ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

মানুষের মাঝেই সাধু শয়তান


মো. কামাল উদ্দিন photo মো. কামাল উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২-৬-২০২৪ দুপুর ২:৪৩

কেউ বা সাধু, কেউ বা শয়তান,
মুখ দেখে কিছুই বোঝা যায় না,মুখ দেখে
তুই করিস না ভুল, মুখটা যে আয়না।
মানুষ চেনা সত্যিই এক কঠিন কাজ। তবে কিছু লক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা থেকে মানুষকে চেনা যায়। নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো যা আপনাকে মানুষ চেনার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে:
কথাবার্তা ও আচরণ
মানুষের কথাবার্তা এবং আচরণ অনেক কিছু বলে দেয়। কেউ কেমনভাবে কথা বলে, কেমনভাবে অন্যদের সাথে আচরণ করে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলার ধরন, শব্দচয়ন, এবং ভদ্রতা—সবকিছু মিলিয়ে একজনের ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। দৃষ্টিভঙ্গি
কাউকে চেনার অন্যতম প্রধান উপায় হলো তার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা। একজন মানুষ কিভাবে জীবন, কাজ, এবং সম্পর্কের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে তা থেকে তার মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কার্যকলাপ
মানুষের কাজ এবং দায়িত্ববোধ অনেক কিছু প্রকাশ করে। যে ব্যক্তি প্রতিশ্রুতিশীল, সৎ, এবং কাজের প্রতি আন্তরিক, তাকে সহজেই বিশ্বাস করা যায়। অন্যদিকে, দায়িত্বহীনতা এবং অসততা একজনের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রতিক্রিয়া
কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে একজন কিভাবে প্রতিক্রিয়া করে তা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন সময়ে একজনের সহনশীলতা, মনোবল, এবং সমস্যার সমাধানে তার আগ্রহ তার প্রকৃত চরিত্রের পরিচয় দেয়। আচরণের ধারাবাহিকতা
একজন মানুষের আচরণ এবং ব্যক্তিত্ব ধারাবাহিক কিনা তা লক্ষ্য করা দরকার। একজন সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য মানুষ সবসময়ই তার নীতি এবং মূল্যবোধের প্রতি অবিচল থাকে।
মূল্যবোধ ও নীতি
কোনো ব্যক্তির মূল্যবোধ এবং নীতি তাকে সঠিকভাবে চেনার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তার জীবনের মূলনীতি, নৈতিকতা, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তার প্রকৃত চেহারা তুলে ধরে।
বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মান যে কোনো
সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস এবং
পারস্পরিক সম্মান। একজনকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে চেনার জন্য, তার সাথে সময় কাটানো এবং তার প্রতি বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শন করা দরকার। মানুষ
চেনা সহজ নয়, তবে এই লক্ষণগুলোর মাধ্যমে একজনের প্রকৃত চরিত্র বোঝা সম্ভব। মানুষ চেনার প্রক্রিয়ায় সময় লাগে, কিন্তু সঠিক মনোযোগ এবং পর্যবেক্ষণ আপনাকে সহায়ক হতে পারে।মানুষের
মধ্যে সাধু ও শয়তান, এই দুই বিপরীতমুখী চরিত্রের সহাবস্থান যেন মানবজীবনের এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে এক সাধু এবং এক শয়তান। এই দুই সত্তার সংঘাতেই গড়ে ওঠে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সিদ্ধান্ত।
সাধুর সত্তা সাধুর সত্তা হলো আমাদের অন্তরের সেই অংশ, যা আমাদের ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি আমাদের মমত্ববোধ, সহানুভূতি, ভালোবাসা, এবং সেবার প্রতিচ্ছবি। যখন আমরা কোন দু:স্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করি, যখন আমরা কারো কষ্টে সহমর্মিতা প্রকাশ করি, তখন আমাদের সাধু সত্তা আমাদেরকে পরিচালিত করে। এই সত্তা আমাদের মনুষ্যত্বের পরিচয় দেয়, আমাদেরকে সৎ, উদার এবং দায়িত্বশীল করে তোলে।
শয়তানের সত্তা
অন্যদিকে, শয়তানের সত্তা আমাদের অন্তরের সেই অংশ, যা আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করে। এটি হলো আমাদের ক্রোধ, লোভ, অহংকার এবং বিদ্বেষের প্রতিচ্ছবি। যখন আমরা অন্যকে ক্ষতি করি, যখন আমরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যকে ব্যবহার করি, তখন আমাদের শয়তান সত্তা সক্রিয় হয়। এই সত্তা আমাদের স্বার্থপর, নিষ্ঠুর এবং অসৎ করে তোলে। দুই সত্তার সংঘাত মানব
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সাধু ও শয়তানের এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি কর্মে আমরা এই দুই সত্তার মধ্যে কোনটিকে বেছে নেব তা আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। কখনো কখনো আমাদের শয়তান সত্তা জয়লাভ করে, আমরা ভুল পথে পা বাড়াই। আবার কখনো আমাদের সাধু সত্তা জয়লাভ করে, আমরা সঠিক পথে চলি।
মধ্যপথে স্থিতি
এই দুই বিপরীতমুখী সত্তার সংঘাত আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আমরা যখন শিখি আমাদের সাধু সত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে, তখনই আমরা সত্যিকারের মানুষ হতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের অন্তরের শয়তানকে পরাজিত করে সাধুকে জয়ী করা। এজন্য দরকার আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য্য, এবং নৈতিকতা।
মানুষের মধ্যে সাধু এবং শয়তানের সহাবস্থান এক চিরন্তন সত্য। আমাদের কাজ হলো এই দুই সত্তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আমাদের জীবনের
প্রকৃত সৌন্দর্য এবং মানসিক শান্তির সূত্র।
উপরে বন্ধু ভিতরে ঘাতক—এই কথাটির মধ্যে লুকিয়ে আছে মানুষের চরিত্রের এক জটিল এবং বেদনাদায়ক সত্য। আমাদের জীবনে এমন অনেক মানুষ আসেন, যারা বাইরে থেকে বন্ধুর মতোই দেখায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা শত্রুর চেয়ে কম নয়। এই দ্বিমুখী চরিত্রের মানুষগুলো আমাদের বিশ্বাসকে ভেঙে দেয়, আমাদের ভালো
বাসাকে অমুল্য করে তুলে।বন্ধুর মুখোশ এই ধরনের মানুষদের মুখে সবসময় বন্ধুত্বের হাসি, মিষ্টি কথাবার্তা এবং সহানুভূতির ছোঁয়া থাকে। তারা আমাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার আশ্বাস দেয়, আমাদের বিশ্বাস অর্জন করে। তাদের আচরণে কোনো ফাঁকফোকর খুঁজে পাওয়া যায় না, মনে হয় তারা সত্যিকারের বন্ধু। ভিতরের ঘাতক
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। তাদের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক নিষ্ঠুর ঘাতক। তারা আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আমাদের ক্ষতি করে, আমাদের পিছনে ছুরি মারে। তাদের স্বার্থপরতা, হিংসা, এবং লোভ আমাদের জীবনে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তারা আমাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়, আমাদের মনোবল নষ্ট করে।
প্রতারণার ফল
এই ধরনের বন্ধুরা আমাদের জীবনে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। তাদের প্রতারণা আমাদের মানসিক
ভাবে দুর্বল করে দেয়, আমাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারাতে বাধ্য করে। আমরা যাদের প্রতি আস্থা রেখেছিলাম, তারা যখন আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন আমাদের হৃদয়ে এক গভীর বেদনার সৃষ্টি হয়। সতর্কতা এবং সচেতনতা
এ ধরনের মানুষের থেকে বাঁচতে আমাদের সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। আমাদেরকে সম্পর্কের গভীরতা এবং প্রকৃত সত্য বুঝতে শিখতে হবে। বিশ্বাসের সাথে সাথে আমাদের বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি সম্পর্কেই সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে আমরা এমন ধোঁকাবাজ মানুষদের থেকে রক্ষা পেতে পারি। উপরে
বন্ধু ভিতরে ঘাতক—এই বাস্তবতা আমাদের জীবনের অংশ, যা আমাদেরকে আরও বিচক্ষণ এবং সতর্ক হতে শেখায়। আমরা যদি সচেতন থাকি এবং সঠিকভাবে সম্পর্ক বিচার করতে শিখি, তাহলে আমরা এই ধরনের প্রতারণা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব।
লেখকঃ সাংবাদিক, গবেষক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব- চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম। 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া