ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

"বিশ্ব মা দিবস" মায়েরা কতটুকু শান্তিতে আছেন


মো. কামাল উদ্দিন photo মো. কামাল উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২-৫-২০২৪ দুপুর ২:৫৯

পৃথিবীতে যতগুলো শব্দ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মধুর শব্দ মা। কবি কাদের নেওয়াজের ভাষায়-
" মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।"
কবি কাদের নেওয়াজ বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি এখন লিখতেন মা শব্দটি সন্তানদের কাছে আগের মতো মধুর শব্দ নেই, এখন তিতা হয়ে গেছে,  তিনি তিতা শব্দ বলে কবিতা লিখতেন। সেই আলোচনায় পরে যাবো--মা দিবস নিয়ে  বিভিন্ন ভাবে ইতিহাস রচিত হয়েছে, আজকের লেখাতে আমি কয়েকটি তথ্য তুলে ধরবো, তাতে তথ্যগত ভুল বা মিলা মিল থাকা না থাকা নিয়ে কথা আসতে পারে, লেখাটি আমার হলেও কিন্ত তথ্যগুলো আমার নয়, ইতিহাসের পাতা থেকে সংগ্রহকৃত তথ্য বিধায় কিছু গড়মিল থাকতে পারে তাতে আমি ক্ষমা প্রার্থী পাঠকের কাছে। আধুনিককালে মা দিবস উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে ও অ্যানা জারভিস। যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটির সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাদের।
‘ওগো মা তুমি শুধু মা/পৃথিবীতে নেই তুলনা।’ দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া গানের উল্লিখিত দুটি লাইনে মায়ের অতুলনীয় অবস্থান তুলে ধরেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও খালিদ হাসান মিলু। যুগে যুগে তাদের মতো অনেক শিল্পী গেয়েছেন মায়ের স্তুতি। সাহিত্যিক, দার্শনিকের লেখনী, বাণীতে উঠে এসেছে মায়ের অবস্থান। সে পরম্পরা রয়েছে; থাকবে চিরকাল।
এ কারণে মায়েদের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনক্ষণ দরকার হয় না। মানুষ তবুও আনুষ্ঠানিকতা ভালোবাসে। যেকোনো বিষয় উদযাপনকে স্থায়ী করতে বেছে নেয় বিশেষ কোনো দিন। সে জায়গা থেকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয় ‘মা দিবস’। বিশেষ এ দিনে মা ও মাতৃস্থানীয়দের প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় দেশে দেশে। যদিও সেটি একই সময়ে হয় না।
সময় ও দিবসকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকমের 
প্রতিবেদনে জানানো হয়,  (পয়লা মে) মা দিবস উদযাপন করে চার দেশ।
গত বছরের ৮ মার্চ দিবসটি উদযাপন হয় তিনটি দেশে। অন্যদিকে ১০ মে দুটি এবং ২৯ মে ছয়টি দেশ উদযাপন করেছে মা দিবস।
কীভাবে হয় উদযাপন
দেশ ও সংস্কৃতিভেদে মা দিবস উদযাপনে ভিন্নতা দেখা যায়। দিনটিতে নানা বয়সী মানুষ মা ও মাতৃস্থানীয়দের স্মরণ করেন। মাতৃস্থানীয় বলতে বোঝায় সৎমা, শাশুড়ি কিংবা মাতৃতুল্য কোনো অভিভাবক। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে পশ্চিমা দেশগুলোতে কার্ড, ফুল বা কেক উপহারের প্রচলন আছে। বাংলাদেশেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে ।
পারিবারিক জমায়েত বা মায়েদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন দেশে বা সংস্কৃতিতে রয়েছে। এর বাইরে দিবসে মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে কিংবা বাইরে নাস্তা, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়ে থাকেন অনেকে। যেসব সন্তান দূরে থাকেন, তারা মা বা মাতৃতুল্যদের ফোন কল করে থাকেন।
