বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- একটি নাম, একটি সংস্কৃতি, একটি দেশ। কোনো অত্যুক্তি নয়, বরং একজন বাংলাদেশি মাত্রই স্বীকার করতে হবে বঙ্গবন্ধু না থাকলে ‘বাংলাদেশ’ নামের এই দেশটির উত্থান সম্ভব ছিল না। তাই আজ রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।আজ সেই মানুষটির কথা খুব মনে পড়ছে। যিনি দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থেকেও কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি হয়ে অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরেও এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশ ভাগের পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালি ওপর শোষণ ও ভাষা সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীকারের দাবি জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা চালায় বর্বর গণহত্যা। গণহত্যা চালানোর পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। আর তখনই বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী গৌরবোজ্জ্বল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে বাংলার জনগণ অর্জন করে লাল সবুজ পতাকা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার বাংলাদেশ শব্দ দুইটি একবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারন বঙ্গবন্ধু না থাকলে আজকের বাংলাদেশ হয়তো আমরা পেতাম না। বাংলাদেশ শব্দের মূলে হলো শেখ মুজিব। কারণ তৎকালীন সময় আমাদের দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। তবে আমরা ছিলাম পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় সম্পদ ও জনবলে বেশি। তারপরও আমাদের ছিল না কোনো স্বাধীনতা। পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা ছিল উর্দু। ৫২ তে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের কারণে তারা ব্যর্থ হয় এবং বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। আর এই রকমই বিভিন্ন পদে পদে তারা আমাদের উপর জুলুম শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার লুন্ঠন এবং এদেশের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কাজ। আর এই শোষণ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতেই জন্ম হয় শেখ মুজিবের আর আমরা পেয়ে যাই স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি একসূত্রে গাঁথা। বঙ্গ তথা বাংলার জন্যে শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ ও অবদানকে সম্মান জানিয়েই ১৯৬৯ সালে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়। আর ১৯৬৯ এর ৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করেন (ফাহাদ, ২০১৯)।
বাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ মুজিব। শুধু স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হননি। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে সবাই যখন ভারত-পাকিস্তান নিয়ে ব্যস্ত, সে সময় মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রগতিশীল ধারার তরুণ নেতা ২৭ বছর বয়সী শেখ মুজিব দুই বাংলার বাঙালিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেন। এর জন্য গঠন করা হয় বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি। জনমতকে সাথে নিয়ে বেঙ্গল মুসলিম ওয়ার্কিং কমিটি এক ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল (ফাহাদ, ২০১৯)। তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। জনসাধারণের ভোটে একটি গণপরিষদ হবে। সেই গণপরিষদ ঠিক করবে বাংলাদেশ হিন্দুস্থান না পাকিস্তানে যোগদান করবে, নাকি স্বাধীন থাকবে। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের হঠকারিতায় এ প্রস্তাবনা সে সময় সফল হয়নি।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। সে সময় কারাগারে বন্দি ২৯ বছর বয়সী শেখ মুজিবকে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগেই বঙ্গবন্ধু নিজ উদ্যোগে পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজকে নিয়ে ১৯৪৮ সালে ‘ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে বন্দি থেকেও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কাজ করেছেন শেখ মুজিব। ১৯৫৩ সালেই আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন তিনি। ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া এবং শেখ মুজিবকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৬ সালের কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, এবং দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে একবছর সফলতার সাথে জনগণের জন্য কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে সাংগঠনিক স্বার্থে মন্ত্রিত্বের মতো লোভনীয় পদ হেলায় ত্যাগ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে শেখ মুজিব উদ্যোগী হয়ে সমমনা ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের গোপন সংগঠন (ফাহাদ, ২০১৯)।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে বিরোধী দলের সম্মেলন শুরু হয়। সাবজেক্ট কমিটির এই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। সে বছরের ১ মার্চ শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় ছয় দফার পক্ষে জনমত গড়তে পূর্ববাংলা সফরে মাত্র দুই মাসের মাঝেই আটবার গ্রেফতার হতে হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে (শেখ হাসিনা, ২০২০)।
১৯৬৮ সালের পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামি করে দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ততদিনে ছয় দফার প্রতি ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছিল। ১৯৬৮ এর শেষদিকে, ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে নতুন আন্দোলন শুরু হয়। তার সাথে ছয় দফাকে অন্তর্ভুক্ত করে এগার দফা দাবিতে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এরমাঝে ১৯৬৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার শেখ মুজিবসহ সকল আসামিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়েও অভ্যুত্থানকে শান্ত করা যায়নি। গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারের মুখে টিকতে না পেরে শেষাবধি ২৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন (কামাল ও কিবরিয়া, ২০১৪)। সারাদেশে নতুন করে জারি হয় সামরিক শাসন। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এবং অচিরেই দেশে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা চালুর দাবি স্বীকৃত হয়।
