ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

পত্রিকার মানুষেরা


মো. কামাল উদ্দিন photo মো. কামাল উদ্দিন
প্রকাশিত: ৮-৫-২০২৪ দুপুর ২:২৯
খবরের কাগজ আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাসের পত্রিকার অংশ। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। এক সময় মনে করা হয়েছিল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রসারের ফলে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কমে আসবে। কিন্তু সে আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়নি। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রের বিষয় ও পরিবেশনা রীতিতে অবশ্য নতুনত্ব এসেছে। এসেছে নানা বৈচিত্র্য। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। সংবাদপত্রের কাজ মানুষের তথ্যশূন্যতা দূর করা। অথচ সংবাদপত্র বা সাংবাদিকতার জগৎ সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষিত লোকের ধারণাও এ ব্যাপারে প্রায় শূন্যের কোটায় বললে বেশি হবে না। এই তথ্যশূন্যতা দূর করতেই আমাদের কলম সৈনিকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। "পত্রিকার মানুষেরা" শিরোনামের এই লেখাটি লিখতে বসে পত্রিকার জগতের সাথে আমার জড়িত হওয়ার কথা মনে পড়েছে। সম্ভবত ৮৭/৮৮ সালের দিকে আমাদের লালখান বাজারস্থ 'ডেইজি প্রিন্টিং প্রেস' থেকে রূপম চক্রবর্ত্তীসহ 'দিনের পর দিন' মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে। প্রেস হতে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে কী কী প্রয়োজন এবং একটি পত্রিকায় কতজন মানুষ জড়িত থাকে কার কি ভূমিকা, সম্পাদক থেকে 'কম্পোজার' বা কম্পিউটারম্যান পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের শ্রম ও মেধার কীভাবে জোগান দিতে হয়। পরে একাধিক পত্রিকায় কাজ করেছি এবং লেখালেখি করেছি এখনও করছি। পরে মো: জামাল উদ্দিনের সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে প্রথম চার রঙের ম্যাগাজিন চট্টলচিত্র প্রকাশে আমি নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি পত্রিকার জগতটা খুবই কঠিন ও বৈচিত্র্যময়। বর্তমানেও আমি নিজেই একটি ভিন্নধারার 'সাপ্তাহিক সময়ের আলো পত্রিকা' নামে পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি তাতে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে পত্রিকা পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাত পাচ্ছি।সংবাদপত্র  নিয়ে লেখতে গিয়ে আসলে
সত্যি বলতে কি সংবাদপত্র তথা পত্রিকার মানুষদের বিষয়ে রয়েগেছে অজ্ঞাত এক জগত হিসেবে। খুব ধারে কাছের মানুষ ছাড়া অনেকেই অবগত নন এর কাঠামো সম্পর্কে। জানেন না কী করে রোজ সকালে অথবা সপ্তাহের শেষে প্রকাশিত হয় একটি সংবাদপত্র। মিডিয়ার এই জগতটি আজো অনেক পাঠকের কাছে রয়ে গেছে অজ্ঞাত। অনেকেই সঠিক জানেন না এই প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো। কারা কোন পদে থেকে কীভাবে কাজ করেন। দেশের বিভিন্ন শহর গ্রাম সফরের সময় বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে যে কথাবার্তা হয় সংবাদপত্র নিয়ে তাতে বুঝতে পারি তারা অনেকেই এ সম্পর্কিত তথ্যশূন্যতায় রয়েছেন। এমনকি গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মরত কোন কোন সংবাদকর্মী যারা নতুন এসেছেন এই পেশায় তাদেরও অস্পষ্ট কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
সংবাদপত্র এবং এর কাঠামো সাংবাদিকতা, এসব বিষয়ে কয়েকটি বই রয়েছে। সেগুলো কোন পত্রিকার পাঠক পড়ে না। যার দরুন পত্রিকার মানুষদের সম্পর্কে পাঠকদের কাছে সঠিক ধারণা নেই। আমাদের দেশে শতভাগ মানুষদের ৮০ ভাগ মানুষেরা মনে করেন ক্যামেরা নিয়ে যারা বাইরে ঘুরে বেড়ায় তারাই একমাত্র পত্রিকার
 
লোক। একটি পত্রিকার সম্পাদক, সহসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, চিফ রিপোর্টার, স্টাফ রিপোর্টার, প্রুফম্যান এবং কম্পিউটারম্যান ও পত্রিকা ছাপানোর মেশিন ম্যানসহ কত বৈচিত্র্যময় মানুষ রয়েছে তা কিন্তু অবগত নয়।
খুব সহজ করে বলতে চেয়েছি একটি খবরের কাগজ প্রকাশের নেপথ্যে থাকে কতো মানুষের মেধা-শ্রম-ঘাম। খবর দেয় খবরের কাগজ। কিন্তু শুধু কী খবর দেয়? তা- নয়। বিশ্বের কোথায় কী ঘটলো জানতে পাচ্ছেন। সংবাদপত্রের কাঠামো বিরাট। এই শিল্পের সাথে যারা জড়িত, পত্রিকার মালিক,
 
