বিচার দূরের কথা, বছর পেরিয়েও তদন্তই শেষ হয়নি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোচিত ঘটনা উপবালা হত্যাকাণ্ডের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায়, পুরো উপজেলায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতবছরের ২৯ জুলাই উপজেলার টংগুয়া কুমারপাড়ার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় সন্ধায় উপবালা ও তার মেয়েসহ বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যে গণধর্ষনের পর হত্যার শিকার হয় উপবালা।

পরে নিহত অবস্থায় ধানক্ষেত থেকে থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে তার। এমনকি আহত অবস্থায় পরে ছিল তার ১০ বছরের মেয়ে বিপাশা।তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে অবস্থার উন্নতি হয়।সেই হত্যাকাণ্ডের পরে নিহতের স্বামী নিশান চন্দ্র রায় বাদী হয়ে খানসামা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।সেই অভিযোগ থানা পুলিশের হাত ঘুরে তদন্তে ভার পরে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তে।সেখানে বিচার তো দূরের কথা বছর পেরিয়েও এখনো তদন্তই শেষ করতে পারেনি মামলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউনুল হকের সঙ্গে মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাতো এখনো তদন্তাধীন আছে। এখন কিভাবে আর কি অগ্রগতি বলবো আপনাকে..?

মামলা এক বছর পেরিয়েছে এখনো তদন্তই শেষ হয়নি বললে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলে তো রিপোর্ট দিতাম ভাই। উদঘাটন হলে তদন্ত রিপোর্ট চলে যাইতো কোর্টে। সব মামলাতো আর এক না। কোন মামলা ২ দিনেই উদঘাটন হচ্ছে আবার কোনগুলো একটু সময় লাগছে। এবিষয়ে সিনিয়র দের নিদেশনা আছে সেটা আপনাকে বলা যাবে না।

এদিকে নিহতের স্বামী নিশান রায়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি (পিবিআই) এর নামে অভিযোগ করে সকালের সময়কে বলেন, রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনায় চরম হতাশায় ভুগছি। ১ বছর হয়ে গেলেও নিরুপায় হয়ে এখনো দিন কাটাচ্ছি। এদিকে মামলার বিচারের বিষয়ে জানতে (পিবিআই) এ থাকা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন যে, আমিই নাকি আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছি। পরে আমি ওনাদের বলেছি যে,তাহলে আপনারা প্রমাণ করেন আর আমার বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেন।

পরবর্তীতে বাদীর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউনুল হকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেন নি।

আলোচিত সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে বেশ কয়েকবার এলাকাবাসী পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু মহাজোট, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমসহ বিভিন্ন সংগঠন উপজেলা পরিষদ প্রধান রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেছিল। এছাড়াও উপ বালা'র এলাকার হিন্দুদের ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা বর্জন করেও কোনো কাজ হয়নি। শুধুই কি পূজা বর্জন? নির্যাতিত বিপাশা মায়ের হত্যার বিচার দাবিতে মন্ডপে নিয়েছিলেন অবস্থান কর্মসূচি। তখন পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা দোষীদের আইনের আওতায় এ বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেহই। তদন্ত নিয়ে আস্থা হারালেও এখনো বিচারের আশা ছাড়েননি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।

শুধু কি তাই..! এছাড়াও সাম্প্রতিক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ‘আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ পোস্টার লাগিয়ে হত্যার বিচারের দাবি করা হয়েছে। আর পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে, উপবালার ধর্ষক ও খুনি প্রশ্রয়দাতা, সহায়তাকারীদের বিচার চাই। সংখ্যালঘুদের বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলা কেন? উপবালার ধর্ষক ও খুনিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ কেন?

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের সময়কে বলেন, আপনি মামলা নং এবং মামলার বাদীর নামটা সহ আমাকে মেসেজ করুন। পরবর্তীতে বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে +৮৮০২১০৬১৩৪০ টেলিফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে সকালের সময়কে জানান, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আর কোন অবজেকশন থাকলে সেটা আমাদের জানাইতে পারেন; পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক বাদীকে নিজ স্ত্রীকে হত্যার আসামী কিভাবে বলা যায় সেটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিক আছে আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করছি আসলে তিনি কেন বাদীকে এই কথাগুলো বলেছেন।