ইবি ভারপ্রাপ্তদের ভারে ভারাক্রান্ত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। নয়টি দপ্তরে বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে কাজ। এতে অনেক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কিন্তু দক্ষ কর্মকর্তা না পাওয়ায় নিয়মিত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না বলে উপাচার্যের দাবি।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানিয়েছে, রেজিস্ট্রারের দপ্তর, লাইব্রেরি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, প্রকৌশল বিভাগ, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ, অর্থ ও হিসাব, মেডিকেল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে কাজ চলছে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। তিনি ২০২২ সালের ৩০ জুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পান। আ. লতিফ ভারপ্রাপ্ত প্রধান লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ পান একই বছর।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ২০১৭ সালের ১ জুলাই আবুল কালাম আজাদকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে চিফ মেডিকেল অফিসার মো. সিজারুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে উপ-রেজিস্ট্রার ড. মো. আমানুর রহমানকে, অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে শেখ মো. জাকির হোসেনকে এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে উপ-রেজিস্ট্রার ড. মো. নওয়াব আলীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীনকে ১৫ জুলাই প্রকৌশল অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই দিন শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান শাহ্ আলম।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সময়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় উল্টো পিছিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা দপ্তরগুলো নিজের অনুগত রাখতে কাউকে পূর্ণ ক্ষমতা না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দপ্তরগুলো চালাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন প্রায় অচলাবস্থা। প্রশাসনিক কাজে রয়েছে স্থবিরতা। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে মনে করছেন তারা।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রাণ দপ্তরগুলো। এখানের পরিচালকদের এভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রাখা উচিত না। এতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সমস্যায় চুপ থাকেন। স্বাধীনতা হারিয়ে যায়। স্বাধীন রেজিস্ট্রার ও সকল দপ্তরে ভারমুক্ত থাকলে উপাচার্য একটা ভুল করলে ধরিয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত থাকায় তারা নিজেরাই পদ হারানোর আতঙ্কে। তাই স্বাধীনভাবে রুটিনের বাহিরে নিজের মতো কর্ম পরিচালনা করতে পদগুলো ভারমুক্ত হওয়ায় শ্রেয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট বলেন, ভারপ্রাপ্তের বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে।
আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, ভাইস-চ্যান্সেলর চাইলেই তো আর সব পারে না। কিছু জায়গায় দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব পদ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। আমি ভারপ্রাপ্ত জায়গাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু পেরে উঠছি না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রশাসনের কাছে জিম্মি কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি সকালের সময়কে বলেন, চাপ আসলে নির্ভর করে ভারপ্রাপ্ত পদে যে আছে তার মনের জোরের উপরে। প্রশাসন থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপর বিন্দুমাত্র চাপ দেওয়অ হয় না। চাপ যা থাকে তা তাদের ব্যক্তিগত।
এমএসএম / এমএসএম