জোরালো করতে হবে জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলার উদ্যোগ -শিমুল আহসান

পৃথিবী এমন এক মহাবির্পযয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই , আবার কখনো অতির্বষণ। শুষ্ক মৌসুমে মারাত্মক খরা শস্যহানি; আবার প্রলয়ঙ্কারী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পৌণ:পুণিকতা।
ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে,অন্যদিকে শীতকাল সংকুচিত হচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তের অস্তিত প্রায় বিলুপ্ত। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরির্বতন। এই যে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর Intergovernmental Panel on climate Change-IPCC “বিজনেস আজ ইউজুয়াল” পটভূমিতে হিসেব করে দেখিয়েছে যে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ৪.২ ডিগ্রী বাড়বে।
প্রতিদিনের গড় তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করা হয় তা হল Weather। এবং এই প্রাকৃতিক বিষয়গুলোরই ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে Climate বলে। যেসকল প্রাকৃতিক Components দ্বারা আমরা আবহাওয়া বা জলবায়ুকে নির্দেশ বা নির্ধারণ করি; সেগুলো হল: বায়ুর Temperature, Pressure, Movement, Humidity এবং Precipitation কিছু প্রাকৃতিক Factors রয়েছে যার দ্বারা নির্ধারিত হয় কোন স্থানের জলবায়ু কেমন হবে। সেগুলো হলঃ Latitudinal Location, Height of the place, Distance from the sea, Wind movement pattern, Ocean Current, Distance from the hills or the mountains, Slope of the place, Characteristics of the soil, Distance from the forest or the vegetation covered region ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যদিও মানুষের কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। জলবায়ুর উপাদানগুলোর পরিবর্তনই জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দেশক। জলবায়ু পরিবর্তন একটি Global Issue। সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে তাকে Climate Change বলে।
জলবায়ুর পরিবর্তন এর নেতিবাচক দিক ভেবে মানব সভ্যতা তার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। এ সমস্যাগুলোকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখিন হতে পারি তা হলো স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন, বন্যা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি, খরার স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বৃদ্ধি, স্থলে টর্নেডো এবং সমুদ্রে সামুদ্রিক ঝড় এর ঘটনা ঘটবার Frequency বৃদ্ধি, তাপ প্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি, পানির Quality ও Quantity পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমবাহের গলন ইত্যাদি। আর আর্থসামাজিকভাবে পানি সংশ্লিষ্ট সম্পদের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে এবং মোটামুটি হারে তা বিভিন্নভাবে দেখা দিচ্ছেও বটে, পানি ব্যবহারের সাধারণ মান অবনতি (যেমন: নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানি কিনে খাচ্ছে), কৃষি ও বনজ সম্পদভিত্তিক ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত ক্ষতি, বসতির ক্ষেত্রে- অধিবাসীদের স্থানাস্তর এবং জীবিকার ক্ষতি, উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা, শিল্প-শক্তি, দুর্যোগ সাড়া ও উদ্ধার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে নব নব জটিলতা সৃষ্টি হবারই কথা। আর তা যদি হয় কোন উন্নয়নশীল দেশের উপর তাহলে তার উচ্চমাত্রা সহজেই উপলব্ধির যোগ্য।
পৃথিবীর আবহাওয়ার গড় অবস্থার পরিবর্তন উন্নত বিশ্বের কর্মকাণ্ডের ফলেই ঘটছে। উন্নত বিশ্ব “জলবায়ু পরিবর্তন” বিশেষ করে “বিশ্ব উষ্ণায়ন” প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় দায়ী । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মূল উৎস হলো কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মতো জ্বালানি ব্যবহার, বন নিধন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক শিল্পায়ন ইত্যাদি। অকেজো ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনে ব্যবহুত জ্বালানি ভালভাবে নিঃশেষ না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণেই গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বনীকরণ ও মরুকরণের ফলে ভূমিতে প্রতিফলনীয়তা পরিবর্তন ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক সৌর শক্তি শোষণের পরিমাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফারের এরোসল মেঘমালাকে পরিবর্তিত করে।
ক্লোরোফ্লোরো-কার্বন গ্যাস বা সিএফসির কারণে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের পরিবর্তন জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের গড় জলবায়ুর মাত্রা উন্নীত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে গড় নয়, আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতাই ক্ষতি ঘটাবে বেশি। এতে ঘটবে প্রচন্ড খরা ও ঝড়, পরিণামে ঘটবে মৃত্যু। শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই বায়ুমন্ডলে তাপ ধরে রাখতে সক্ষম গ্যাস সমূহের পরিমান বাড়ছে। ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Greenhouse Effect বলে। আর গ্রীনহাউজ প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহকে গ্রীনহাউজ গ্যাস বলে। গত শতাব্দিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ২৫%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমান বেড়েছে ১০০%। বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র পাল্টে দিচ্ছে।
সময়ের চাহিদায় গ্রিন এনার্জি, গ্রিন জব এবং জীববৈচিত্র্যের মাধ্যমে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সকল জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারে এবং অন্যান্য দেশকে অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকা, পরিবেশ, সম্পদ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য জন্য জলবায়ু সহনশীলতা তৈরি করা অপরিহার্য। জলবায়ু সহনশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বাংলাদেশ পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে আরও ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, হ্রাস করতে পারে জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের প্রভাব এবং এর নাগরিকদের জন্য আরও টেকসই এবং নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে পারে। জলবায়ু সহনশীলতা তৈরি করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন একটি চলমান চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত এবং ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
লেখক: পাবলিক রিলেশন এন্ড মার্কেটিং স্পেশালিস্ট, ক্রিলিক-এলজিইডি।
Sunny / Sunny

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