সম্পাদক, প্রকাশক থেকে শুরু করে আপনার দোড়গোড়ায় হাজির হওয়ার হকার। এদের প্রত্যেকের শ্রমের ফসল হয়ে আপনার হাত পর্যন্ত পৌঁছায় একটি পত্রিকা। সাধারণভাবে এমন হালকা ধারণা পোষণ করা হয়ে থাকে যে সাংবাদিকরা বের করেন একটি খবরের কাগজ। এমন বলা হয়ে থাকে সবাই যখন মধ্যরাতের ঘুমে, সাংবাদিক তখন লিখে যাচ্ছেন। 'আমি ব্যক্তিগতভাবে বলছি আমি প্রতিরাতে কোনও না কোন একটি লেখা লেখে প্রায় শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে যাই বিছানায়'। দেশ দুনিয়ার খবর ব্যাপারটি পুরোপুরি সত্য নয়। ঐ সময়টি যদি মধ্যরাতই ধরি, জেগে থাকতে হয় আরো কয়েকটি পদের কর্মীকে। জেগে থাকতে হয় প্লেট মেকার, মেশিনম্যান, বাইন্ডার, ডেসপ্যাচার এমনি আরো অনেককে। এদের একজন কাজে না থাকলে পত্রিকা ছাপানো থেকে বাজারজাতকরণ পুরো প্রক্রিয়াটাই হয়ে পড়বে ব্যাহত। আসলে একটি পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারটি এমন একটি টিমওয়ার্ক যাতে গোটা শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন স্তরের কর্মীকে সময় ও প্রক্রিয়াগতভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। এখানে একজন কর্তব্যে গাফেলতি ফাঁকি কিংবা অনুপস্থিতিতে বরবাদ করে দিতে পারে সম্পাদনা প্রকাশনা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ ব্যাপারটি। কল্পনা করুন যে বহুজনের দিনরাত কাজের ফসল হিসেবে ভোরবেলা ছাপা হয়ে বেরুলো। কয়েক হাজার খবরের কাগজ। কিন্তু ছাপাখানা বাইন্ডাররা হাজির নেই কেউ। কী দাঁড়াবে অবস্থাটা? নিশ্চিতই মেইল ফেল করবে। প্রচুর টাকা ক্ষতি পোহাতে হবে পত্রিকার মালিককে। আর গাদা গাদা কাগজগুলো অবিক্রিতই পড়ে থাকবে। যদি কোন কারণে বেঁকে থাকে হকার্স সমিতি কিংবা বিভিন্ন পর্যায়ের হকারের দল। আপনার বাসা অফিস কিংবা দোকানে কাগজ পৌঁছাবে কে? সেক্ষেত্রে মালিকের অর্থ আর সাংবাদিক কর্মচারীর মেধাশ্রম ব্যয় করে প্রকাশিত একটি পত্রিকা ছাপার অক্ষরে
ঠিকঠাক বেরিয়ে এলেও পাঠকের হাত পর্যন্ত তা যাবেনা। আসলে পত্রিকা একটি শিল্পপণ্য যার উৎপাদন ও পরবর্তী পর্যায়ে বিপণন ব্যবস্থার পেছনে কেবল সাংবাদিকরা নন, জড়িত রয়েছেন আরো বহু মানুষ। পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদক প্রকাশকের নাম ছাপা হয়। কোন একটা স্টোরি সাংবাদিকের নামে ছাপা হয়। উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ নামে ছাপা হয়। সে কারণে পাঠক সাধারণত এদেরই জানেন। কিন্তু অজ্ঞাত থেকে যায় আরো বহু মানুষের কর্ম প্রক্রিয়া। পাঠক জানেনা কে বা কারা দেশ বিদেশের খবরগুলো সম্পাদনা করছেন, কারা লিখছেন সম্পাদকীয়,
 
