ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

স্বাস্থ্য সেবা সূচকে দেশসেরা মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি photo মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১-১-২০২৪ দুপুর ২:৪৯

টাঙ্গাইল জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলার নাম মধুপুর। টাঙ্গাইল জেলার শহর থেকে মধুপুরের দূরত্ব ৪৮ কি.মি.। অপর দিকে মধুপুর থেকে জামালপুর ও ময়মনসিংহের দূরত্ব প্রায় ৪৭ কি.মি.। তিন জেলার মিলন মোহনায় অবস্থিত আনারসের রাজধানী ও ইতিহাস খ্যাত শালবনের এলাকা মধুপুর।

তিন দিকেই জেলা শহরের দূরত্ব বেশী থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ও চাপ বেশী হয়ে থাকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।সম্প্রতি ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যার উন্নিত হয়ে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিন্তু ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার ১৫৫টি পদের মধ্যে ১১৯টি পদে জনবল রয়েছে। বাকী ৩৬টি পদে বর্তমানে শূন্য রয়েছে। কম জনবল নিয়েই  সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অক্লান্ত শ্রমে এক ঝাঁক তারুণ্য দীপ্ত চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল নিয়ে হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

গত ২০২৩ সালে এ হাসপাতাল থেকে নরমাল ও সিজিরিয়ান ডেলিভেরির হয়েছে ১ হাজার ৪৩ টি,বহি;বিভাগে সেবা নিয়েছে ২ লক্ষ ৪শ’ ৫১ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নিয়েছে ৪৫ হাজার ১শ’ ৫৬ জন। অন্তবিভাগে গড় বেড অকুপেন্সি রেট শতকরা ১৫০ ভাগ এবং এ হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত ইউজার ফি ৯২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯শ’ ৩৮ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন সেবার মান হিসেবে সারা দেশে উপজেলায় মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রখম স্থান অর্জন করেছে।

ক্যাম্পাসের সৌন্দয্য বৃদ্ধি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের সুনাম ও সেবার মান বেড়ে চলা এ হাসপাতালটি  সেবার মান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দেশের মধ্যে গিত বছরে যৌথভাবে প্রথম স্থান ও টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে প্রথম স্থানসহ দেশ সেরা টপটেন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ১০০ শয্যার জনবল পেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে শূন্য জনবল পূরণ ও ১০০ শয্যার জনবল নিয়োগের দাবী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের।

১০০ শয্যার মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মধুপুর উপজেলার লাল মাটির মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি‘র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে নির্মিত হয় ১০০ শয্যা মধুপুর উপজেলা হাসপাতাল। ২০২০ সালে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। জনবল আর অর্থ বরাদ্দের অভাবে হাসপাতালটির সুবিধা পাচ্ছিল না উপজেলাবাসী। গত ১ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান যোগদান করে তরুণ চিকিৎসকদের নিয়ে আন্তরিকতার সাথে ৫০ শয্যার জনবল ও অর্থবরাদ্দ দিয়েই চালু করেন ১০০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম। আগের একটি ওয়ার্ড ভেঙে চালু করা হয় পুরুষ, মহিলা ও শিশু নামে তিনটি পৃথক পৃথক ওয়ার্ড। চালু করা হয়েছে ১০টি কেবিন, সংক্রামক ব্যাধি ওয়ার্ড, মুক্তিযোদ্ধা ওয়ার্ড, নবজাতক সেবার জন্য স্ক্যানো ওয়ার্ড। প্রসূতী ওয়ার্ডে নিয়মিত সিজারিয়ান ডেলিভারি এবং নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে সাধারণ ও ভিআইপি কেবিন। বহিঃবিভাগে তৈরি করা হয়েছে কর্পোরেট হাসপাতালের আদলে সুসজ্জিত শীততাপ নিয়ন্ত্রীত এনসিডি কর্নার। যেখানে রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা। চিকিৎসার পাশাপাশি ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, ইসিজি পরীক্ষা ও ঔষধ বিতরণ।

বহিঃবিভাগে রয়েছে আইএমসিআই-পুষ্টিকর্নার, ব্রেস্টফিডিং কর্নার, এএনসি-পিএনসি কর্নার, ভায়া সেন্টার, কিশোর-কিশোরী সেবাকেন্দ্র, ডেন্টাল ইউনিট, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, টেলিমেডিসিন সেন্টার, স্ব্যাস্থ্য শিক্ষা কর্নার সহ নানা সেবা। হাসপাতালের ডায়াগনেস্টিক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে অত্যাধুনিক সেলকাউন্টার মেশিন ও সর্বাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপন। ডোপ টেস্ট সহ সকল অত্যাবশ্যকীয় পরীক্ষা, আল্ট্রাসোনগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে।

