ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

জনগণ কেন প্রতিপক্ষ?


অনন্য প্রতীক রাউত photo অনন্য প্রতীক রাউত
প্রকাশিত: ২০-১২-২০২৩ দুপুর ১:৪২

আধুনিক বিশ্বে রাজনীতি স্মার্ট বা প্রোডাকটিভ হয়ে গেলেও বাংলাদেশের মাটিতে এখনো মধ্যযুগীয় চিন্তাধারার রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় খুব স্পষ্ট ভাবেই৷ বিশেষত নির্বাচন এলেই জ্বালাও পোড়াও এর নামে তারা ক্ষমতা দখলের নোংরা প্রতিযোগীতায় নামতে শুরু করে। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা এদেশে প্রথম নয় বরং স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে একপ্রকার নোংরা ঐতিহ্য হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে। দূর্ভাগ্যবশত, সাধারণ মানুষরাই অযথা এসব সহিংসতার শিকার হয়৷ 

বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময় হিসেবে রুষ্ট রূপ দেখা যায় ২০০১ সালের নির্বাচনে৷ এদেশীর মাটিতে নেমে আসে ভয়ংকর কালো অন্ধকার। সেই অন্ধকারের আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। বাগেরহাটের ঠাকুর বাড়ির গৃহবধূদের ধর্ষণের ঘটনা কিংবা নির্দিষ্ট কোন প্রতীকে ভোট না দেওয়ার অপরাধে হাতের ১০ আঙুল কেটে দেয়া৷ এগুলো কোনভাবে রাজনৈতিক শুদ্ধাচার? অথচ সংবিধানে ভোটাধিকার চর্চা বা ভোটদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে৷ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২,১৩ তে চোখ রাখলেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা সম্ভব৷ আইনের বেড়াজালে একরকম হলেও কিছু রাজনৈতিক দলের আচরণে দেখা যায় ভিন্নতা৷ এমনকি পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচন সময়ে বাংলাদেশের শুধুমাত্র সহিংসতায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কতোটা হয়েছে সেটার ইয়াত্তা নাই৷ পাশাপাশি জীবন গিয়েছে বহু মানুষের আগুনে পুড়ে কিংবা অন্যভাবে যেকোন সহিংসতায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রাজধানী ঢাকা শহরের যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করতে দেখা যায় বিশেষ করে হরতাল /অবরোধ শুরু হলেই। তখনকার সময়ের ১০ বছরের কন্যা সুমির বেদনাদায়ক কাহিনী আমরা সবাই জানি৷ গাজীপুরের এ কন্যার দেহের ক্ষত-বিক্ষত পোড়া দাগগুলো যেন এদেশের কতিপয় দেশদ্রোহী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দলগুলোর নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার ই বহিঃপ্রকাশ। এমন কর্মকাণ্ডের উদাহরণ সারাদেশে একদমই কম নয়। 

এমনকি অতি সাম্প্রতিক কালের রেলের অগ্নিসংযোগের কথাও বলা যায়৷ মায়ের বুকে জড়িয়ে ছোট্র শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো বগি হতে না বের হতে পেরে৷ সাহিত্যেক ভাষায় হয়তো মায়ের কোলে শান্তির ঘুমে চিরতরে হারালো শিশুটি কিন্তু মানবিকতার ভাষায় এটা একধরনের অপরাধ বা চরম অমানবিকতা। ছোট শিশুটি রাজনীতি 'র' টাও বুঝে বা সংশ্লিষ্টতা ছিল? অথচ নোংরা রাজনীতির শিকার ক্ষুদ্র এই শিশুটিকেও হতেই হলো৷ এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ অপরাধীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সেটাই কাম্য। 

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়ময়সিংহ রেলপথে ভয়ংকর নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কয়েকজনকে খুব দ্রুতই গ্রেপ্তার করেছে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনার। এ পর্যন্ত যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অন্যতম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ডের বিএনপির নির্বাচিত কমিশনার হাসান আজমল ভুঁইয়া, যিনি গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অন্যরাও বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে বিরাজমান সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিনষ্ট করে জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার এবং এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি ও মিডিয়া কাভারেজ।