সমকথা ১৫ চিঠিপত্রগুলো কে কাটছাঁট করে ছাপাতে দিচ্ছেন। একইভাবে গ্রুফ রিডার, কম্পিউটার অপারেটর থেকে শুরু করে একজন পিওন, সার্কুলেশন এডভার্টাইজমেন্ট, একাউন্টস, প্রেস সেকশনের কয়েকশত কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে যান পাঠকের জানার বাইরে।
একটি সংবাদপত্রের সর্বোচ্চ পদের মানুষ হলেন সম্পাদক। তিনি সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সম্মানিত। সারা বিশ্বে এই পদটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। রোজকার কাগজের প্রিন্টার্স লাইনে এর নাম দেখেন পাঠকরা। কিন্তু একটি পত্রিকা প্রকাশের জন্যে কাড়িকাড়ি অর্থ জোগান দেন যিনি, মালিক সংখ্যায় এক বা একাধিক হতে পারেন, তারা কিন্তু পাঠক সমাজে অতোটা আলোচিত নন। সমাজে যারা আর দশজনের খবর রাখেন, তারা ছাড়া অধিকাংশ পাঠকের কাছে অজ্ঞাত থেকে যায় যে মূলত কার বা কাদের টাকায় পত্রিকা ছাপা হচ্ছে। একটি পত্রিকা প্রকাশের পুঁজি একটা বড় ব্যাপার। বলতে গেলে প্রধান ব্যাপার। কিন্তু সেটি থাকে আড়ালে। পত্রিকার মানুষদের কথার সাথে সাথে পত্রিকা প্রকাশের সংক্ষিপ্ত ধারণা তুলে ধরছি। উপমহাদেশে সংবাদপত্র শিল্প নতুন। বাংলাদেশে নতুনতর। বাংলাদেশে সংবাদপত্রের এই সেদিনের ঘটনা। ১৭৮০ সালে ২৯ জানুয়ারি হিকির গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের সূচনা হয়। ১৮৪৭ সালের আগস্টের 'রংপুর বার্তাবহ' প্রকাশের মাধ্যমে তা পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট বৃটিশরা ভারত ত্যাগ কালে নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য কোন সংবাদপত্র, বিশেষ করে দৈনিক সংবাদপত্র ছিলনা। বৃটিশ যুগে তৎকালীন পূর্ব বাংলা অঞ্চল থেকে ৯টি দৈনিকসহ চার শতাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হলেও বৃটিশের ভারত ত্যাগ কালে তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হত না। ঐসময় দু'টি দৈনিক পত্রিকা (দৈনিক পাঞ্চজন্য ও দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান) প্রকাশিত হত চট্টগ্রাম থেকে।
আজকের বিশ্বে সংবাদপত্র একটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে সংবাদপত্র আজো শিল্পরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অপরদিকে সংবাদকর্মী নামে পরিচিত পত্রিকার মানুষেরা তাদের মৌলিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কথাটি আবারও বলছি পত্রিকায় শুধু সাংবাদিকরা কাজ করে না। অনেকেই কাজ করেন। তবে সাধারণ মানুষেরা মনে করেন সাংবাদিক ব্যতীত অন্য কেউ সংবাদপত্রের কাজ করে না। অনেক সাধারণ মানুষ বুঝেন বা চেনেন সাংবাদিক বলতে রিপোর্টার কিংবা গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া ফটো গ্রাফারদের। যদিও পত্রিকার মালিক-সম্পাদক থেকে শুরু করে বিট-পিয়ন পর্যন্ত অনেক মানুষের অনেক কাজের ফল হিসেবে আমরা একখানা পত্রিকা হাতে পাই। এদের সবাইকে নিয়ে পত্রিকার মানুষেরা। তবে এখন পত্রিকা প্রকাশে অনেক সহজ হয়েছ তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকতার কারণে, হাতের নাগলে সব কিছু পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি কৃত্রিম লেখক সাংবাদিক এর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে, লেখা চুরি, তথ্য চুরিসহ কতকিছুই যে অনলাইনের বদৌলতে হিসেবে গড়মিল হচ্ছে তা একজন নির্ভিক সংবাদ কর্মির জন্য সত্যিই দুঃসংবাদ। পত্রিকার মানুষেরা আগের মতো সুখে নেই, অনেকে পেশা পরিবর্তন করে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। পরিশেষে বলবো একটি পত্রিকা প্রকাশ বা একটি টেলিভিশনের সংবাদসহ নানানরকম আয়োজনের পিছনে অসংখ্য লোকের ভুমিকা থাকে আমরা তাদের মধ্যে ক'জনকে চিনি বা জানি, তারা খবরের কাগজের মানুষ হলেও তাদের অবদানের কথা আমি জানিনা।
তা জানার দরকার রয়েছে তাই সেই সব প্রতিভাবানদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচয় করে দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।  সাধারণ মানুষেরা মনে করেন যাারা গলায় ক্যামরা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং যার নামে সংবাদ প্রকাশ হয় শুধুমাত্র তাঁরাই সাংবাদিক অথবা সংবাদ কর্মি, কিন্তু এই সংবাদের সথে আরো অনেকে জড়িত তা সম্পুর্ন অজানা থেকে গেছে।  এখন কিন্তু অনলাইন সাংবাদিকতায় বেশি মানুষের প্রয়েজন হয়না, নিজে নিজে এককভাবে সব কিছু করতে পারে। বিগত সময়ের মতো আরো বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ। 
লেখকঃ সাংবাদিক, গবেষক,টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

এমএসএম / এমএসএম

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি

টেকসই উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

গাজায় যুদ্ধের নৃশংসতা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

বন্ধ হোক অপসাংবাদিকতা

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য হুমকি হতে পারে

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের সৌদি আরব

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন

জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা

গণতান্ত্রিক হতে হলে মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হয়