মা দিবসকে কেন্দ্র করে কবিতা ও খুদেবার্তার প্রচলনও দীর্ঘদিনের। এর বাইরে চকলেট, স্বর্ণালংকার, দরকারি সামগ্রী, জামা-কাপড়, শখের জিনিস, হাতে তৈরি সামগ্রী উপহার দেয়ার বিষয়টিও নতুন নয়। কোন দেশে কখন মা দিবস অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে মের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপন হয়। যুক্তরাজ্যে দিবসটি উদযাপন হয় ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগে। এসব দেশে রোববার সাধারণত স্কুল কিংবা কর্মস্থল খোলা থাকে না। কিছু কিছু 
দেশে মা দিবসে ছুটি থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোস্টারিকায় ১৫ আগস্ট মা দিবস উদযাপন করা হয়। ওই দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে। জর্জিয়ায় ৩ মার্চ, সামোয়ায় মের দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং থাইল্যান্ডে ১২ আগস্ট মা দিবসের ছুটি থাকে। দিনগুলোতে এসব দেশের রেস্তোরাঁয় ভিড় লেগে থাকে। দিবসের শুরু যখন
কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকম জানায়, প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় স্রষ্টাদের জননী রিয়ার স্মরণে উদযাপন হওয়া বসন্ত উৎসব থেকে মা দিবসের সূচনা। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে ‘মাদারিং সানডে’ নামের একটি দিবস উদযাপন হয়। ওই দিবসে
 দীক্ষা নেয়া গির্জায় যেত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। বর্তমান সময়ে দিনটিতে মাতৃত্বও উদযাপন করা হয়। আধুনিক
কালে মা দিবস উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে ও অ্যানা জারভিস। যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটির সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাদের।
১৮৭০ সালের দিকে জুলিয়া ওয়ার্ড প্রতি বছর মা দিবস উদযাপনের ডাক দেন। তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ বছর বোস্টনে দিবসটি উদযাপন হয়। এর পর আর সেটি চালু থাকেনি।
অন্য কিছু সূত্র জানিয়েছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের আলবিয়নে মা দিবসের প্রচলন করেন জুলিয়েট ক্যালহুন ব্লেকলি। ছেলেরা প্রতি বছর তাকে সম্মান জানাতেন এবং অন্যদেরও মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে বলতেন। ১৯০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে মা অ্যান জারভিসের স্মরণে ব্যক্তিগত পরিসরে মা দিবস উদযাপন করেন অ্যানা জারভিস। ১৯০৮ সালে চার্চে একটি আয়োজনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। সে আয়োজনে যুক্ত হয় ৪০৭ শিশু ও তাদের মায়েরা। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সংস্থার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য দেশে উদযাপন ছড়িয়ে দেয়া। সে বছর থেকে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে মা দিবস। অন্য আলোচনাটা দেখি মা দিবস কেমন করে আসছে। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক মা দিবস। সে হিসাবে এবছরও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হবে। যে মহীয়সী নারীর কল্যাণে এ দিবসটির সূচনা হয় তিনি হলেন অ্যানা মেরি জারভিস। আমাদের এবারের আয়োজন মা দিবসের প্রবর্তক এ মহীয়সী নারীকে নিয়েই। অ্যানা জারভিস ১৮৬৪ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়ার ওয়েবস্টারে জন্মগ্রহণ করেন। অ্যানা ছিলেন ১১ ভাইবোনের মধ্যে নবম। তার মার খুব ইচ্ছা ছিল জীবিত এবং মৃত সব মায়েদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা। এজন্য অ্যানার মা নিজেই মাদার ফ্রেন্ডশিপ ডে প্রচলনের ব্যাপারে উদ্যোগী ছিলেন। ১৮৬৫ সালে অ্যানা জারভিসের মা প্রুন্টিটাউনের কোর্ট হাউসে মাদার ফ্রেন্ডশিপ ডে প্রচলন করেন। এবং কয়েক বছরের মধ্যে এটা বার্ষিক এক উৎসবে পরিণত হয়। ১৯০২ সালে অ্যানার বাবা লিলি ফিলাডেফিয়াতে তার ভাই ক্লডের সঙ্গে থাকার জন্য চলে