এর জন্য সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয়েছিল রেলপথকে- যাতে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটে। উল্লেখ্য, এই ঘটনায় ওই এলাকায় আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর ফলে ট্রেনের এক যাত্রী নিহত ও ১২ জন আহত হন। সর্বোপরি বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা- ময়মনসিংহ রেল সংযোগ। নাশকতাকারীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি এবং গ্যাস সিলিন্ডার সঙ্গে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে। ঘটনাস্থলের অন্তত ২০ ফুট রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩টি বগিতে আগুন দিয়েছে হরতাল-অবরোধকারীরা।

এ ঘটনায় মা ও শিশুসহ ৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এর আগেও দেশের অন্তত তিনটি স্থানে রেলস্টেশন ও রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে হরতাল-অবরোধকারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এবং মামলার খবরও আছে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, এসব শুধু নাশকতা নয় বরং দেশবিরোধী অপকর্ম-অপরাধ। যে বা যারা এহেন জঘন্য অপরাধ করেছে, তারা দেশ ও মানবতার শত্রু। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ উপায়ে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর অধীনে বিভিন্ন ধারা, উপধারায় অপরাধ ও সংঘবদ্ধ অপরাধ সংগঠনের প্রশ্নে সহায়তাকারী সম্পর্কে যর্থার্থ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ অতএব, আইনের অধীনে এসব রাজনৈতিক অপরাধের বিচার করা এখন সময়ের দাবী। দেশের জনগণ সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সেই অর্থে তাঁদের রাজনৈতিক বস্তুু বানাবার অধিকার কারো নেই বা থাকা উচিত না। এমনকি রাজনৈতিক মাঠে একটি মহল আজকাল সবচেয়ে বেশী সোচ্চার এখনো নির্বাচন ব্যবস্থা বিশেষত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে৷ মুখের আইনের প্রতি শ্রদ্ধ নিবেদনকারী, আইনের শাসন চাওয়া এসব রাজনৈতিক তথাকথিত মহারথীদের জানা উচিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছে। ২ক পরিচ্ছেদ - নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১(২০১১ সালের ১৪ নং আইন) এর ২১ ধারাবলে পরিচ্ছেদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে৷ অতএব কারণে সংবিধান সন্মত উপায়ে নির্বাচন হওয়া উচিত নয় কি? উত্তর না হবার মানে একটাই আপনারা তথাকথিত শক্তিমত্তার প্রয়োগে অবৈধভাবে ৭৫ পরবর্তী সময়ের মত ক্ষমতায় বসতে চান। যেটি এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য নিশ্চয়ই লজ্জার এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য হতাশার। তরুণ প্রজন্ম সবসময় নতুনত্ব চায় এর মানে এই নয় যে অগণতান্ত্রিক বা অবৈধ কাউক মেনে নিবে। মনে রাখা প্রয়োজন এদেশের তরুণরাই বারবার রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়েছে অধিকার আদায়ের নিমিত্তে। এমনকি আপনার, আমার ভালোবাসার বাংলাদেশ টাও তো রাজপথের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। যদিও সেটা বিস্তর আলোচনা বা ইতিহাসের সুদীর্ঘ এক বাস্তবিক মহাকাব্য। 

তরুণ প্রজন্ম হাতের উঠবে আগামীর দেশ পরিচালনার ভার৷ এমতবস্থায় অপরাজনীতি, নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চাকারী দলগুলোর উচিত নিজেদের কে সময়োপযোগী রাজনৈতিক কাঠামোতে বন্দি করা। গুম, খুন, হত্যা নয় বরং বুদ্ধিমৃত্তিক রাজনৈতিক চর্চাটাই ফিরে আনতে পারে আমাদের রাজনৈতিক সুদিন৷ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বার্থে তাই স্মার্ট রাজনৈতিক কাঠামোতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া প্রয়োজন৷ অন্তত আই হেট পলিটিক্স নামক নির্বোধ প্রজন্ম যেন দেশের রাজনৈতিক সুধারায় কিংবা রাজনৈতিক ফিলোসপি ধারণ করতে শিখে, দেশের প্রতি দায়িত্ব -কর্তব্য বাড়ে সেটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি৷ 

অনন্য প্রতীক রাউত 
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া