বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্যহীন বদলি নীতিমালা যেমন প্রণয়ন হতে পারে

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে এই দাবিটি খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। এ বিষয়ে উত্থাপন করেছি যে এনটিআরসি এ কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত এমপিভুক্ত শিক্ষকদের জন্য পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিবন্ধনের মেধাক্রম অনুসারে মাদ্রাসা থেকে স্কুল/কলেজ এবং কলেজ থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে । আর এটিকে ভালো হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রায় সকল বদলি প্রত্যাশী নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক।
বদলি ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। তবে সেটি একই প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায়/ ব্যাংকে/ এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু প্রত্যেকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে শূন্য পদ সাপেক্ষে সমপদ / সমস্কেলে শিক্ষকদের বদলি করা যেতে পারে।
যথাযথ নীতিমালা প্রবর্তন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ দিনে ও হয়নি সে নীতিমালা প্রণয়ন, ও কাঙ্খিত বদলির ব্যবস্থা। তাই তারা খুব মানবতার এবং দীর্ঘসহ জীবন যাপন করছেন।
বদলির বৈষম্য নিরসন প্রণয়নে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগ প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত। এত বড় শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বা শক্তিশালী কাঠামো হচ্ছে ‘শিক্ষক নিয়োগ’।
এই শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এক নীরব বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে সম্ভবত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের মাধ্যমে। স্কুল বা কলেজ কমিটি কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পর থেকে প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার বদলির ব্যবস্থা চালু করেনি সরকার। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বদলি সুবিধা থেকে বঞ্চিত, যা শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও যন্ত্রণার। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকেরা বদলির দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছেন, যা এখনো চলমান। কিন্তু কার্যকরী উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে হতাশার সঞ্চার করেছে। যাই হোক, খুশির সংবাদ এই যে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইনডেক্সধারী বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বদলির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটা শিক্ষকদের জন্য খুব ই খুশির সংবাদ। কিন্তু শোনা যাচ্ছে যে বদলি হবে স্ব স্ব অধিদপ্তরে। যদি অধিদপ্তর পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকে তাহলে বদলি ব্যবস্থা টা সর্বজনীন হবে না এবং অনেক জেনারেল শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হবেন। শিক্ষকরা মনে করেন যারা জেনারেল সাবজেক্ট গুলো তে মাদ্রাসা বা কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন তারা যেন সমপদে এবং সমস্কেলে এক অধিদপ্তর হতে অন্য অধিদপ্তরে বদলি হতে পারেন।তাছাড়া প্রতিটি অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালায় ও শিক্ষকদের সমপদে সমস্কেলে অধিদপ্তর নির্বিশেষে বদলির কথা উল্লেখ রয়েছে।
এখানে আর ও উল্লেখ্য যে একজন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদে স্কুল,মাদ্রাসা ও কারিগরি সকল প্রতিষ্ঠানে ই চাকরির কথা উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ তিনি উভয় অধিদপ্তরে ই আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে তাই শিক্ষকদের রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ এই যে তাদের কে যেন বদলির পূর্ণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করা হয়। পাশাপাশি অধিদপ্তর নির্বিশেষে বদলি বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং ভবিষ্যতে অনেক শিক্ষক আগ্রহ নিয়ে এই পেশায় আসবেন। সমস্যাগুলি বিবেচনাপূর্বক শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি মাত্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলির ক্ষেত্রে বৈষম্য না রেখে অধিদপ্তর পরিবর্তন করার সুযোগ থাকলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা আরো এক ধাপ তরান্বিত হবে বলে মনে করা হয়। বদলি বৈষম্য থাকলে জেনারেল শিক্ষকগণ এন.টি.আর.সি.এর মাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তিতে মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
সমপদে সমস্কেলে অধিদপ্তর নির্বিশেষে বদলি-ই হতে পারে এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার এক অনন্য মাইলফলক।সব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রেখে একটি বদলি নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যেই আমি কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন
এক অধিদপ্তর থেকে অন্য অধিদপ্তরে বদলি হওয়ার পর অটো ইন্ডেক্স ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা স্কুল/কলেজ,মাদ্রাসা ও কারিগরি অধিদপ্তরের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ি মাদ্রাসার জেনারেল প্রভাষকদের কলেজে সহকারি অধ্যাপক,উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষের বিধান থাকলে বদলিতেও এই বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।
মাদ্রাসার জেনারেল শিক্ষকরা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমপদে/সমস্কেলে যেভাবে বদলি হবে মাউশিতেও ঠিক সেভাবেই সমপদ/সমস্কেলে বদলি হবে।এমপিও নীতিমালা অনুযায়ি ভিন্ন অধিদপ্তরে ইনডেক্স ট্র্যান্সফারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
বদলি কৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দ ক্রম অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয় একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বদলি করা যেতে পারে।এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ২০২১ এর ১২.২ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এনটিআরসিএ কর্তৃক বেসরকারি শিক্ষকদের-কাঙ্খিত বদলি দ্রুত কার্যকর করা আবশ্যক।
লেখকঃ- মো. সরোয়ার, প্রভাষক (ইংরেজী)
ইনডেক্সধারী বদলি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদ, (সভাপতি)
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