যান। এর কিছুদিন পরই অ্যানা জারভিসের মাও মারা যান। ১৯০৫ সালে ৯ মে তার মা মিসেস জারভিস মারা গেলে অ্যানা জারভিস সিদ্ধান্ত নেন যে মার সম্মানে কিছু করবেন যা মায়েদের সম্মান বৃদ্ধিতে কাজ করবে। পরিশ্রমী এবং শিল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তেরাষ্ট্রের অধিকাংশ পূর্ণবয়স্ক সন্তানই তাদের মাতা পিতার প্রতি বেশ অবহেলা প্রদর্শন করে। এটা অ্যানা লক্ষ করেছেন তখন থেকেই। তিনি ঠিক করেন জাতীয় পর্যায়ে একটি মা দিবসের সূচনা করে মায়েদের প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা- ভালোবাসার চর্চাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবেন। জাতীয় মা দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যানা প্রচারণা চালাতে শুরু করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৭ সালের ১২মে তার মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অ্যানা তার এলাকার অ্যান্ড্রুজ মেথডিস্ট চার্চ এক ছোট স্মরণসভার আয়োজন করেন। সে মুহূর্ত থেকেই অ্যানার সাধনা হয় মা দিবসকে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় আরো বড় আকারে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের সুবাদে এর পরের বছর থেকে ফিলাডেল ফিয়াতে মা দিবস পালিত হতে শুরু করে । এই সময়ে অ্যানা এবং তার সমর্থকরা মন্ত্রী, ধর্ম প্রচারক, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদের কাছে মা দিবস প্রতিষ্ঠার পক্ষে চিঠি লিখতে শুরু করেন। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সকলকে অনুরোধ করেন, যেন তারা তাদের অবস্থান থেকে দিবসটি চালু করার জন্য সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট হন। শেষ পর্যন্ত তার প্রচারণা সফল হয়। ১৯১১ সালে আমেরিকার প্রায় সবগুলো রাজ্যেই মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে ১৯১৪ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উণ্ড্রো উইলসন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দেন যে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হবে। আমেরিকা এবং মায়েদের জন্যে রবিবারকে উৎসর্গ করে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ্যানা সারাজীবন ধরে এমন একটি দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন যে দিন সবাই মা'কে সম্মান কররে এমন শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপন এমন একটা রূপ ধারণাকে কিন্তু দেখে তিনি দুঃখ পান। এ্যানা এমন একটি দিন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বয়া মানুষ আবেগ দিয়ে পালন করবে কিন্তু বাস্তবে সেটি মুনাফা লাভের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়। তাই মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাতকারে এ্যানা শেষ পর্যন্ত একথাও বলেন যে মা দিবস প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি সত্যিই দুঃখিত। এ্যানা জারভিস ১৯৪৮ সালের ২৪ নভেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব মা দিবসের কথা লিখতে আমার মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। মায়ের সাত কন্যা সন্তানের পর আমার জন্ম, মা আমাকে নিয়ে কত কষ্ট করেছেন তা বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবেনা। আমার মা আমার ছোট ভাই আকতার  নিখোঁজ হওয়ার কারণে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০০১ সালের ২ আগস্ট আমাদেরকে ছেড়ে চিরতরে চলে যান। মায়ের ভালোবাসা আদর স্নেহ পৃথিবীর অন্য কেউ পূরণ করতে পারবে না। মা দিবসকে সামনে রেখে আমার মাসই পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি সম্মান জ্ঞ্যাপন করছি। পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের মায়ের কিছু কথা তুলে ধরছি। পৃথিবীতে যারা খ্যাতিমান হয়েছেন তাদের অধিকাংশই জীবনে উন্নতির জন্য মায়ের ঋণের স্বীকার করেছেন অকুণ্ঠচিত্তে। মায়ের শাসন আর সোহাগ তাদের চলার পথকে মসৃণ করেছে। এখানে তাদের উদ্দেশে বলা মায়েদের দৈনন্দিন কিছু কথা তুলে ধরা হলো নেপোলিয়ানের মা: নেপোলিয়ান তুমি যদি তোমার জ্যাকেটের ভেতরে তোমার রেজাল্ট কার্ড লুকিয়ে রাখো, তাহলে তোমার হাতগুলো সেখান থেকে বের করে তার প্রমাণ দাও। আব্রাহাম লিনকনের মা: অ্যাব আবার তুমি স্টোভ পাইপ টুপি পরেছ? তুমি কি অন্য বাচ্চাদের মতো বেজবল টুপি পরতে পারনা? ১৪৯২ সালে কলম্বাসের  আমেরিকা আবিষ্কার করে আসার পর মা বলেছিলো  'তুমি কি জিনিস আবিষ্কার করেছ সেটা আমি জানতে চাইনা ক্রিস্টোফার। কিন্তু তুমি তো আমাকে চিঠি লিখতে পারতে। টমাস এ্যাডসনের মা: 'তোমার ইলেক্ট্রিক বাল্ব আবিষ্কারের জন্য আমি গর্বিত, টমাস।
কিন্তু এখন লাইট বন্ধ করে ঘুমাতে যাও। পল বিভারের মা: তোমার কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা সে সম্পর্কে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মনে রেখো মাঝ রাতের পরেই তোমার জন্য কার্ফ। আব্রাহাম লিংকন: আমি যা হয়েছি বা হতে চাই তার সবটুকুর জন্যই আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী। আমার মায়ের প্রার্থনা
গুলো সবসময়ই আমার সঙ্গে ছিল। জর্জ ওয়াশিংটন: আমি যত ছবিতে মহিলাদের দেখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আমার মা। আমার সব কিছুর জন্য আমি মায়ের কাছে ঋণী। বালজাক: মায়ের হৃদয় হচ্ছে এক গভীর আশ্রয়,
যেখানে আপনি সহজেই খুঁজে
পাবেন ক্ষমার সুশীতল ছায়া।
এন্ড্রু জ্যাকসন: মায়ের স্মৃতি আর শিক্ষা এই পুঁজিটুকু নিয়ে আমি জীবন শুরু করেছিলাম। সেটুকু নিয়ে এত দূর এসেছি। মার্ক টোয়েন: মা কৃশকায় এবং ছোটখাটো হলেও তার হৃদয়টা বেশ বড়। এতটাই বড় যে সবার দুঃখ এবং আনন্দ সেখানে খুব সহজে জায়গা করে নিতে পারে। মা দিবস প্রতিটি মায়ের ঘরে ঘরে পৌছাক মায়ের ভালোবাসা প্রতিটি সন্তানের চলার পথের সাথী হোক। এখন কিন্তু সন্তানরা নিজের মাকে মা ডাকেনা মা ডাকে বউয়ের মাকে। মায়েরা এখন পরিবারের বোঝা হয়ে কোনভাবেই জীবন অতিবাহিত করেন,  মা এখন সব চেয়ে অবহেলিত একটি প্রাণীর নাম৷ ভালো থাকা, ভালো খাওয়ার পায়না, কিছু মা হয়তো ভাগ্যোর জোরে মায়ের অধিকার পাইলেও বেশি ভাগ মা বাবা চাকর বা চাকরানির মতো ছেলের পরিবারে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।  না হয় চলে যাইতে হবে বৃদ্ধাশ্রামে!! যে মা দশ মাস পেটে রেখে সন্তান জন্ম দেয়, আবার জন্মের পর সন্তানকে মানুষ করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেন, বাবা জীবনের অর্জিত সব কিছু সন্তানের জন্য বিলিয়েদেন সেই মা বাবা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে নগন্য প্রাণীর মতো পরিচিত বিহীন মানুষ হিসেবে দুঃখের মাঝে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছেলের বউয়ের অত্যাচার সহ্য করে জীবনের ইতি টানতে হয়।
আমাদের সবাই কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি, আমাদের মহান আল্লাহ মায়ের সম্পর্কে কি বলেছেন তা সংলিপ্ত আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করি - **----ইসলাম মা-বাবাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তিনি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিরক্তিসূচক কিছু বল না এবং তাদের ভর্ৎসনা কর না। তাদের সঙ্গে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৩)।
