ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ওয়াকফ সম্পত্তি বরাদ্দের নামে কোটি টাকার প্রতারণা


ইউসুফ আলী বাচ্চু photo ইউসুফ আলী বাচ্চু
প্রকাশিত: ১-১০-২০২৩ রাত ১১:২২
মাথা গোজার একটু নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের জমানো টাকা তুলে দেই খোকনের কাছে। তার দেখনো স্বপ্নে বিভোর হয়ে চাঁদার টাকাও বছরের পর বছর ধরে পরিশোধ করতে থাকি। যে সমিতিতে আমি কষ্টের টাকা দিলাম এখন শুনি সেই সমিতিই নাকি মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষনা করেছে।
 
এর পরেও খোকনের জমি বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই জমি দেখিয়ে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করে চলছেন। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের নেপথ্যেও এই চক্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। এছাড়াও রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ। 
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকার বাসিন্দা বাউনিয়া প্রজাকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির এক সদস্য।তার ভাষ্যমতে, প্রজাকল্যাণ সমিতি ২০০২ সালে মিরপুরের আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসছা ওয়াকফ স্টেট এর ২০ একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। সেই জমি গত ২১ বছর ধরে নামে-বেনামে বিক্রি করে চলছেন সমিতির সর্বময় ক্ষমাতা কুক্ষিগত গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর দ্বারা প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছেন শত শত নিরীহ মানুষ। যার নেতৃত্বে আছেন মাকসুদুল আলম খোকন ও গোলাম জাহাঙ্গীর ওরফে স্বপন মোল্লা। এই চক্রে আরও আছে সেলিমুজ্জামান তুষার, জিয়াউল করিম ফিরোজ, সিরাজুল ইসলাম লিটন, জামান, জাকির হোসেন,রাশিদা আক্তার ঝর্ণা,তাইজুল ইসলাম,আব্দুল বারেক,নবীর হোসেনসহ আরও কয়েকজন। 
 
অভিযোগে জানা গেছে, বাউনিয়া প্রজাকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির একসময় সভাপতি ছিলেন মাহমুদ কবির মিয়া৷ তার সঙ্গে নেতৃত্বের দ্বন্দ শুরু হয় করিম মজুমদার (সমিতির আরেক সদস্য)। বিসয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে দু'জনই মারা গেলে নিজেকে সভাপতি দাবি করেন মাহমুদ কবির মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তখন দৃশ্যপটে আসেন এই চক্রের মূল হোতা মাকসুদুল আলম খোকন। তিনি মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তিনি ফাতেমা বেগমকে প্রকল্পের কোনো জমিতে যেতে দেননি। আখের গোছানোর জন্য ৪৩৭ সদস্যের সমিতির কর্মকর্তা হিসেবে দুই পক্ষই সদস্যপদ বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করে দিবেন। এমন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে  ৫ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে সমিতির সদস্য পদ দিচ্ছেন। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে টাকা নিয়ে অবৈধ সদস্যপদ দেয়ার কারণে সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে মাকসুদুল আলম খোকন এর হাত দিয়েই অন্তত ৫০০ অবৈধ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সদস্য প্লটের বিপরীতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে  নেয়া হয়েছে। যা টাকার অংকে ১৫ থেকে ২০ কোটি দাঁড়ায়। বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও থেমে থাকেনি খোকন। তিনি জিয়াউল করিম ফিরোজ ও সেলিমুজ্জামান তুষারকে সাথে নিয়ে সমিতির সদস্যদের না জানিয়ে এখতিয়ার বর্হিভুত ভাবে এই প্রকল্পের অর্ধেক জমি ‘বিক্রি’ করে দেন সচিবালয়ের তদবিরবাজ গোলাম জাহাঙ্গীর ওরফে স্বপন মোল্লার কাছে। ২২০ টি প্লটের বিপরীতে নেন মোটা অংকের টাকা। এরপর একইসঙ্গে শুরু হয় স্বপন মোল্লার প্লট বাণিজ্য।
 
স্বপন মোল্লার সঙ্গে চুক্তির বিষয়দি এক কান দু’কান হওয়া শুরু হলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে একটি লোক দেখানো এজিএম করে স্বপন মোল্লাকে পুরনো সদস্য হিসেবে দেখানো হয়। পাশাপাশি সমিতির বই সদস্যদের নাম দিয়ে একটি সাজানো কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় স্বপন মোল্লাকে। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন এই খোকন। পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সদস্যদের সবাইকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও বিগত ৩ বছরে 'বই বাণিজ্য' অর্থাৎ নতুন অবৈধ প্লট বিক্রি ছাড়া কোন কাজই হয়নি প্রকল্পে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, কালশী মোড়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত খেলার মাঠের পেছনের অংশে বাউনিয়া মৌজায় আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ স্টেট এর ২০ একর জমি খালি পড়ে আছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরে ১০ বছর পর্যন্ত সমিতি নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছিলো। তবে সমিতির সভাপতি মৃত্যুবরণ করলে সমিতিকে মাকসুদুল আলম খোকন গংরা সমিতির প্লট বানিজের মিথ্যা আশ^াসের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। চলে তাদের সদস্য সংগ্রহের মহোৎসব। প্লট প্রতি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় এই গোষ্ঠী। নির্ধারিত ৪শ ৩৭ টি প্লট বরাদ্দের কথা থাকলেও এই গোষ্ঠী ২ হাজারের উপর সদস্যের কাছ থেকে প্লট প্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা আদায় করে। 
 
