ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

আইনি জটিলতায় চসিকের ২০ ঘাটে খাস কালেকশন, রাজস্ব বঞ্চিত সরকার


চট্টগ্রাম অফিস photo চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশিত: ১৭-৪-২০২৪ দুপুর ২:৫৮

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মালিকানাধিন কর্ণফুলীর সল্টগোলা-ডাঙারচর ঘাটসহ ২০টি নদী পারাপার ঘাট ইজারা না হওয়ায় নামেমাত্র খাস কালেকশন আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। ঘাটগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় এই বছর ২০ ঘাটের ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে চসিকের রাজস্ব শাখা ‘খাস কালেকশন’  আদায় নিম্নমূখী বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
এতে চসিক রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরোনো ইজারাদারদের সাথে আঁতাত করে খাস আদায়ে উঠেপড়ে লেগেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চসিক মেয়রের নাম ভাঙাচ্ছেন বলেও শোনা যায়।

চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীসহ পণ্য আনা নেওয়া করা হলেও আইনি জটিলতার দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা সরকারি অর্থ ইজারা লোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করে রাজস্ব আদায় কম দেখানোর সুযোগ তৈরি করছেন। যা রাজস্ব ফাঁকির কৌশল ছাড়া কিছু নয় বলে পাটনিজীবি একাধিক সমিতির দাবি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাস কালেকশনে টাকা আদায় কম দেখানো হলে পরবর্তী বছরের ইজারা মূল্য কমানোর আইনগত পথ সৃষ্টি হয়। 

এছাড়াও একাধিকবার খাস কালেকশনে পরের বছর আইনগত ঝামেলা এড়িয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারসাজিতে কয়েক বছর পরপর গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর ইজারা মূল্য কমে যায় এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।

এমনকি এ পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র খাস জমা হলেও সিংহভাগই চলে যাবে সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে চসিক কিংবা সরকার।

তথ্য সুত্রে জানা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট (১৫১৬৩/২৩) পিটিশনের কারণে এবার বাংলা ১৪৩১ সনে চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটসমূহ ইজারা স্থগিত রয়েছে। ঘাটে ঘাটে আবার কানাঘুষাও চলছে এসব চসিকেরই কৌশল। যাতে কপাল খুলে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও চসিক কেন্দ্রীক সিন্ডিকেটদের।

জানা যায়, চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটসমূহ হলো-পতেঙ্গা ১৫ নং ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুলঘাট, সদরঘাট, ফিশারীঘাট, নতুনঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪ নং ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১ নং মাতব্বর ঘাট, ১২ নং তিনটিংগা ঘাট, ৭নং রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯ নং বি ও সি ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট হতে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট চাক্তাই লবণঘাট।

এ বছর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ছিল পতেঙ্গা ১৫ নং ঘাট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সল্টগোলা ঘাট ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ১০০ টাকা, বাংলাবাজার ঘাট ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬০০ টাকা, সদরঘাট ২১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ টাকা,
ফিশারিঘাট ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা, পতেঙ্গা ১৪ নং ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১১ নং মাতব্বর ঘাট ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা, ৯ নং বি ও সি ঘাট ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।

হিসাব করলে দেখা যায়, পতেঙ্গা ১৫নং ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্যের সাথে ২০ ভাগ ভ্যাট যোগ করলে মোট ইজারা দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে দৈনিক কিস্তি পড়ে ৮৮ হাজার ৬০২ টাকা। অনুরূপভাবে সল্টগোলা ঘাটের দৈনিক কিস্তি ১৮ হাজার ৮৪৫ টাকা। এভাবে প্রতিটি ঘাটে দৈনিক ইজারা আদায় পড়ে ১০ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকার মতো ইজারা আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু অতি কৌশলে চসিকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মাত্র দৈনিক ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার নামেমাত্র মূল্যে খাস কালেকশন আদায়ের প্রক্রিয়া নিচ্ছে চসিক।

এতে অভয়মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনকারী মো. আবুল জানান, দৈনিক ২ হাজার টাকা মজুরীতে তিনি অভয়মিত্র ঘাট নিয়েছেন। বাংলাবাজার ঘাটের লোকমান দয়াল বলেন, দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তিনি বাংলাবাজার ঘাট দেখাশোনা করছেন। 

যদিও চসিক নীতিমালা অনুযায়ী ঘাট ইজারা কিংবা খাস আদায়ে সমবায় অধিদপ্তর কতৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পাঠনীজীবি সমিতিকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু খাস আদায়ের জন্য স্থানীয় পাঠনীজীবিগুলো মেয়রের কাছে ধর্না দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন কিংবা মানববন্ধন করার চিন্তা ভাবনা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানায়।

সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনীজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা সাম্পান মাঝিরা সাম্পান চালিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই। আমরা চাই কেউ আমাদের পেটে লাঁথি না বসায়। টোল কিংবা খাস কালেকশন যে আদায় করবে করুক, আমরা এই ঘাটের মাঝি, আমরা যাত্রী পারাপার করতে চাই। বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার করে খাস কালেকশন দিচ্ছি। এখনো চসিক থেকে কেউ আসেনি। আমরা সরকারি রেজিস্ট্রেশনধারী পাটনিজীবি সমিতি। কিন্তু বাহিরের কিছু লোকজন ঘাট দখলের পাঁয়তারা করতেছে। ঘাটে চাঁদাবাজি করার জন্য। আমরা এসব হতে দেব না।'

বেশিরভাগ ঘাটের ইজারাদার জলধার আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুর বলেন, 'আমরা কয়েকটি ঘাটের খাস কালেকশন করতেছি। প্রতি ১৫ দিন পর পর সিটি কর্পোরেশনে টাকা দিতে হয়।'

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'কিছু পাটনিজীবি সমিতি মিলে হাইকোর্টে রিট করে স্টে অর্ডার করেছেন। যাতে ইজারা টেন্ডার বন্ধ থাকে। যার কারণে ঘাটগুলোর ইজারা বন্ধ। আমরা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতেছি। শিগগিরই রিট শুনানি করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বর্তমানে ঘাটগুলো বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন ভাবে দেওয়া হয়েছে। যা এস্টেট শাখা ভালো বলতে পারবেন।'

চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বিশেষ ট্রেনিং এ থাকায় কোন মন্তব্য করতে পারেননি। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইন শাখা কাজ করতেছে। শিগগিরই হাইকোর্টের স্টে অর্ডারটি ব্যাকেট করা হবে। তারপর ঘাটগুলোর টেন্ডার কল করা হবে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লোকজন ঘাটগুলো দেখাশোনা করতেছেন। আর সল্টগোলা ডাঙারচর ঘাটে লোকজন গেছে।'

এভাবে খাস খালেকশন চলতে থাকলে কাঙ্খিত রাজস্ব না আসার কথা স্বীকার করে, চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব কম আসছে এটা সত্য তবে হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলতেছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে ইজারা স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলতেছে খুব শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি।

এমএসএম / এমএসএম

সীমান্তবর্তী চার জেলার থানার সমন্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথ কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত

মনোহরদীর রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষামূলক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

ত্রিশালে খুচরা সার বিক্রেতাদের আইডি কার্ড বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

অভয়নগরে বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই ইজিবাইক চালকের মৃত্যু

রাজশাহীতে সড়ক ও জনপথের কর্মচারী ইউনিয়নের মানববন্ধন

দোহারে তরুণদের মিলনমেলা: অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিজ্ঞা

গোপালগঞ্জে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে নারী সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সাভারে দখলবাজির সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয় জড়ানোর অভিযোগ।

লাকসামে অস্তিত্ব সংকটে খেজুর গাছ রস সংগ্রহে ব্যাস্ত গাছিরা

থানার ভেতরে চাঁদা দাবি, না দেওয়ায় সাইনবোর্ড ভাংচুর ও হত্যার হুমকি

৩১ দফা বাস্তবায়নে তাড়াশে লিফলেট বিতরণ ও শো ডাউন

রায়গঞ্জে খুচরা সার বিক্রেতাদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

আশুলিয়ায় সাংবাদিককে আইনী জালে ফাঁসানোর হুমকি আ’লীগ নেত্রী গাজী নাছরিনের