স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১– ব্যাংকিং সেক্টরের ভুমিকা

রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান। এখন সরকারের লক্ষ্য আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলা। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সরকারের একটি দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে একটি উন্নত এবং টেকসই সমাজ ব্যবস্থায় পরিণত হবে । স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে স্মার্ট শহর, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা, স্মার্ট জ্বালানি ববস্থা, স্মার্ট প্রশাসন এবং স্মার্ট প্রতিষ্ঠান সাধিত হবে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ নামের একটি নির্বাহী কমিটি যার কাজ হচ্ছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা এবং পাশাপাশি এর জন্য অবকাঠামো সৃষ্টি ও দিক নির্দেশনা দেওয়া। তাছাড়া, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতকে আধুনিকায়নের জন্য সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক পরিমন্ডলে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিধিমালা ও রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতি প্রণয়ন করাও এই কমিটির কাজের আওতায় অন্তর্ভুক্ত। স্মার্ট বাংলাদেশের মূলভিত্তি চারটি–স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খাতে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশকে করেছে সমৃদ্ধ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে আর্থিক সেবা পৌছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায়। বিগত এক দশকে এদেশের অর্থনীতির যে সমৃদ্ধি হয়েছে তাঁর পেছনেও রয়েছে ব্যাংকিং খাতের অবদান। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া যার জন্য প্রয়োজন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ” ধারণার যথাযথ বাস্তবায়ন।
স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের একটি রূপরেখা। স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে ফাইভজি ইন্টারনেট, শতভাগ মোবাইল ব্যবহারকারী, শতভাগ উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ক্যাশলেস লেনদেনের সূচনা হবে। দেশের সকল নাগরিক স্মার্ট বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধার আওতায় আসবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে উদ্ভাবনী ধারণা এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এর দ্বারা ডিজিটাল বাংলাদেশ স্থাপনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ব্যবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ ও উদ্দেশ্য। স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি আধুনিক, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত, বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশে পরিণত হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকার ১৪ দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তির অধীনে আত্নকর্মসংস্থান ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি কোম্পানি প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করেছে। আইসিটি পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যেসব দেশে আইসিটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশসহ প্রায় ১০০টি দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে এই খাত থেকে মোট আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আইসিটিই হলো অগ্রাধিকার খাত। সেই খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে গড়ে তোলা হয়েছে ২৮টি হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার। স্মার্ট অর্থনীতি হলো ডিসেন্ট্রালাইজড এবং ডিজিটাল আর্থিক অবকাঠামো সম্পন্ন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। স্মার্ট অর্থনীতিতে সকল সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত হবে। স্মার্ট অর্থনীতির মাধ্যমে সফল ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বর্তমানে সেন্ট্রালাইজড ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেমের মাধ্যমে সবকিছু পরিচালিত হবে এবং একটি সত্যিকার ডিজিটাল এবং স্মার্ট অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপিত হবে । স্মার্ট অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ডিসেন্ট্রলাইজড ডাটা এবং পদ্ধতির অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ব্লকচেইন টেকনোলজি, স্মার্ট যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল পরিচয় হলো স্মার্ট অর্থনীতির মূল বিষয়বস্তু । অর্থনীতির এতসব বিষয়বস্তুকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভূমিকা বিরাট এবং স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণে ব্যাংকিং সেক্টরের অবদান অবশ্যই মূল্যায়নের দাবি রাখে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এক সময় কৃষি নির্ভর ছিল। বর্তমানে এদেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প ও প্রবাসী আয়। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে তিনটি সেক্টর- যথা: কৃষি, শিল্প ও সেবার অবদান যথাক্রমে ১১.২০০% ৩৭.৫৬ শতাংশ এবং ৫১.৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতিতে সেবাখাতের অবদান সবচেয়ে বেশী। সেবা খাতের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি সেবা খাত হলো ব্যাংকিং সেক্টর । ব্যাংক সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টরে তহবিল বিনিয়োগ করে থাকে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংক নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, নতুন শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা এবং উৎপাদনকারীদের দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান করে থাকে। এভাবে সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আর্থিক সেবা প্রদান করার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরের ভূমিকা অপরিসীম। ডিজিটাল সেবা প্রধান, ডিপোজিট অটোমেশন, ইন্টিগ্রেশন, ক্লাউড ভিত্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি প্রযুক্তিগত সহায়তায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার দ্বারা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ আরো ত্বরান্বিত হবে।