মা-বাবার প্রতি সন্তানদের বিনয়াবনত থাকার এবং মা-বাবার জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বল হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৪)।
সন্তানকে জন্মদান থেকে শুরু করে লালন-পালন করে বড় করা পর্যন্ত কষ্টগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে তার গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল ত্রিশ মাস, ক্রমে সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হওয়ার পর বলে হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন; আমার জন্য আমার সন্তানসন্ততিদের সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সূরা আহক্বাফ ১৫)।
কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহতায়ালা বারবার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কোনো বিষয়ে অংশীদার স্থাপন কর না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।’ (সূরা নিসা ৩৬)।
রাসূল (সা.) মা-বাবার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা হকদার ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন, তারপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার পিতা।’ (সহিহ মুসলিম ৬৩৯৪)। রাসূল (সা.) জিহাদে অংশগ্রহণ করার চেয়ে মা-বাবার খেদমতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবি (সা.)-এর কাছে এলো। এরপর সে তাঁর কাছে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের উভয়ের (খেদমত করে) সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর।’ (সহিহ মুসলিম ৬৩৯৮)।
বৃদ্ধাবস্থায় মা-বাবার খেদমত করার ফজিলত যে কত বেশি তা উপলব্ধি করা যায় রাসূলের এ হাদিস থেকে। হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, কোনো ব্যক্তির, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (সহিহ মুসলিম ৬৪০৪)। সন্তানের জন্য মা-বাবা আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নিয়ামত। প্রতিটি সন্তানের উচিত হবে মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, মা-বাবার খেদমত করে জান্নাতের যাওয়ার পথ সুগম করার চেষ্টা করা। মা-বাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান-মর্যাদার আসনে আসীন করে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের সঙ্গে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা।
আল্লাহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও আমরা মায়ের প্রতি সম্মান না জানিয়ে মাকে প্রতিনিয়ত মানসিক ভাবে নির্যাতন করছি। আজ সেই নির্যাতিত অসহায় মাদেরকে নিয়ে আমরা মা দিবস পালন করছি। তবে একটুও হলেও সন্তান পাবে মায়েরা অন্ততপক্ষে একদিনের জন্য হলেও অমানুষ সন্তানরা মাকে মা বলে সম্মান জানানোর জন্য। 
 কবি মাজু ইব্রাহীমের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে লেখা কবিতা দিয়ে শেষ করছি-- মায়ের দ্বারে কখনো কেহ!
দিও নাকো জ্বালা,-
তুমিই ছিলে বাল্য কালে
তাহার গলের মালা।
দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভে
কাটলো তোমার দিন,
কেমন করে শুধবে বলো?
তাহার এ ঋণ।
রক্তের শিরায় শিরায় বহমান-
সহস্র কষ্টের গন্ধ,
তোমার কষ্ট মুছতে জননী
আজ হয়েছে অন্ধ।
কত আদর যত্নে তোমার
কেটেছে শৈশব বেলা,-
যৌবনে এসে কেন তাদের
করো অবহেলা।
বাধক্য কালে কেন তারা
অসহায়-নিরাশ্রয়,-
তুমি কি পারো না দিতে-
তোমার হৃদে আশ্রয়।
তুমিও জানিয়ে দাও সমাজে
তোমাতে নাই ভ্রম,-
মাতা-পিতার ঠিকানা বক্ষ মাঝে!
নয় তো বৃদ্ধাশ্রম।
লেখকঃ সাংবাদিক, গবেষক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব- চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া