মাকসুদুল আলম খোকন গংদের এইসব কর্মকান্ডের কারণে সম্প্রতি হাইকোর্ট সমিতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশকে গুজব বলে প্রচার করেন খোকন। পাশাপাশি প্রতি দিন নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ ও প্লট বরাদ্দের নামে  মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।
 
অনুসন্ধানে দেখা যায় মিরপুর এলাকায় আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসছা ওয়াকফ স্টেট এর ২০ একর জমি ২০০২ সালে সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয় বাউনিয়া প্রজাকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছে অস্থায়ী ভাবে ৩ বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১০ জানুয়ারি, ওয়াকফ অধ্যাদেশ ১৯৬২ এর ৩৩ ধারা অনুযায়ী কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকা দরে সরকার স্থায়ীভাবে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় সমিতিকে। 
 
২০০২ সালে সমিতির কাগজ ঘেটে দেখা যায়, ২০ একর জমি মোট ৪শ ৩৭টি প্লট করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা। কিন্তু সমিতির এই শর্তকে পাশ কাটিয়ে সভাপতি মাকসুদুল আলম খোকন সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। সমিতির কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্থ সদস্যকে নিয়ে নামে- বেনামে জমি বিক্রি করতে থাকেন। সমিতির ৪শ ৩৭ শেয়ারের বিপরীতে ২ হাজারের উপরে শেয়ার বিক্রি করে সকল বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেতে থাকেন।
২০১৩ সালের গন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৫নং আইন জারির কার্যালয় হইতে জারিকৃত  ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের সকল আদেশ বা আদেশের অংশ বিশেষ যাহা আইন সম্মত ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।বাউনিয়া ২০ একর জমির লিজ বাতিলের গণ বিজ্ঞপ্তি আরও ঘোষণা দেয়া হয় যে, ২৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ তারিখের পূর্বে কোন আদেশের বরাদ্দে বিজ্ঞপ্তির তারিখ হইতে কোন ধরনের ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর ( বিক্রয়,লিজ, ইজারা,বন্ধক,ইত্যাদি) বা রেজিষ্ট্রেশন বৈধ হবে না। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ / মামলা নং (১২২৮) ২০২১সন আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ এস্টেট বাউনিয়া প্রজাকল্যান বহুমুখী  সমবায় সমিতি লিঃ (রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৩৮১) প্রেক্ষিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের স্থগিত আদেশ আছে।
এর আগে গত ২০১৩ সালের  ২৫ ফেব্রুয়ারি এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাউনিয়া প্রজাকল্যাণের ৯৯ বছরের লিজ বাতিলের ঘোষণা দেয় ওয়াকফ প্রশাসন। তবে এর পরও চলমান থাকে খোকন গংদের জমির শেয়ার বিক্রি।
শুধু তাই নয়, চক্রটি নিরীহ সদস্যদের কাছে সরকারের প্রভাবশালী লোকজনসহ ধর্মমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে নিরীহ সদস্যদের প্রতিনিয়ত ধোকা দিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রটি ওয়াকফ প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরের কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজশে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এ কাজে খোকনের মূল সহযোগী নিজেকে হঠাৎ করেই সমিতির সদস্য দাবি করা সেলিমুজ্জামান তুষার ও জিয়াউল করিম ফিরোজ। তারা সদস্যদের বলে বেড়াচ্ছেন, সরকারের ওপর মহল থেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে বলে দেওয়া হয়েছে। উনি সব করে দেবেন। অথচ এমন কোনো কিছুই ঘটেনি বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে ধর্মমন্ত্রণালয়, ওয়াকফ প্রশাসন, সমবায় অধিদপ্তর,  আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসছা ওয়াকফ স্টেট কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে চক্রটির প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে।
এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে আরও ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে আসে। মালিবাগে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার অভিযোগে জেলে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী মুসার নাম ভঙিয়ে খোকন-তুষার চক্র এলাকা থেকে প্রতিমাসে ২০-২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে। এ বিষয়ে মুসার ভাইদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এই টাকার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এমনকি এই টাকার ভাগও তারা কখনো পাননি বলেও নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও ওই এলাকার মাদক কারবারের নেপথ্যেও তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে বলে এলাকাবাসী জানান। খোকনের এক ছেলে কিছুদিন আগে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তবে কয়েকদিন পরই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও লিপ্ত হন মাদক ব্যবসায়।
এমতাবস্থায়, এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

এমএসএম / এমএসএম

মুনিয়া হত্যা সাধারণ ঘটনা নয়, ফাঁস হয়েছে ষড়যন্ত্রের মূল তথ্য

প্রধান উপদেষ্টাকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্মারকলিপি প্রদান

গুলিস্তানের ফুটপাতে চাঁদাবাজির নতুন কৌশল

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মূল্যবোধে আক্রমণ দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি-ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

বুয়েট শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড় অবরোধ

টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর- সড়কের বেইলি ব্রিজ স্থাপনের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

‘নবী মোর পরশমণি’ গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে সীরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

মিরপুর থেকে নিখোঁজ ইরফান চৌধুরী সোনারগাঁও থেকে উদ্ধার

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লাগামহীন দুর্নীতি: আইন শুধু কাগজে, প্রয়োগের মুখে কুলুপ

রাজউকের প্রধান স্থপতি পিতার মৃত্যুতে রাজউক চেয়ারম্যানের শোক

উত্তরার ৫১ নং ওয়ার্ডে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে জনগণের ভাবনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

"ভুয়া লাইসেন্সে হুন্ডি ব্যবসা" শিরোনামের সংবাদের প্রতিবাদ

আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী সড়কে বেইলি ব্রিজ স্থাপন ও দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন