৮ লাখ কোটি টাকা"র বাজেট নিয়ে কিছু কথা

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবছর ৬ই জুন জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এই বাজেটের উপর আমাদের সাধারণ মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে,১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় এসে দেশকে একটি উন্নয়নের দিকে ধাবিত করেছিল, যিনি এই দেশকে পৃথিবীর অসংখ্য দেশকে পিছনে ফেলে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর হতে ধারাবাহিক ভাবে উন্নয়ন করে আসছেন, তিনি প্রতিবছরের মতো ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করেছে তাতে আমরা মনে করি বাজেটটি গতানুগতিক বাজেট নয়, এই বাজেট যোগোপযোগী বাজেট বলে মনে করছি, শেখ হাসিনা কতৃক ঘোষিত বাজেট নিশ্চয় সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকবে। তা নিয়ে পর্যালোচনা করে লিখবো ইনশাআল্লাহ। বাজেট কি, এবং বাজেটের ইতিহাস: সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিবর্তন বাজেটের
ইতিহাস মানব সভ্যতার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ভাবে বাজেট ব্যবহৃত হয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকালের বাজেটমেসোপটেমিয়া এবং মিশর: প্রাচীন
মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে সরকারি খরচ এবং কর সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক বাজেটিং ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল। ফারাওরা কর আদায় এবং জনকল্যাণে ব্যয়ের হিসাব রাখতেন। এই সময়ের বাজেট ছিল মূলত কৃষিজ পণ্য এবং শ্রমের বিনিময়ে।
রোমান সাম্রাজ্য:
রোমান সাম্রাজ্যে সামরিক ব্যয়, জনকল্যাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সুসংহত বাজেট ব্যবস্থা ছিল। তারা কর আদায়ের জন্য প্রাথমিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করে।
মধ্যযুগের বাজেট
ইউরোপ: মধ্যযুগে
ইউরোপের রাজা এবং সম্রাটরা সাম্রাজ্যের পরিচালনার জন্য বাজেট প্রস্তুত করতেন। এটি মূলত সামরিক ব্যয় এবং রাজকীয় খরচের জন্য ব্যবহার হতো। এই সময়ে বাজেট ব্যবস্থা ছিল সীমিত এবং কেবল রাজকীয় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযোজ্য। আধুনিক যুগের বাজেট ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দী:
আধুনিক বাজেট ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীতে। ইংল্যান্ডে ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে বাজেট ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, যেখানে সংসদ রাজকোষের আয়-ব্যয় নির্ধারণ করত।১৮শ শতাব্দী:
অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক তত্ত্ব এবং শিল্প বিপ্লবের ফলে ১৮শ শতাব্দীতে বাজেটিংয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন দেশের সরকার জনগণের কল্যাণে বাজেট প্রণয়ন শুরু করে। আধুনিক বাজেটিং ব্যবস্থা ১৯শ এবং ২০শ শতাব্দী: ১৯শ
শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ২০শ শতাব্দীর শুরুতে বিভিন্ন দেশ বাজেটিং পদ্ধতি প্রণয়ন করে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২১ সালে "বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং অ্যাক্ট" পাস হয়, যা ফেডারেল বাজেট প্রণয়নের ভিত্তি তৈরি করে।
বিংশ শতাব্দী:
বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাজেট ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেট প্রণয়ন করে। এই সময়ে বাজেট ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান সময়ের বাজেট
বর্তমান সময়ে বাজেটের ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি সুসংগঠিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও উন্নত বাজেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দ্রুততা এবং নির্ভুলতা এনেছে। উপসংহার
বাজেটের ইতিহাস মানব সভ্যতার অর্থনৈতিক বিকাশ এবং ব্যবস্থাপনার একটি ধারাবাহিক বিবর্তনের কাহিনী। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বাজেট অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের একটি মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেন তা একটু আলোচনা করার দরকার মনে করছি।---
বাজেট: অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার মূল ভিত্তি
বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যা ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। এটি আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে পরিচালিত হয় এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গঠনে সহায়তা করে।
বাজেটের মূল উপাদান
১.আয়:বাজেটের প্রথম এবং প্রধান উপাদান হলো আয়। এটি বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থের সমষ্টি, যেমন বেতন, ব্যবসার লাভ, বিনিয়োগের আয় ইত্যাদি২.ব্যয়:বাজেটের দ্বিতীয় প্রধান উপাদান হলো ব্যয়। এটি বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয়ের হিসাব, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি।
৩.সঞ্চয়: আয় এবং ব্যয়ের পার্থক্য থেকে সঞ্চয় নির্ধারিত হয়। এটি ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত খরচ বা বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত অর্থ।
বাজেটের ধরণ
১.ব্যক্তিগত বাজেট: একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আয়ের এবং ব্যয়ের হিসাব যা তাকে আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
২.পারিবারিক বাজেট:একটি পরিবারের মোট আয়ের এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা, যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩.ব্যবসায়িক বাজেট:একটি ব্যবসায়ের আয়ের এবং ব্যয়ের হিসাব যা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪.জাতীয় বাজেট: একটি দেশের সরকারের আয়ের এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং উন্নয়নে সহায়তা করে।
বাজেট তৈরির ধাপ
১.লক্ষ্য নির্ধারণ: প্রথমে আয়ের উৎস এবং ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করতে হবে।
২.তথ্য সংগ্রহ: পূর্ববর্তী আয়ের এবং ব্যয়ের হিসাব সংগ্রহ করতে হবে ৩.পরিকল্পনা:প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের আয়ের এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা করতে হবে।
৪.বাস্তবায়ন: পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫.পর্যালোচনা: নির্দিষ্ট সময় পর বাজেট পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।
বাজেটের গুরুত্ব
১.আর্থিক স্থিতিশীলতা: বাজেট আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বজায় রেখে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
২.লক্ষ্য অর্জন: বাজেট নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে, যেমন সঞ্চয় বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি।
৩.ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বাজেট অপ্রত্যাশিত আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করে। ৪.প্রতিবেদন:
বাজেট ব্যক্তি, পরিবার, বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করে। উপসংহার
বাজেট একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সরঞ্জাম, যা সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থিক সাফল্য অর্জনে সহায়ক। এটি আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে জীবনকে সুসংগঠিত করে এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করে।
বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ১৯৭২ সালে প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম সরকার গঠিত হলে দেশ পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বাজেট প্রণয়ন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের তথ্য:
উপস্থাপনার তারিখ: ৩০ জুন, ১৯৭২
অর্থমন্ত্রী: তাজউদ্দীন আহমদ মোট বাজেট: ৭৮৬ কোটি টাকা
প্রথম বাজেটের বৈশিষ্ট্য:
১.অর্থনৈতিক পুনর্গঠন: মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। কৃষি, শিল্প, এবং অবকাঠামু তৈরি করা হয়।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
Link Copied