকে মোট ১২৪টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়েছেন। ফলাফলের দিকে হিরো আলম দ্বিতীয় হয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ ভোট। এবার আসা যাক হিরো আলমের ভোটের হিসেবে। ঢাকা-১৭ আসন অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী ও ভাটারা নিয়ে। সেখানে নিম্ন শ্রেণির কিছু লোক বাস করলেও তারা ভোটার নন। সেখানে ভোটারও অভিজাত লোকজন। হিরো আলমের কোনো স্বজন সেখানে ভোটার কি-না, আমার জানা নেই। আর আত্মীয়-স্বজন হলেও ৫ হাজার ভোটার তো না? তাহলে হিরো আলম ৫ হাজার ভোট পেলেন কি করে? আমি কোনো ভাবেই এর হিসাব মিলাতে পারছি না। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজন তো তাকে ভোট দেয়নি। জাতীয় পার্টিও তাকে ভোট দেয়নি। কেননা, সেখানে তাদের প্রার্থী ছিলেন। তাহলে এই ভোট কারা দিলেন? বিএনপি তো নির্বাচন বর্জন করেছে। আমার ধারণা, জামায়াত-বিএনপি কিংবা অন্য দলের কিছু লোক হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন। সরকারের ওপর ক্ষোভ থেকে তারা তাকে ভোট দিয়েছেন। এর বাইরে তার বিপুল ভোট পাওয়ার কারণ থাকতে পারে না। আমরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও হিরো আলম এখন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তার ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ উদ্বেগ জানানো হয়। উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেন, সহিংসতা ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের যে মৌলিক মানবাধিকার, তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে। তার ওপর হামলা ঘটনা পৌঁছে গেছে মার্কিন মুলুকে। প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, আমি বলব, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার যেকোনো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, স্বচ্ছভাবে ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে উৎসাহিত করি এবং যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে বলি। সুতরাং সহজেই বলা যায়, হিরো আলম এখন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তার ওপর হামলার নেপথ্যে অন্য কারণ খুঁজতে হবে। এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের ব্যাজ পরে যারা হামলা করেছে; তারা আসলে কারা, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া দরকার। এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা হামলা করেছে কি-না; কিংবা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় তারা লিপ্ত কি-না; তা খতিয়ে দেখা জরুরি। কেননা, এ নির্বাচনে হিরো আলম জিততে পারবেন না- এটা সবাই নিশ্চিত। তিনি (হিরো আলম) নিজেও জানেন- তিনি জিততে পারবেন না। তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কেবল আলোচনায় থাকার জন্য।
হিরো আলমের ওপর হামলার দায় পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। নির্বাচনী কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা হলো আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল- এটা কেমন কথা? কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিপুল সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল নির্বাচন কমিশন। তারা কি হামলার দৃশ্য দেখেননি? আর দেখে থাকলে তারা কেন কোনো ব্যবস্থা নিল না? তারা কেন ভোট বন্ধ করল না? আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি তারা সুষ্ঠুভাবে করতে পারবেন- এমন প্রশ্ন তো করাই যায়।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ দেরিতে হলেও কিছুটা ব্যবস্থা নিয়েছে। এটাকে পজেটিভ হিসেবেই নিতে হবে। পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- ছানোয়ার কাজী (২৮) ও বিপ্লব হোসেন (৩১)। কারাগারে পাঠানো পাঁচ আসামি হলেন- মাহমুদুল হাসান (২৭), মোজাহিদ খান (২৭), আশিক সরকার (২৪), হৃদয় শেখ (২৪) ও সোহেল মোল্লা (২৫)। এদিকে, হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হচ্ছিল। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। একেবারে শেষ সময়ের দিকে একজন প্রার্থী কেন্দ্র পরিদর্শন করে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন কিছু দুষ্কৃতকারী তাকে আক্রমণ করে। একই ধরনের কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি- হামলার উদ্দেশ্য যা-ই হোক, এই হামলা যে মানুষের মনে ভয়, আতঙ্ক তৈরি করেছে; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের মনে নির্বাচনী সহিংসতার ছাপ তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচন যে শান্তিপূর্ণভাবে হবে; সেই বিশ্বাস মানুষের মন থেকে উঠে গেছে। আর এ জন্য দায়িত্বরত পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন দায়ী।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