একটি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা সে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাই দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে ব্যাংকের তাৎপর্য অপরিসীম। ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য হল আমানত গ্রহণ, ঋণ প্রদান ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। ব্যাংক মূলত নিম্ন হারে আমানতকারীদের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে এবং উচ্চহারে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকদের সেবা প্রদান করা। ব্যাংক এই সেবা প্রদানের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ন্যূনতম চার্জ আদায় করে যা ব্যাংকের অন্যতম আয়ের উদ্দেশ্য। বিনিয়োগের মাধ্যম সৃষ্টি করা ব্যাংকের আরেকটি লক্ষ্য। ব্যাংক বিনিময় বিল, চেক, ডিমান্ড ড্রাফট ইত্যাদি প্রচলন করার মাধ্যমে বিনিয়োগের মাধ্যম সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে থাকে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে ঋণ ও মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ব্যাংক জনগণের হাতে পড়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে মূলধন পুঞ্জিভূত করে। পরবর্তীতে তার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে। বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যাংক দক্ষ ও শিক্ষিত লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূরীভুত করে থাকে। দেশে শিল্পের বিকাশে ব্যাংকের অবদানের কোন বিকল্প নেই। শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক মূলধনের চাহিদা পূরণ করে শিল্পের বিকাশে সহযোগিতা করে। বর্তমানে কৃষকেরা ন্যূনতম ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। বীজ ক্রয়সহ সার, কীটনাশক ও চাষাবাদের সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদান করে দেশের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংক আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন প্রকার ঋণ সুবিধা যেমন লেটার অব ক্রেডিট, পোস্ট ইম্পোর্ট ফাইন্যান্স ও আমদানি পণের বিপরীতে ঋণ প্রদান করে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রাখে। বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ীদের ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে ব্যাংক। ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ প্রদান করে, লেনদেন সহজীকরণ করে, কৃষি ও শিল্পের প্রসার করে থাকে। ফলে দেশের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশকে আরও সমৃদ্ধ করে। এছাড়াও ব্যাংক সরকার ও গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে সেবা প্রদান করে থাকে ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা বজায় রাখে। তাছাড়া, ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হল দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ব্যাংকিং সেক্টর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের আর্থিক সেবা খাতের একটি অন্যতম সেক্টর, যার মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি বিরাট কাজ হয়ে থাকে । ব্যাংক সাধারণত আমানতকারীদের সম্পদ জানা রাখে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে এবং এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে আস্থার সাথে একটি দেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
ব্যাংক ঋণ সরবরাহ করে ব্যাংক বাড়ি তৈরি, গাড়ি কেনা, ব্যবসা পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে ঋণ সরবরাহ করে থাকে। নিরাপত্তার সাথে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জমা রাখে, ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড সরবরাহ করে এবং সব ধরনের পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করে থাকে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা প্রতি বছর দেশের একটি উল্লেখযোগ্য বেকার লোকদের চাকুরীর ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবে ব্যাংকিং সেক্টর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।
ভবিষ্যতে স্মার্ট অর্থনীতির ব্যাংকিং সিস্টেম আজকের মত ব্রাঞ্চ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। ব্যাংক কেবলমাত্র লেনদেন সংক্রান্ত ডাটা সরবরাহ করবে। ব্যাংক একটি রেগুলেটরি গেটওয়ে এর মত কাজ করবে। বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের রেগুলেটরি গেটওয়ে হিসাবে কাজ করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যাংকের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। ব্যাংক বর্তমান ব্রাঞ্চের মতন দৃশ্যমান হবে না। ব্যাংকিং ব্যবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট দ্বারা পরিচালিত হবে। স্মার্ট অর্থনীতিতে ব্লকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স(AI), বিগ ডাটা এনালাইসিস, ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংকস(IoT) ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পেমেন্ট পরিচালনা, ঋণ ব্যবস্থা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পরিচালিত