হোসনেয়ারা রানীকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য চায় বরগুনাবাসী

২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা আহত পরীক্ষিত নেত্রী বরগুনার পাথরঘাটার মানুষের আস্থাভাজন হোসনেয়ারা রানী। এবার হোসনেয়ারা রানীকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য দেখতে চায় বরগুনাবাসী। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়। সেই আহত নেতাদের মধ্যে ছিলেন হোসনেআরা রানী। সেই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ষোল বছর বয়সী বোনকে গভীর রাতে পাকবাহিনীরা যেদিন তুলে নিয়ে যায় সেদিন মা চিৎকার করে কেঁদেছিলেন। এরপর আর কোনদিন কোন খবর পাওয়া যায়নি বোনের। জীবনে যতদিন বেচে ছিলেন মা হালিমা আহম্মেদ চোখের জল ফেলেছেন। অথচ সেই মায়েরই মৃত্যুর খবর শুনতে হয়েছে জেলে বসে। শেষ বারের মত মায়ের মুখটিও দেখতে পারেননি হোসনেয়ারা রানী।
বরগুনার বিষখালি নদীর তীরে গড়ে ওঠা পাথরঘাটা উপজেলার নচনাপাড়া গ্রামের মেয়ে হোসনেয়ারা রানী। একমাত্র বোন এবং পিতা পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোদাচ্ছের উদ্দিন আহম্মেদ ও মাতা হালিমা আহম্মেদের সাথে শৈশব কাটে তার। বাবা মোদাচ্ছের উদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন নচনাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মা সাবেক মহিলা সম্পাদক। আপাদমস্তক রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা হোসনেয়ারা রানী ছোট থেকে সুরাজনীতির দীক্ষা পেতে থাকেন পারিবারিক ভাবেই।
এরপর আসে একাত্তরের ভয়াল যুদ্ধ। নিমিষেই শান্ত সুন্দর নচনাপাড়া গ্রাম হয়ে ওঠে পাকবাহিনীর অন্যতম টার্গেট। হোসনেয়ারাদের বাড়ি ঘর সব পুড়িয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করায় হোসনেয়ারা রানীর বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। সেখান থেকে বাবা মোদাচ্ছের উদ্দিন আহম্মেদ কোনমতে পালিয়ে জীবন বাচাতে পারলেও পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান হোসনেয়ারা রানীর চাচা ও চাচাতো ভাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি একনিষ্ঠ ভালবাসার মূর্ত প্রতীক ছিলেন মা হালিমা আহম্মেদ। তিনি হোসনেয়ারা রানীকে সব সময় বলতেন বঙ্গবন্ধু বাইরের কেউ নন, তাদের পরিবারেরই একজন। তাই হোসনেয়ারা যেন কখনোই প্রিয় নেতার আদর্শচ্যুত না হন, সেজন্যে মায়ের কড়া নির্দেশ ছিল। মায়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় হোসনেয়ারা রানী হয়ে ওঠেন একজন প্রকৃত আওয়ামীপ্রেমী নির্ভিক সৈনিক। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম বারের মত বরগুনায় গিয়েছিল , তখন তার মা গোপনে বরগুনায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাওয়ার অপরাধে তার মাকে ও পুরো পরিবারকে সমাজ থেকে বাদ করা হয় এবং তার মাকে তালাক দিতে বাধ্য করেছিল তার বাবাকে, দীর্ঘ ১১ মাস বাবার বাড়িতে ছিলেন তিনি, পরবর্তী সময়ে জাতীয় নেতা মরহুম মহিউদ্দীন আহম্মেদের মধ্যস্থতায় মা-বাবার সংসার ফিরে পেয়েছিলেন তাঁরা।
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে ১৯ বার কারাবরণ করেন হোসনেয়ারা রানী। আওয়ামী লীগের যখন চরম দুঃসময় সেই সময়ে মাঠে ঘাটে রাস্তায় স্লোগান দিয়েছেন হোসনেয়ারা রানী। তৎকালীন এমপি নুর ইসলাম মনির রোষানলে তাকে বার বার অপদস্ত হতে হয়। কারাবরন ছিল তার নিত্যসঙ্গী। একবার হোসনেয়ারা বেগমকে ধরে নিয়ে পুলিশ অমানষিক নির্যাতন চালায়। তার শরীরে অজস্র ক্ষতের চিহ্ণ দেখে সেসময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ওয়ান ইলিভেনে যখন শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন তাকে 'আপা আপা' বলে রাস্তা থেকে ডাকার অপরাধে পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। সেসময়ের জেলবাস হোসনেয়ারার জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অভিশপ্ত সময়। তিন দিন অমানুষিক নির্যাতনের পর জেল থেকে মুক্ত হয়ে হোসনেয়ারা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি হন। সেখানে তাকে দীর্ঘকাল চিকিৎসা নিতে হয়৷
ব্যক্তি জীবনেও রাজনীতির জন্যে ঘর সংসার হয়নি হোসনেয়ারার। দিন রাত জনকল্যানে সময় দেয়ার কারণে তার বিয়ের প্রস্তাব আসতো না। পরবর্তীতে পাশের ইউনিয়ন মঠবাড়িয়ার আবু সালেহের সাথে তার বিয়ে হলেও তার রাজনৈতিক পরিচয় জানার পর বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তাকে তালাক দেন স্বামী আবু সালেহ। আবু সালেহের চাচা ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার জব্বার ইন্জিনিয়ার। তার কুচক্রে একবারের জন্যে স্বামীর মুখও দেখতে পাননি হোসনেয়ারা। সেই ঘৃনায় তিনি আজীবন আর বিয়ে করতে আগ্রহী হননি। নিজেকে সম্পূর্ন ভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন মাটি ও মানুষের কল্যানে।
রাজনৈতিক জীবনে হোসনেয়ারা অনেক বিরোধী শক্তিকে পিছনে ফেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুত হননি। বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন সব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। তিনি পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা সম্পাদিকা, আওয়ামী মহিলা লীগের সাবেক ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদিকা এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। বর্তমানে হোসনেয়ারা রানী সংরক্ষিত নারী আসনের পদপ্রার্থী।
ছিন্নমূল থেকে কেন্দ্রিয় পর্যায়ে উঠে আসা সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হোসনেয়ারা বেগমের চাওয়া দেশের মানুষ যেন তার পাশে থাকে। আর তিনিও যেন বাকী জীবন মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর মত ত্যাগের জীবনই সত্যিকারের জীবন বলে বিশ্বাস করেন হোসনেয়ারা রানী।
এমএসএম / এমএসএম

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সেকাল-একাল বই এর মোড়ক উন্মোচন

বড়লেখায় ইজ্জত বাঁচাতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে কলেজছাত্রী আহত, চালক আটক

মানবিক সাহায্যের আবেদন-‘বাঁচতে চায় শিশু ফরহাদ আলী’

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহীতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

কমলগঞ্জে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ

মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়াসহ মারধরের অভিযোগ

বাঘা থানার অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত ও নিয়মিত মামলার ৬ আসামি গ্রেফতার

নবীনগরে কাঁঠালের ছড়াছড়ি: বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক ও ভোক্তা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় স্টপেজের দাবিতে ট্রেন থামিয়ে অবরোধ

সন্দ্বীপ থানার অভিযানে ১২ মামলার আসামী গাঁজা ব্যবসায়ী আটক

নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ যুবদল সভাপতি গ্রেফতার