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। সুপ্রশস্থ, পরিচ্ছন্ন, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, সাজানো গোছানো এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সেবা মাধ্যমে  আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বাক্সবন্দী জেনারেটর চালু করে সার্বক্ষনিক বিদ্যুতের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, বর্জ ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আদলে হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনকে এ,বি,সি,ডি,ই নামে ৫টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে এবং হাসপাতালের বাহিরে ও ভিতরে বিভিন্ন নির্দেশিকা, সিটিজেন চার্টার দেখে যেকোন নতুন রোগী অনায়াসে তাদের নির্দিষ্ট সেবা কক্ষে পৌছাতে পারছে। হাসপাতালটিতে চালু রয়েছে বৃহৎ আকারের একটি লিফট। হাসপাতাল ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন পানির ঝরনা, সৌন্দর্যবর্ধক গাছপালা, ভেষজবাগান, ফলের বাগান, খেলার মাঠ সহ নতুন নতুন সুউচ্চ ভবনে হাসপাতালের পরিবেশ দর্শনার্থীদের সবসময় আকর্ষন করছে। বড় হলরুমের পাশাপাশি তৈরী করা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক কনফারেন্স রুম যেখানে নিয়মিত সায়েন্টিফিক সেমিনার হয়ে থাকে। হাসপাতালটি গত বছর ৭ মাসে একাধিকবার এইচ.এস.এস স্কোরিং এ সারাদেশে টপ টেন হাসপাতালের গৌরব অর্জন করেছে এবং এর ধারাবাহিকতায় গত বছর সারা দেশে যৌথভাবে প্রথম স্থান ও টাঙ্গাইল জেলার প্রথম স্থান অর্জন করেছে বলে ১০০ শয্যা মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান।

সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের পাশেই দৃষ্টি নন্দন পানির ফোয়ারা। হাসপাতালের ক্যাম্পাসে শোভাবর্ধনকারী ফুলের বাগান। পাশেই ভেষজ উদ্যান। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে রোগীরা। জরুরি বিভাগটি এসি সংযোজ করা হয়েছে। হাসপাতালের রোগীরা টিকেট কেটে বিভিন্ন বিভাগে যাচ্ছে। হাপাতালের নির্ধারিত সাশ্রীয় খরচে ৩৫ ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সুবিধা পাচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীরা।

চিকিৎসা নিতে আসা রাজিয়া বেগম জানান, তিনি গাইনি বিষয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে। তাকে রক্ত, প্রসাব ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম পরীক্ষা দিয়েছিলো। তিনি হাসপাতালেই স্বল্প খরচেই করেছেন। রহিমা বেগম জানান, তিনি টিকেট কেটে ডাক্তার দেখালেন। তিনিও তিনটি পরীক্ষা করিয়েছেন। টিকেট কাউন্টারের পাশে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের লম্বা লাইন। সারিবদ্ধভাবে টিকেট কেটে স্ব-স্ব বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপ অনেকটাই বেশী। দ্রুত ১০০ শয্যার জনবল নিয়োগের দাবি স্থানীয়দের।

হাসপাতালের ইউএইচএফও জানালেন জুনিয়র কন্সালন্টেন কার্ডিওলজি, নাক কান গলা, চক্ষু, মেডিসিন অর্থপেডিক্স, শিশু, সার্জারিসহ বিভিন্ন পদে ১৫৫ পদের মধ্যে ৩৬টি পদের জনবল খালি রয়েছে। তিনি জনবল নিয়োগের দাবি জানান। ১০০ শয্যা মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন- সরকারী হাসপাতালের প্রতি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের আস্থা ফিরানোর জন্য সর্বাত¦ক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে বহিঃবিভাগ থেকে প্রতিদিন ৬শ-৭শ রোগী। জরুরী বিভাগ থেকে ৯০-১শ সেবা নিচ্ছে। অন্তঃবিভাগে বেড অকুপেন্সী রেট প্রায় শতভাগ। প্রতিমাসে ১শ টির মত নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে এবং প্রায় সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালেই হচ্ছে। তিনি বলেন- ১০০ শয্যা জনবল ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে ও মধুপুরের সর্বস্তরের জনগনের সহযোগিতায় একটি জনবান্ধব হাসপাতালে রূপান্তরিত করার প্রত্যাশা ব্যাক্তি করেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে ১০০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালিয়ে ক্যাটাগরি ভিত্তিতেবিগত সময়ে সারাদেশে যৌথভাবে ও টাঙ্গাইল জেলায় প্রথম স্থান অর্জনের কথা জানান। এ বছর স্বাস্থ্যসেবা সূচকে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ মিনহাজ উদ্দিন মিয়া জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশ সেরা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সেবা ও অবকাঠামো সবমিলিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার মধ্যে অন্যন্য। জনবল নিয়োগের বিষয়ে তিনি জানান, জনবলের চাহিদা পাঠিয়েছি।

 স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, মধুপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আরো আধুনিক করা হবে। সেবার মান বিবেচনায় দেশসেরা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষতে সেবার মান আরো বাড়ানো ও এ অর্জন বজায় রাখার জন্য চিকিৎসকদের নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে।

এমএসএম / এমএসএম

তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ : পুড়ল ৪শ ব্যারেল তেল, ৮ দোকান

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হলেন প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক

গোদাগাড়ীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

জয়পুরহাটে ৬০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার

গাজীপুরে কারখানায় আগুনে নিহত ১

রৌমারীতে আটক ৯টির মধ্যে ১টি জমা না দেওয়ার অভিযোগ বিজিবি’র বিরুদ্ধে

পটুয়াখালীর ধানক্ষেত থেকে ১টি শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার

কামারখন্দে কোনাবাড়ি ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আলোচনা সভায়

মুন্সীগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পুলিশ সদস্যকে গুলি

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকায় ডাকাতি

পটুয়াখালীতে পৌর মাছ বাজারের ঘাট পুনরুদ্ধার, খুশি ব্যবসায়ীরা

নওয়াপাড়ায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকিং সেমিনার অনুষ্ঠিত

মুন্সীগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়েতে ৬ দুর্ঘটনাঃ নিহত ১