বিভিন্ন মহলে অভিযোগ
সুনামগঞ্জ শহরে সরকারি কাজের নামে চলছে অবৈধ ড্রেজারের তাণ্ডব
সুনামগঞ্জ পৌর শহরে প্রশাসনের চোখের সামনে চলছে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের তাণ্ডবলীলা। সরকারি কাজের নামে চলছে বেসরকারি মালিকানা উন্নয়ন ও অবৈধ ব্যবসার চমৎকার কৌশল। শহরজুড়ে বসানো হয়েছে অবৈধভাবে বালুমিশ্রিতমাটি বিক্রির ড্রেজার মেশিনের সংযোগ পাইপ। আর এসব চলছে প্রশাসনের চোখের সামনে- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশেষে বাস্তবে ক্যামেরায় উঠে আসে অনেক অজানা চিত্র। এছাড়াও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে লাখ লাখ টাকার অবৈধ ব্যবসা। এমন তথ্য উঠে এসেছে অনেকের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত পত্রে। এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে বলেও জানা যায় ।
আবেদন সূত্রে যানা যায়, গত ৭ বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় সায়রাত-২ অধিশাখা থেকে-৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০০৭.২০.২১১নং স্মারকে একটি অনুমোদনপত্র দেয়া হয়েছে। অনুমোদনপত্রে বিষয় উল্লেখ করা হয় সরকারি কাজে ব্যবহারের নিমিত্তে অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর তলদেশ হতে মেশিন দিয়ে মাটি/বালুমিশ্রিত মাটি উত্তোলন। যার সূত্র স্মারক নম্বর-০৫.৪৬.৯০০০.০০৮.১২.০২১.২০ (অংশ নতি)-৮০০(৭), তারিখ ০১/০১/২০২১ ইংরেজি। ভূমি মন্ত্রাণালয়ের স্মারক নং-৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০০৭.২০.২৪৬, তারিখ ০৯/০৯/২০২০ ইংরেজি। ওই স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি নার্সিং কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ব্রাক্ষণগাঁও/১০২নং মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১৪৫১নং দাগে ২৪.৮৭একর ও হরিণাপাটি/৯৯নং মৌজার ১৫৩৫নং দাগে ১৩.০০একর ভূমি হতে ২০ (বিশ) লক্ষ ঘনফুট বালি মাটি/বালুমিশ্রিত মাটি উত্তোলনের জন্য শাহীনুর রশিদ চৌধুরী, প্রোপাইটর মা এন্টার প্রাইজের নামে উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর, জেলা সুনামগঞ্জ কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের বিপরীতে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন,২০১০-এর ৪ (চার) ধারা বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় তথ্যাদির স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রত্যয়ন প্রদান করায় অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু উত্তোলনের প্রস্তাবটি শর্তানুযায়ী নির্দেশক্রমে অনুমোদন দেয়া হয়, যা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে ৩১.০০.০০০০.০৫১.৩৭.০০৭.২০.২১১/১(০৮)নং স্মারকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রটি পাঠানো হয় গত ৭ জুন ২০২১ইং তারিখে।
অনুমোদন পেয়েই সরকারি কাজের নামে মা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শাহীনুর রশিদ চৌধুরী সুনামগঞ্জ পৌর শহরে নার্সিং কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে মাটি বরাটের নামে অবৈধভাবে পৌর শহরের বিভিন্ন মালিকের জায়গা টাকার বিনিময়ে ভরাট দেয়ার জন্য অনেক মালিকানাধীন জায়গায় ড্রেজার মিশিনের পাইব পিটিং করে চলেছেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ মল্লিকপুর এলাকার রনজিৎগং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের মাটি ভরাটের নাম করে বড়পাড়া বিডিআর ক্যাম্পের সামন দিয়ে লাইন স্থাপন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধভাবে ভরাট করিছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে সচেতন মহলের ব্যক্তিবর্গ জিজ্ঞাসা করলে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা জানান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড ও থানার ওসি এবং তহসিলদারসহ সবাইকে অংশ দিয়ে ম্যানেজ করে ব্যবসা করছেন। কারো ক্ষমতা নেই তাদের ব্যবসা বন্ধ করার- এমনটি উল্লেখ করা হয় লিখিত আবেদনে।
গত ১২ জুন জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ বরাবরে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন এর লাইন স্থাপন ও অবৈধ চালু ড্রেজিং লাইন বন্ধ করার জন্য ৪ জনের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদনপত্র দাখিল করা হয়। আবেদনপত্রে হাসননগর এলাকার আব্দুল হক, উকিলপাড়া এলাকার রিয়াদ আহমদ, বড়পাড়া এলাকার ফারুক মিয়া এবং দ্বীন ইসলাম স্বাক্ষর করেন। এই আবেদনের অনুলিপি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা, সচিব ভূমি মন্ত্রাণাল সচিবালয় ঢাকা, কমিশনার সিলেট বিভাগ, ডিআইজি সিলেট বিভাগ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদর সুনামগঞ্জ এবং সম্পাদক দৈনিক পত্রিকা বরাবর প্রেরণ করা হয় বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহারিয়ার জানান, বিষটি আমি অবগত হয়েছি। জেলা প্রশাসয়ের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া সুলতানা জানান, সরকারী নির্দেশনার বাইরে যদি কেউ অপরাধজনিত কাজ করেন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র নাদের বখতের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের সুপারিশকৃত সরকারি উন্নয়নকাজের আদেশকৃত কাগজের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রোড কাটার পারমিশন দেয়া হয়েছে। কেউ যদি অবৈধভাবে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি-বালি বিক্রি করে সেটা জেলা প্রশাসককে জানান, তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি উন্নয়নকাজের জন্য ভূমি মন্ত্রণালায়ের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থান ছাড়া অন্য কোথাও যদি কেউ বালু বিক্রি করার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রেজার মেশিন বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সব সময় কঠোর অবস্থানে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ যদি প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ কাজ করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএম / জামান