হবে । ব্লকচেইন টেকনোলজি যেহেতু একটি স্বচ্ছ, জবাবদেহতামূলক, স্বয়ংসম্পন্ন এবং পরিপূর্ণ একটি নিরাপদ প্রযুক্তি- যেখানে আস্থার জায়গা তৈরি হবে এবং স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ গঠনে জোরালো ভূমিকা রাখবে। ব্যাংকিং সিস্টেমের সকল প্রকার লেনদেন ব্লক চেইন টেকনোলজির মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার উপরে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অনেক বৃদ্ধি পাবে। নতুন নতুন ব্যবসা বাণিজ্য এবং পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতের আর্থিক সেবার পরিমণ্ডল পরিচালিত হবে । জ্ঞানভিত্তিক একটি স্বযংসম্পূর্ণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে, যার উপরে মানুষের আস্থা অর্জন করার মাধ্যমে সব রকমের আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব হবে । স্মার্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পদ্ধতির আধুনিকায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালে একটি আধুনিক, উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন, টেকসই ও সমন্বিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে । স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে।
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট অর্থনীতি করার জন্য স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনস্বীকার্য । স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সকল হিসাবধারীর ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল স্বাক্ষর থাকবে যার মাধ্যমে রিয়াল টাইম ভেরিফিকেশন সম্ভব হবে। ফলে অনলাইন চুরি ও প্রতারণা থেকে ব্যাংকিং সিস্টেম নিরাপদ থাকবে। EKYC মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিচিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং দুষ্কৃতিকারী বা প্রতারকরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং বা কোন ধরনের দুর্নীতি করতে পারবে না । স্মার্ট অর্থনীতির স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহক, ব্যবসাযী বা যে কোন নাগরিক যে কোন জায়গা থেকে যেকোনো সময় যেকোন সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতের অর্থনীতি হবে প্রযুক্তিনির্ভর ও ক্যাশলেস। ভবিষ্যতে আর্থিক লেনদেন হবে নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে বা ক্যাশলেস টান্সেকশনের মাধ্যমে। নগদ অর্থ ব্যবহার না করে বাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে সেবা বা পণ্যের মূল্য পরিশোধ, অর্থ স্থানান্তর বা বিল পরিশোধকেই ক্যাশলেস পদ্ধতি বলে। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল ওয়ালেট বা অন্য যে কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করাও নগদহীন লেনদেনের অন্তর্ভূক্ত। এই সেবা পেতে দরকার হবে একটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার উদ্দেশ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক কুইক রেস্পন্স কোড উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিঊআর কোড হল সাদা-কালো পিক্সেলে গঠিত একটি বর্গাকার বাক্স যার মধ্যে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এতে প্রায় সাত হাজারের মতো সংখ্যা বা অক্ষর সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপগুলো অর্থ আদান-প্রদানে এই কিউআর কোড ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলে মূল্য পরিশোধের জন্য কিউ আর কোড সম্বলিত স্টিকার লাগানো থাকে। চীনে আলি পে, উইচ্যাট ও ভারতে পেটিএম এবং কিউ আর কোড খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে বাংলা কিউ আর কোডকে স্ট্যান্ডারড হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের এ উদ্যোগএর সাথে সংযুক্ত রয়েছে দেশের ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ৩টি পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস পদ্ধিতে করার লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ পদ্ধতিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ক্যাশ টাকা রাখার প্রয়োজন হবে না। ফলে টাকা চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতি হওয়ার ঝুকি কমবে। নগদ লেনদেনে বিক্রেতাদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় প্রচুর অর্থ ব্য্য় করতে হয়। ক্যাশলেস লেনদেনের ফলে জাল নোট গ্রহণের ঝুকি বা ছিড়া-ফাটা নোট গ্রহণের আশঙ্কা কমবে। যেকোনো জায়গা থেকে, যেকোনো সময় দ্রুত ও সহজে অর্থ লেনদেন করা যাবে। এতে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় নগদ অর্থ বহনের ঝুকি থাকবে না। ক্যাশলেস লেনদেন পদ্ধতি প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। তাই এতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ পাওয়ার ঝুকি থাকে ও একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। হ্যাকিংয়ের শিকার বা প্রযুক্তিগত ত্রুটী পরিলক্ষিত হলে বিপুল পরিমাণ অর্থে অপচয় হয়। তাই ক্যাশলেস বাংলাদেশ তথা একটি স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের আপামর জনগণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ডিজিটাল পেমেন্ট পরিষেবার আওতায় আনতে পারলেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
সবশেষে বলা যায় যে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম ভিত্তি স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে স্মার্ট ব্যাংকিং সেক্টর প্রয়োজন। একটি সমন্বিত, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নত ব্যাংকিং সেক্টর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১” বাস্তবায়নে অন্যতম মূখ্য ভুমিকা পালন করবে।
মো: নূর আলম সরদার
মহাব্যবস্থাপক
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
