ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

আত্মহত্যা রোধে প্রয়োজন ভালোবাসা


শারমিন সুলতানা রিমি photo শারমিন সুলতানা রিমি
প্রকাশিত: ২৮-৩-২০২৪ দুপুর ১২:৪২

 মানুষ একদিন মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক মৃত্যু কারোর কাম্য নয়।  কিন্তু বর্তমান সময়ে অবলিলাক্রমেই নানান দুর্ঘটনার মধ্যে সেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। যে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর মিছিলের অংশ বিশেষ ইদানীং খুব কমন একটা বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে আত্মহত্যা। প্রায় প্রতি দিনই টিভি চ্যানেল, পত্রিকা বা ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যায় দেশের কেউ না কেউ আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি দেখার পরে যখন একটু গভীর ভাবে ভাবি তখন আমি রীতিমতো হতবাক হতভম্ব হয়ে পড়ি। যা বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায়  নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। তাইতো কর্মজীবনে শত ব্যস্ততার মধ্যেও  দু-চারটি লাইন লেখার চেষ্টা করলাম। যাই হোক এবার আসি মূল প্রসঙ্গে,আর সেটা হলো সব চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আত্মহণনকারীরা বয়স্কদের তুলনায় তরুনদের সংখ্যাই বেশি। এই জন্যই আশ্চর্য বলছি ? মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই যত বড় বা বয়স্ক হবে, তত তার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। তবে দেখা যায় মানুষকে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি বেশি হতে হয়। সেই তিক্ততা একটা সময় বিষাদে পরিনত হয়। যা মানুষটাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে রাখে। তাই তিক্ততা বা বিষাদের পরিমান পরিমাপ করলে, একজন বয়স্ক ব্যক্তির আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার কথা। কারন আশাহত একটা মানুষের জীবনে আর কোন চাওয়া পাওয়া থাকেনা।

কিন্তু তরুনরা আত্মহত্যার দিকে বেশি ঝুঁকছে কেন ? এই কেন এর উত্তর দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়, তবে মাত্র কয়েকটা কারন তুলে ধরলাম। যেমন, বয়ঃসন্ধিকাল,অতিরিক্ত আবেগ,অতিরিক্ত প্রত্যাশা,সবাইকে চোখবুঝে বিশ্বাস করার প্রবনতা,ফ্যামিলি প্রবলেম,একাকিত্ব, সেল্ফ রেসপেক্টের অভাব,সাপোর্টের অভাব,বাবা বা মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকা,ডিপ্রেশন,হীনহিন্মতা,ধর্মীয় অনুশাসনের উপস্থিতি না থাকা। নিজের কথাই বলি,আমি একজন প্রাপ্তবয়স্কা। কিন্তু আমার মাঝেও যে এটা কখনো দেখা দেয়নি তা না। হয়তোবা একেক সময়ের ব্যাখ্যা একেক রকম ছিলো। মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে,গলায় ফাঁস লাগাই,
আবার মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে হাতের উপর ব্লেড রেখে জাষ্ট একটা টান দিয়ে দেই। 

কখনো কখনো মনে হয়েছে বিষ খেয়ে মৃত্যু অনেক শান্তির। আবার কখনো মনে হয়েছে ১০ তলা ভবনের উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে হাড় ভাঙ্গার যে শব্দটা হবে বা মাথার খুলি যে চটাস করে ফেটে যাবে। সেটাও একটা চমৎকার ব্যাপার হবে নিশ্চয়। এখন ভাবতে পারেন, এগুলি মনে হবার কারন কি ? কারন যে আসলে কি, সেটা আমরা সঠিক করে কেউই জানিনা। তবে একটা সময় মনে হয়েছে, সব মানুষের ভীড়েও আমি একা, আমার সাথে কথা বলা বা কথা শোনার মত কেউ নেই। চরম একাকিত্ব যাকে বলে। আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের, প্রচুর হাসিখুশি। কিন্তু জানেন তো, হাসিখুশি মানুষগুলি নিজের সমস্যার কথা অন্যকে জানাতে পারেনা কিংবা বোঝাতে পারেনা। আর আত্মহত্যা করা ছেলে বা মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখেন, তার বাবা মা সেম কথাটি বলবে। আমার মেয়ে-ছেলে তো খুব হাসি খুঁশি স্বভাবের ছিলো, সে কিভাবে এটা করলো। 