১৯৭০ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের ১৬৭টিতেই আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি ও পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হন। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
একাত্তরের ৭ মার্চ সারাদেশে টানটান উত্তেজনা। দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে কখন তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন। অবশেষে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে কৌশলে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। সাত মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই ঐতিহাসিক ছয় দফা মূলত স্বাধীনতার দাবিতে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭১ এর ৭ মার্চ শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নিকট তার মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পূর্ববাংলায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ২৩ মার্চ ভোরে পাকিস্তান দিবসে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তার বাসভবনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন। এই পতাকাটি বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের জুন মাসে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জয় বাংলা বাহিনীর হাতে গচ্ছিত রেখেছিলেন। একাত্তরের ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় 'জয় বাংলা' বাহিনীর কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজ শেষে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলের সালাম গ্রহণ করেন (ফাহাদ, ২০১৯)।
২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাঙালিদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর ও পূর্ব বাংলাকে নেতৃত্বশূন্য করতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনা হামলা শুরুর সাথে সাথেই স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাকে বন্দি অবস্থায় পাকিস্তানের করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ( ২০২০)।
করাচি থেকে কালবিলম্ব না করে কঠোর গোপনীয়তায় বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় লাহোরের ৮০ মাইল দূরের লায়ালপুর শহরের কারাগারে। একাধিক কেন্দ্রীয় কারাগার থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে দূরবর্তী জেলা শহরের কারাগারে আটক করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে মানসিকভাবে পিষ্ট করা। বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়েছিল নিঃসঙ্গ সেলে, মরুভূমির গরমে তেতে ওঠা সেই কারাকক্ষে কোনো ফ্যান ছিল না (হক, ২০২০)। ইয়াহিয়া খান প্রত্যাশা করছিলেন শেখ মুজিব যেন পাগল হয়ে যান। কারাগারের বিরূপ পরিবেশ, দুঃসহ গরম ও সর্বোপরি নির্জন কারাবাস যে কারো মনোবল গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সবকিছুই মোকাবিলা করেছিলেন অপরিসীম মানসিক জোর এবং আপন ভাগ্য বিষয়ে নিঃস্পৃহতা নিয়ে।
১৯ জুলাই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার খবর প্রকাশ করে। আদালতের কার্যক্রমে ছয়টি অপরাধের জন্য শান্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু তাতেও বঙ্গবন্ধুকে মানসিকভাবে দুর্বল করা যায়নি। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেয়া এবং তাঁর পক্ষে কৌঁসুলি নিয়োগে অস্বীকৃতি জানান গোটা বিচারকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কার্যত আদালতের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসেছিলেন। আদালতকক্ষে যা কিছু ঘটেছে, তা তিনি নিঃস্পৃহতা দিয়ে বরণ করেছিলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় আপন সমর্থন তো দূরের কথা, কোনো কার্যক্রমেই অংশ নেননি।
৪ ডিসেম্বর সামরিক আদালত বিচারের রায় ঘোষণা করে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। আদালতের কার্যক্রম শেষে তাঁকে নেয়া হয় মিয়ানওয়ালি জেলে। সেখানে দণ্ডাদেশ কার্যকর করার ব্যবস্থা নেয়া হতে থাকে যে সেলে তিনি ছিলেন, তার পাশে কবরও খোঁড়া হয়, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির সাথে এ সিদ্ধান্তেরও পরিবর্তন হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি যোদ্ধারা শুধু পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করেনি বরং তাদের প্রাণের নেতা, যার নেতৃত্বে এই নয় মাসব্যাপী বাঙালির সংগ্রামের শুরু, যার নির্দেশে জীবনকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়া, তাকে এই মুক্ত স্বাধীন দেশে ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২০ ডিসেম্বর জুলফিকার আলি ভুট্টো খণ্ডিত পাকিস্তানের দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যুদ্ধ শেষে এ দাবি আরো জোরালো হয় অবশেষে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধু ইসলামাবাদ ত্যাগ করেন। তিনি ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন (হাসান, ২০১০)। তার এই প্রত্যাবর্তনে পূর্ণতা পায় বাঙালির নয় মাসের সংগ্রাম। বন্দি করে বঙ্গবন্ধুকে একদিন যে শহর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে শহরেই তিনি পা রাখলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তরুণ রাজনৈতিক শেখ মুজিব যে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ১৯৭১ সালে স্বপ্নের বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সেই জাতির জনক।
বাংলাদেশ গঠন এবং বাঙ্গালির স্বাধীনতা অর্জনে শেখ মুজিবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার মহা নায়ক। আর এ কারণেই তাকে জাতির পিতা নামে ডাকা হয়। মুজিবের জন্ম না হলে হয়ত আমাদের স্বাধীনতা অর্জনই আজো হতো না।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে তারা পরাজয় স্বীকার করে।= এবং আমরা পাই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।
লেখক: প্রভাষক ও কথা সাহিত্যিক
ফুলছড়ি সরকারি কলেজ
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
