ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজে শিক্ষক বরখাস্ত যেন নৈমিত্তিক বিষয়


ইউসুফ আলী বাচ্চু photo ইউসুফ আলী বাচ্চু
প্রকাশিত: ২৪-১২-২০২৩ দুপুর ৩:৩৯

শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষক বরখাস্ত করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কোনো অভিযোগ উঠলেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সাময়িক বরখাস্তের নামে হেনেস্তর শিকার হতে হয় এ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের।গত ১৯ বছরে ১৭জন শিক্ষক-কর্মচারিকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত করা ব্যক্তিদের বহাল করে কলেজের তহবিল থেকে পাওনাদি আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করারও অভিযোগ আছে।

শিক্ষকদের হয়রানি, নির্যাতন বরখাস্তের নামে, বিশৃঙ্খলা করায় একসময়ের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন ঐতিহ্য হারাতে বসছে।খোজঁ খরব নিয়ে জানা গেছে, প্রিন্সিপ্যাল মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পরবর্তী সময় হতে শিক্ষক বরখাস্ত শুরু হয়। ২০০৩ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বরখাস্ত হওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন কামরুন নাহার আহমেদ। ক্ষমতায় আসীন হয়েই ২০০৪ সালে মো.ফরিদ হোসেনকে এবং  ২০০৭ সালে আরও  ৮জন  শিক্ষক-কর্মচারিকে বরখাস্ত করেন। তারা হলেন, মোস্তাক আহমেদ মারুফ (পরবর্তীতে অধ্যক্ষ), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো.বদরুল ইসলাম, জাকির আল মামুন, মুন্সি মোহাম্মদ শাহীন, সাহেরা খাতুন, ওয়াহেদ ভূইয়া ও শফিকুল ইসলাম ইউনুস। তার দুইবছর পর ২০০৯ সালে আদালত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির সুপারিশে তারা স্বপদে বহাল হন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাছে থেকে কোনো সেবা না পেলেও বহাল হওয়া ব্যক্তিদের সকল পাওনাদি বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা কলেজ তহবিল হতে প্রদান করে।

খোজঁ খবর নিয়ে আরও জানা গেছে, ২০১৫ সালে মো.আব্দুর রহমান অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে পূর্বের অপকর্মকারীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেট চক্রের বাইরের শিক্ষক এবং বিশেষ করে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে নানান অভিযোগ এনে হয়রানি ও বরখাস্ত করা হয়। ২০১৮ সাল হতে এ পর্যন্ত বর্তমান অধ্যক্ষের রোষানলে পড়ে বরখাস্ত হয়েছেন, মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ, মো. ফজলুর রহমান, মো. সাব্বির, রাজিয়া বেগম, মুন্সি মোহাম্মদ শাহীন, মোহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান, মো.রিপন ফকির। বরখাস্তদের আবার স্বপদে পুর্নবহাল করে পাওনাদি ফিরিয়ে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে।

২০১৮ সালে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মোহাম্মদ তানভীর আহমেদ কলেজের এক কর্মচারিকে যৌন হয়রানি,পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানাবিধ অভিযোগে তৎকালীন কলেজ পরিচালনা পরিষদ তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বরখাস্ত করে। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ মো.আব্দুর রহমানের সাবেক ছাত্র থাকার সুবাধে তাকে শাস্তি না দিয়ে উক্ত পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বর্তমান পরিচালনা পরিষদের আমলে নিজের সিন্ডিকেটের সদস্যদেরকে দিয়ে নতুন করে তদন্ত কমিটি করে চাকুরিতে পুর্নবহাল করে। তার পাওনাদি বাবদ ২৮ লক্ষ টাকা কলেজ তহবিল হতে প্রদান করেন। এই টাকার বড় একটা অংশ অধ্যক্ষ ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের দেওয়ার অভিযোগ আছে। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অধ্যক্ষ মো.আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, এসব মিথ্যা কথা। আমার কলেজে এমন কোন ঘটনা নেই। এ কলেজে শিক্ষকদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। অকারণে কাউকে হয়রানি,বরখাস্ত করা হয় না। যারা অপরাধ করছে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমার আমলে কোনো শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়নি। কাউকে বরখাস্ত করার পরে অভিযোগ যদি প্রমাণিত না হয়, সে আবার স্বপদে বহাল হয়। কাউকে বহাল করেও টাকা ভাগাভাগি করা হয়নি। তানভীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত করে কিছু পাওয়া যায়নি। তাই তাকে বহাল করা হয়েছে।

এ প্রসংগে  কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য তাসলিমা বেগম বলেন, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি যে সিদ্ধান্তটা দিয়েছিলাম যে তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হয়েছে তানভীর দোষী। যখন আমি চলে এসেছি তখন মেয়েটা নাকি অভিযোগ তুলে নিয়েছে। এতে তারা তাকে পুর্নবহল করেছে। পাওনাদি বুঝিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা লিখিত অভিযোগ করে ফাদেঁ ফেললো আবার অভিযোগ তুলে নিলো। মেয়েটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? আর এখন যদি বলে তানভীরের তদন্ত সঠিক হয়নি, তাহলে আমাকে কেন জানানো হয়নি। আমি অধ্যক্ষকে ধরব। তিনি আরও বলেন, আমি শুনছি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের একটা সিন্ডিকেট আছে। শিক্ষকরা সিন্ডিকেট করে হয়নারি, বরখাস্ত  খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক। তবে অন্যায় করলে শাস্তি দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিন্ডিকেট থাকলে প্রতিষ্ঠানের মান মর্যাদা থাকে না।

