রহস্য্যময় সিআরবি আন্দোলন : হাসপাতাল নির্মাণের টেন্ডার বিড করেছিল চট্টগ্রামের ৪ প্রতিষ্ঠান

দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় ধরে চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) সংলগ্ন গোয়ালপাড়ায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন হাসপাতাল ও রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে যাচ্ছে। তবে এ আন্দোলন কিসের স্বার্থে তা নিয়ে রয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। আসলেই কি পরিবেশ রক্ষার জন্য মাঠে নেমেছেন এই পরিবেশবাদী ও বিশিষ্টজনরা নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে; তাও স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই হাসপাতাল করার জন্য টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন ওয়েল গ্রুপসহ চট্টগ্রামের ৪টি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতাও। এ নিয়ে জনমনে রহস্যের ঢেউ প্রবাহিত হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলের জায়গায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) হাসপাতাল করার লক্ষ্যে কনসালট্যান্ট নিয়োগের মাধ্যমে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে টেন্ডার ডকুমেন্ট রেডি করে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক ও ইংরেজি দৈনিক ফিনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তখন দেশি-বিদেশি ২৮টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার সিডিউল ক্রয় করে। এরমধ্যে ছিল- চট্টগ্রামের মেহেদীবাগস্থ ম্যাক্স হাসপাতাল লি., সদরঘাটস্থ বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পাজিজ, কদমতলীর তাহির এন্টারপ্রাইজ লি., আগ্রাবাদের ইউনিটেক্স স্টিল মিলস লি., ইউনিটেক্স স্পিনিং লি. ও বায়েজীদ এলাকার স্মার্ট জিন্স লি.।
২৮টি সিডিউল বিক্রি হলেও টেন্ডার বিড করেছে মাত্র ৩টি সিডিউলের। স্মার্ট জিন্স লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চিটাগং ডেনিম মিলস লিমিটেড, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ও ম্যাক্স হাসপাতালের সাথে জেভি করে বিড করেছে সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সানজি টেক্সাটাইল মিলস লিমিটেড ও ওয়েল গ্রুপ। এরমধ্যে ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুচ ছালামের নাম রয়েছে। এই টেন্ডার বিড করার শেষ তারিখ ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। আর ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ব্যবসায়ী ও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম। এছাড়া স্মার্ট জিন্স ও চিটাগং ডেনিম মিলস লিঃ এর মালিক মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
এব্যপারে কথা বলতে নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ,সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মোবাইলে কল ও বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের একাধিক দায়িত্বশশীল কর্মকর্তা বলেন আন্দোলনের কোন কারন বলতে পারবোনা তবে চট্টগ্রামে হাসপাতাল খুব জরুরী। চট্টগ্রামেরই একাধিক প্রতিষ্ঠান এই হাসপতাল নির্মাণের জন্য টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলেন তারা টেন্ডার পাননি বলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে কিনা তা খতিয়ে দেখলে বুঝা যেতে পারে। আবার যেখানে হাসপাতালটি হওয়ার কথথা সেই এলাকায় অনেক জায়গা অনেকে নিজের খেয়াল খুশিমত দখল করে ব্যবহার করছে হাসপাতাল হলে যেহেতু তারা আর সেখানে থাকতে পারবেনা এটাও একটি কারন হতে পারে। আবার চট্টগ্রামে হয়তো এমন কেউ আছে এখানে এই হাসপাতাল হলে তাদের ব্যবসায় ধ্বস নামতে পারে সেই কারনে তারা চাইবেনা এই হাসপাতালটি হোক। হাসপাতাল হবে কি হবেনা এমন প্রশ্নে বলেন আমরা যারা চট্টগ্রামের সিআরবিতে কর্মরত তারা কেউই সর্বেসর্বা নয়, শুধুমাত্র উপরের আদেশ বাস্তবায়ন করা আমাদের কাজ। তাই উপর মহল যদি চায় তাহলে হবে আর উপর মহল না চাইলে হবেনা এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোন লাভ লোকসান নেই।
তবে নাগরিক সমাজের দাবী তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে নয় চট্টগ্রামের স্বার্থেই এই এলাকায় হাসপাতাল চায়না। এখানে একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে তাছাড়াও এটি হ্যারিটেজ জোন হিসেবে খ্যাত নগরবাসীর সুস্থতার জন্য এই প্রকৃতি ধরে রাখা বড়ই প্রয়োজন। তাই হাসপাতাল রুখতে যা প্রয়োজন তাই করতেও তারা প্রস্তুত আছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রেলওয়ে ও চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ যার যার অবস্থায় অনড় রয়েছেন। চট্টগ্রামের সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে এমনকি প্রয়োজনে তিনি সিটি কর্পোরেশন থেকে জমিও ব্যবস্থা করে দিবেন বলে বলেছেন।এব্যপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিকের সাবেক মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীও চান এখানে হাসপাতাল হউক।
সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠান সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের টেন্ডারে অংশ নেয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এসএম নাজের হোছাইন বলেন উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য চট্টগ্রামে হাসপাতাল প্রয়োজন তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে হোক তা আমরা চাইনা। সরকারি যেসব জায়গা বেদখল হয়ে আছে সেগুলো উদ্ধার করে সেখানে হাসপাতালসহ অন্যান্য সেবামুলক প্রতিষ্ঠান করতে পারে।
এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’র অন্যতম মিডিয়া সদস্য ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান কামাল পারভেজ বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার হলো আজকাল দায়িত্বশীলরাই জেনেশুনে অবৈধকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে, কারণ তাদের কাছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিবেশ ও নান্দনিকতা কোনটাই প্রযোজ্য নয়,তাদের চিন্তাভাবনা শুধু পুঁজিবাদী হওয়া। আপনরা জানেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) মাষ্টার প্ল্যান ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ডিপিজেড--৩) ২০০৯ সালে সিআরবি এলাকাটি হেরিটেজ জোন হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমেই গেজেট আকারে আইনটি পাস হয়। সেখানে আব্দুচ সালাম সাহেব সিডিএ'র চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় জেনেশুনে টেন্ডার বিড করাকে আমি চট্টগ্রামবাসীর সাথে প্রতারণার সামীল বলে মনে করি। তবে যারা হাসপাতালের টেহুার বিড করেছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়, তারা নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এই আন্দোলন সরকারের উন্নয়নের বাঁধার কোনো আন্দোলন নয়, বরঞ্চ যারা হাসপাতাল নির্মাণের নামে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করার স্বরযন্ত্র করছে এবং হেরিটেজ জোন খ্যাত পরিবেশকে বিনষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীর এই আন্দোলন। তবে আমরাও চাই চট্টগ্রামে ভালমানের একটা হাসপাতাল হোক তবে সিআরবি এলাকার বাহিরে রেলওয়ের আরও অনেক জায়গা রয়েছে সেখানে নির্মাণ করা হোক। এখানে হাসপাতাল হলে পুরো শহর সৌন্দর্য হারাবে এবং ঢাকার চাইতেও গাড়ির জ্যাম দীর্ঘ হবে যা চট্টগ্রামবাসী ভোগান্তিতে থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় নগরে একটি শিশু হাসপাতাল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দও পায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিন্তু ২ একর জায়গার সন্ধান করে পাওয়া যায়নি বলে সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। অথচ চট্টগ্রামে শতশত একর সরকারি জমি জবরদখল করে খাচ্ছে একশ্রেণির প্রভাবশালী ভুমিদস্যু চক্র। অবৈধভাবে ব্যবহার করছে গ্যাস পানি ও বিদ্যুৎ। উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই সংশ্লিষ্টদের।
এমএসএম / জামান

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ
