তালার হোসেন আলীর শিকলবন্দী জীবন

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় প্রায় ১৬ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন হোসেন আলী সরদার (২৩)। জন্ম থেকে সে বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। অন্যত্র চলে যাওয়ার ভয়ে তাকে প্রতিদিন বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দী করে রাখা হয়। সে তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শুকদেরপুর গ্রামের দিন মজুর মোঃ মালেক সরদারের বড় ছেলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হোসেন আলীকে বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। পথচারীদের কাছে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে সে খাবার চাচ্ছে। তার আকুতি দেখে অনেকেই তাকে খাবার কিনে দেন। পথচারীদের উপহার পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে হোসেন আলী। শিকলবন্দী এই জীবন কত কষ্টকর সেটা তাকে দেখলে বুঝতে বাকি থাকে না। হোসেন আলী প্রতিবন্ধী হলেও বাবা-মায়ের কাছে চোখের মণি। দরিদ্র পিতা-মাতা সাধ্যমতো সযত্নে রাখার চেষ্টা করেন তাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হোসেন আলীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথা থাকলেও নির্যাতনের ভয়ে তাকে সেখানে দেননি তারা। নিরুপায় হয়ে বাড়িতে শিকলবন্দী করে রেখেছে তাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, অনেক কষ্ট করে জীবন পার করছে হোসেন আলী। তার শিকলবন্দী জীবন দেখে প্রতিবেশীসহ সবার খারাপ লাগে। তবে কিছু করার নেই। কারণ তাকে ছেড়ে দিলে দূরে চলে যায়। অনেক দিন কোন খোঁজ থাকে না। তাছাড়া আশপাশের শিশুরাও তাকে দেখে একটু ভয় পায়।
হোসেন আলীর পিতা মোঃ মালেক সরদার বলেন, ‘ছোট বেলায় অন্য শিশুদের থেকে ভিন্ন আচরণ করত হোসেন আলী। সে কথা বলতে পারত না। বিভিন্ন রকম অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করত। একপর্যায়ে তাকে আমরা বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজ দেখানোর পরে জানতে পারি সে প্রতিবন্ধী। ছোট বেলায় তাকে ছেড়ে দিয়ে রাখলে সে বিভিন্ন স্থানে চলে যেত। কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে বহু কষ্টে খুঁজে পাওয়া যেত। তাই বাধ্য হয়ে তাকে প্রায় ১৬ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রেখেছি। আমাদের থেকে দূরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক দেখানোর পরও তাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথা থাকলেও নির্যাতনের ভয়ে সেখানে পাঠাইনি। শুনেছি পাবনা মানসিক হাসপাতালে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হয়।’
হোসেন আলীর মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হোসেন আলী মানসিক প্রতিবন্ধী। সে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেত। তাকে খুঁজে পেতে আমাদের খুব কষ্ট হতো। তাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে তার পায়ে শিকল দিয়ে রাখি। সকালে তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দী করে রাখি। সন্ধ্যায় তাকে উঠিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। তারপর ঘরের মধ্যে তালাবন্দী করে রাখি। এটা আমার নিত্য দিনের কাজ। গত ১৬ বছর যাবত এই কাজ আমি করে আসছি। সে যদি মারা যায় তাহলে আমার কাছে থেকে মারা যাক। তবুও তাকে আমি দূরে যেতে দিতে চাই না।’
তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘একটি প্রতিবন্ধী কার্ড ছাড়া তার কিছুই নেই। সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও হোসেন আলী তা থেকে বঞ্চিত। অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে তাদের খুব কষ্টে দিন চলে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, হোসেন আলীকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি সুবিধা এলে তাকে দেওয়া হবে। তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদার জানান, ছেলেটা মানসিক প্রতিবন্ধী। স্থানীয় ভাবে তার ভালো চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। তবে বয়স বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এমএসএম / এমএসএম

সিডিএ'র কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ঠিকাদার

পটুয়াখালীতে কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শত শত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ

বেনাপোল বন্দরে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে স্থবিরতা

রাণীনগরে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

অবসরে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের বিদায় সংবর্ধনা

সম্প্রীতি বিনিষ্টকারীদের ছাড় নেই: গোপালগঞ্জে সম্মেলনে ডিসি

পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানায় শক লেগে ৫ শিশু হাসপাতালে

আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে হাটহাজারীর কৃষকরা

রৌমারীতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না বলেই আন্দোলন মুছতে পারেনি : এটিএম আজহারুল

বোদায় ১৩৫০ টাকার সার ১৮০০ টাকায় বিক্রি, যৌথ বাহিনীর অভিযান

সমাজ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই : জহুরুল আলম

নেত্রকোনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ বশির
Link Copied