নিজেকে একজন ভুক্তভোগী বলে দাবি করে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান অভিযোগে বলেন, এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রথমে কারণ দর্শানো,পরে বরখাস্ত করা হয়েছে আমাকে। এটা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। কারণ দর্শানো ও বরখাস্ত করার চিঠিতে কোনো মিল নেই। চিঠিতেই প্রমাণ করে তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগেও অকারণে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে।

ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও বরখাস্ত করার চিঠি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই চিঠির মধ্যে তথ্যের গরমিল রয়েছে। কারণ দর্শানোর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ছাত্রীকে আপনার বিভাগে ডেকে নিয়ে, কৌশলে বিভাগ জনশূন্য করে, তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। বরখাস্ত করার চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে শ্লীলতাহানি, বিনা অনুমতিতে অন্য কলেজের ছাত্রীকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া এবং কর্তৃপক্ষের অবাধ্যতার অভিযোগে বরখাস্ত করা হলো।

কারণ দর্শানোর নোটিশ শুধু ‘শ্লীলতাহানির চেষ্টার’কথা বলা হলেও বরখাস্ত করা চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘শ্লীলতাহানি’। একইসঙ্গে আরও দুইটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা সফরে অন্য ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া ও কর্তৃপক্ষের অবাধ্যতার অভিযোগ। যা কারণ দর্শানোর চিঠিতে নেই। এই প্রতিবেদকের কাছে তথ্য প্রমাণাদি আছে যে, অভিযুক্ত শিক্ষক অন্য কলেজের ছাত্রীকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাননি। উল্লেখ্য যে, একলেজে আত্মীয়স্বজনকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়ার প্রচলন রয়েছে। 

এসবের মদদ দিচ্ছেন প্রিন্সিপ্যাল ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা এমনটাই অভিযোগ করেছেন কলেজের একাংশ শিক্ষক।শ্লীলতাহানীর অভিযোগ দেওয়া ছাত্রীর বাবা আব্দুল সাত্তার বলেন, যে দিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সেদিন আমরা জানি নাই পরে জানছি। আমরা কিছু জানি না, এসব বিষয়ে কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে অন্যায় করলে তো অভিযোগ দিবেই। অভিযোগ আমার মেয়েই দিয়েছে।

মা-শাহানাজ সাত্তার বলেন, যেদিন ঘটনা ঘটছে সেদিন আমরা জানি না,পরে জানছি। তবে তেমন বড় কিছু না। খারাপ ভাষায় বকা দিলে তো অভিযোগ দিবেই। আপনার কিছু বলার থাকলে কলেজে আসেন, যাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের তার সঙ্গে কথা বলেন।

পূর্বে বরখাস্ত হওয়া মুন্সি মোহাম্মদ শাহীন বলেন, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। জোর যার মূল্লুক তার এভাবেই দেশ চলছে। এনিয়ে মুখ খুলতে চাই না।

বরখাস্ত হওয়া মোহাম্মদ তানভীর আহমেদের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ও শিক্ষক প্রতিনিধি আসমা পারভীন বলেন, আমাদের কলেজের এতো কথা কে আপনাকে বলছে। কেউ অন্যায় করলে তো দরখাস্ত হবেই। আর কলেজের কথা আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নয়, আপনি আমাকে আর একটা প্রশ্ন করবেন না। আপনি আমাদের কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন দেন তার সঙ্গে কথা বলেন।

এছাড়া কলেজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়  পারিবারিক মামলায় এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে সহযোগিতার অভিযোগ আছে অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

এমএসএম / এমএসএম

৭২ এর স্বৈরাচারী সংবিধান বাতিল, সংস্কার, বিচার তারপর নির্বাচন-ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর

১৫০০-২০০০ ব্যক্তি ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে : হাইকোর্টে প্রতিবেদন

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মুনিয়া হত্যা সাধারণ ঘটনা নয়, ফাঁস হয়েছে ষড়যন্ত্রের মূল তথ্য

প্রধান উপদেষ্টাকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্মারকলিপি প্রদান

গুলিস্তানের ফুটপাতে চাঁদাবাজির নতুন কৌশল

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মূল্যবোধে আক্রমণ দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি-ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

বুয়েট শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড় অবরোধ

টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর- সড়কের বেইলি ব্রিজ স্থাপনের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

‘নবী মোর পরশমণি’ গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে সীরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

মিরপুর থেকে নিখোঁজ ইরফান চৌধুরী সোনারগাঁও থেকে উদ্ধার

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লাগামহীন দুর্নীতি: আইন শুধু কাগজে, প্রয়োগের মুখে কুলুপ

রাজউকের প্রধান স্থপতি পিতার মৃত্যুতে রাজউক চেয়ারম্যানের শোক