হাজারো মানুষের ভীড়ে নিজেকে একা বলে আবিস্কার করেছি। নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগা অন্যকে জানাতে চেয়েছি, কিন্তু মনে হয়েছে শোনার মত আসলে কেউই নেই। একটা ব্যাপার কি জানেন, ১০০% পরিবারের মধ্যে মাত্র ৫% পরিবার সন্তান কে বুঝতে পারে বা বোঝার চেষ্টা করে। বাকি ৯৫% ই বুঝেনা তাদের কি করা উচিত। একটা মানুষ যখন আত্মহত্যা করে, তখন প্রচুর জ্ঞানী লোকের উদয় হয়। তখন তারা গম্ভীর গলায় বলে উঠবে,আত্মহত্যা মহাপাপ। এটা কোন সমাধান নয়।কিন্তু আপনি তার কাছে সমাধান জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমি বাজি ধরতে রাজি। সে আপনাকে সঠিক ভাবে বলতে পারবেনা যে সমাধান টা কি ? কারন এর সমাধানের ব্যাপারে আমরা অনেক বেশি উদাসীন। আমরা মানুষকে জ্ঞান দিতে পছন্দ করি, কিন্তু নিতে নয়।আমরা তিরস্কার করতে জানি, প্রশংসা নয়। আমরা উপহাস করে মজা নিতে জানি, কিন্তু পাশে দাড়ানোর কথা বলতে পারিনা। আমরা কথা বলতে পছন্দ করি কিন্তু কারও কথা শোনার ধৈর্য ধরতে পারিনা। আমরা শাসন করতে বুঝি, ভালবেসে সমাধানের ব্যাপারটা বুঝিনা বা খুঁজিনা।

আমরা বাঙালী,সামান্য কারনে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে জানি,কিন্তু ভরসার হাত বাড়িয়ে দিতে জানিনা ! এগুলোই হলো মানুষের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এইযে অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে গুলি চরম ডিপ্রেশনে ভোগে এর কারন কি ? প্রতিটা প্রবলেমই শুরু হয় পরিবার থেকে। সেটা প্রেম বলেন,পরকীয়া বলেন বা নির্যাতনের কথা বলেন। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পাবেন, আত্মহত্যা করা বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরই ফ্যামিলি প্রবলেম। হয়তো বাবা মার ডিভোর্স, নয়তো অতিরিক্ত শাসন,নয়তো অতিরিক্ত স্বাধীনতা,নয়তো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অভাব,নয়তো ভার্চুয়াল জগতে অগাধ বিচরণ নয়তো বাবা-মা দুজনই চাকুরীজীবি।

প্রতিটা ফ্যামিলি যদি তার সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাদের সময় দেয়, তাহলে আমার মনে হয় আত্মহত্যার মত ঘটনা কমে যাবে।কারন আপনার সন্তানটি যদি চরম হতাশায় নিমজ্জিত থাকে সেটা আপনার জানতে হলে।আগে আপনাকে তার কাছাকাছি যেতে হবে। যেটা শাসন করে কখনো সম্ভব নয়। হয়তো সে তার সহপাঠী দ্বারা প্রতারিত হয়েছে,হয়তো তার প্রেমিক বা প্রেমিকা তাকে ধোঁকা দিয়েছে। হয়তো পরিক্ষার রেজাল্ট নিয়ে সে লজ্জিত। এমনও তো হতে পারে সে নিজের বাসায় বা বাসার বাইরে হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছে। নয়তোবা তার প্রচন্ড একা লাগছে, অসহায়ত্বে ভুঁগছে। হয়তো তারা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের অভাবে কিছুই বলতে পারেনি। সংকোচ করেছে,জমে থাকা দুর্বিষহ যন্ত্রণাগুলোর  কথা গুলি কাউকে বলতে না পেরে চরম ডিপ্রেশনে চলে গেছে।

যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহরূপে প্রকাশ পেয়েছে ! আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন, জানার চেষ্টা করুন, অভয় দিন, সাহস দিন, হাসুন, প্রচুর হাসুন, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান, সময় দিন। এই সাপোর্ট গুলি তার মনে শান্তি এনে দিবে,সে হতাশায় নিমজ্জিত হবে না। মানুষ যখন বয়ঃসন্ধিতে থাকে, তখন তার আবেগ হয় আকাশ ছোঁয়া, হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায় তখন। ভাল মন্দের হিসেব তারা করতে জানেনা। অল্পতেই অভিমানী হয়, আবার অল্পতেই ভেঙে পড়ে। তাই সাপোর্ট দিন,পাশে থাকুন এবং থাকার চেষ্টা করুন সেই কামনায়।

লেখক 
শারমিন সুলতানা রিমি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ 
সরকারী তিতুমীর কলেজ,ঢাকা। 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া