সুন্দরবনের দুবলার আতঙ্ক শফিউল্লাহ খোকন রাজাকার গা ঢাকা দিয়েছে

সুন্দরবনের দুবলার আতঙ্ক শফিউল্লাহ খোকন রাজাকার গা ঢাকা দিয়েছে।
খান শফিউল্লাহ খোকন (৭৩) ওরফে ‘রাজাকার খোকন’। চার দশকে হয়ে উঠেছেন সুন্দরবনের দুবলার চর মৎস্যপল্লির অঘোষিত রাজা। প্রভাব আর আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে নিরীহ জেলেদের শাসন ও শোষণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অর্থবিত্তে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। দীর্ঘদিন চরে দোর্দন্ড দাপট দেখালেও হঠাৎ আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। যুদ্ধাপরাধ মামলা থেকে রেহাই পেতে উচ্চ মহলে তদবির চালাচ্ছেন বলে ভাষ্য অনেকের।
আত্মগোপনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের ভাষ্য, যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত শুরু হওয়ায় পালিয়েছেন খোকন। তিনি খুলনার রূপসা উপজেলার দেয়ারা এলাকার বাসিন্দা।
দুবলার চরের জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ী গাজী রহমান, কেরামত মল্লিক ও বোরহান গাজীর দাবি, যুদ্ধাপরাধের তদন্তের খবর পেয়ে খোকন চর ছাড়ায় স্বস্তি ফিরেছে জেলেপল্লিতে। দু’দিন ধরে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। তার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জেলে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ ও উল্লাসের খবর তিনি শুনেছেন। দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ওরফে শ্যাম মল্লিককে হত্যার দায়ে খোকনসহ তিনজনকে আসামি করে ২০২২ সালে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন নিহতের ছেলে সাইফুল মল্লিক গামা। গত ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তারা রূপসা থানায় এসে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
মামলার বাদী, সাক্ষী, চরের মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ১৩ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রজীবনে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফ্রন্টের (এনএসএফ) সক্রিয়কর্মী ছিলেন শফিউল্লাহ খোকন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে খুলনায় মুসলিম রীগের প্রভাবশালী নেতা খান এ সবুর এর লাঠিয়াল বাহিনীর প্রভাবশালী সদস্যহন খোকন। এরপরই শুরু হয় খোকনের শাসন ও শোষণ।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় খান আমজাদ হোসেন রাজাকার বাহিনীর খুলনা জেলা কমান্ডার হওয়ার পর তার দলে যোগ দেন খোকন। পরে তাকে বর্তমান রুপসা( সাবেক খুলনা) থানার দেয়ারা এলাকার রাজাকার কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তখন সে ২৫ন থেকে ৩০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ওরফে শ্যাম মল্লিককে খোকন গুলি করে নিজ হাতে হত্যা করে। খোকন ও তার বাহিনীর হাতে আরও দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নারী ধর্ষন ও অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটিয়েছে খোকন ও তার সহযোগীরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খোকন ভারতে পালিয়ে যায়। দু’বছর আত্মগোপনে থাকার পর দেশে ফিরে বটিয়াঘাটা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন সে। ১৯৮৩ /৮৪ সালে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিনের পাশাপাশি দুবলার চরে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তুু মেজর(অবঃ) জিয়া জানতেন না খোকন রাজাকার ছিলো।
চরের জেলেরা জানান,খোকন দাদনের নামে নিরীহ জেলেদের ঠকিয়ে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক, হন প্রভাবশালী। জেলে ও ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতে ২০০২ সালে ক্রস ফায়ারে নিহত আছাদুজ্জামান লিটুকে ভাড়া করে নিয়ে যান। দুবলার মেহেরআলী খালে বর্ষামৌসুমে অবস্থানরত ইলিশজেলে ও মৎসজীবীদের উপর হামলা করে চরের ব্যবসা দখল করে নেন খোকন।
জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে মেহের আলীর চরের ব্যবসা দখলে নেন। এর আগেই আলোরকোল চরের অধিকাংশ ব্যবসা তার দখলে নেন। শীত মৌসুমে আলোরকোলে অবস্থানরত জেলে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য খূলনার কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারকে মাঝে মাঝে দুবলায় নিয়ে যেত। এরপর নির্যাতন চালিয়ে হয়ে ওঠেন আতঙ্কের নাম।
২০১৭ সালে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়া উদ্দিন মারা যান। এরপর কামাল উদ্দিন আহমেদ দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি হন আর সহ সভাপতি হন খান শফিউল্লাহ খোকন। এরপর তার প্রভাব আরো বাড়াতে থাকে। তবে চরের ‘স্বঘোষিত শাসক’ খোকন প্রায় ১০দিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন। এর পরই শুরুহয়েছে নানা আলোচনা। নির্যাতনের শিকার মঠবাড়িয়ার তুষখালী গ্রামের মামুন শরীফ ও মফিজুল শরিফ জানান, অত্যচার ও নির্যাতনে মাছের ব্যবসায় নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। তাদের পরিবারও দুবলা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
মামলার বাদী সাইফুল মল্লিক গামা বলেন, মামলার আগে ও পরে খোকন এবং তাঁর স্বজনরা আমাকে হত্যাসহ নানা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন। সাক্ষী মুনসুর আলী পোদ্দারের ভাষ্য, খোকন রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে শোলপুর দেয়ারা এলাকায় ধর্ষণ, লুট ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। ১৯৭১ সালে যুগীহাটি গ্রামের শামসুর রহমানসহ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
মুনসুর আলী বলেন, স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাসীনদের উত্থান-পতন হলেও দাপট ধরে রেখেছেন খোকন। আড়ালে চার দশকে দুবলার চরে শুঁটকি ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার সরদার মো. মাহাবুবার রহমান বলেন, শফিউল্লাহ খান খোকন তালিকাভুক্ত রাজাকার কমান্ডার। রূপসার রাজাকারের তালিকায় তার নাম রয়েছে। খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক সহকারী কমান্ডার বজলুর রশিদ আজাদ জানান, মুক্তিযুদ্ধকালে খোকন রূপসার আইচগাতী ইউনিয়নের রাজাকারের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ এমন কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড নেই, যা খোকন ও তার বাহিনীর সদস্যরা করেনি। এত বছরেও তাদের বিচার হয়নি।
এসব বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা খান শফিউল্লাহ খোকনের বক্তব্য জানতে তাঁর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া মেলেনি।
এমএসএম / এমএসএম

খাগড়াছড়ি ও গুইমারা সংঘাত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

টাঙ্গাইলে আইসিইউ বন্ধ, পর্যাপ্ত ডাক্তারও নেই, রোগীরা আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেননা

সিংড়ায় পূজা মন্ডপে বিএনপি নেতার অনুদান প্রদান

অভয়নগরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজসহ সার বিতরণ

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

মাদারীপুরে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

রায়গঞ্জে ভিডব্লিউবি'র কর্মসূচি'র পচা ও নিম্ন মানের চাল বিতরণ

মিরসরাইয়ে এতিমের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ জহুরুল হক এর বিরুদ্ধে

চন্দনাইশে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেন সাবেক বিচারপতি মামুন

কালীগঞ্জে কৃষকদের মাঝে শাক সবজি বীজ ও সার বিতরণ

হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উপহার দৈনিক সকালের সময় প্রকাশিত সেই মানবিক এনাম

আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষিকা মা-মেয়ে নিহত স্বামীসহ আহত-৫
