ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

২৪ তম বর্ষে বশেমুরবিপ্রবি, আমাদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা


জুবায়েদ মোস্তফা  photo জুবায়েদ মোস্তফা
প্রকাশিত: ৬-৭-২০২৪ দুপুর ১১:২৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে ঢাকা বিভাগের অধীন গোপালগঞ্জ জেলায়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার অগ্রনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পণ্য ভূমিতে স্থাপিত হয় দক্ষিণ অঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে  বশেমুরবিপ্রবি নামেই সবার কাছে বেশ পরিচিত ও সমাদৃত। ইংরেজিতে যা BSMRSTU নামে মানুষ ধারণ করেছে। গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের মধুমতির তীর ঘেঁষা এই বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫ একর জমিতে বিস্তৃর্ণ।

নানা রকমের গাছপালার মেলা দেখা যায় বশেমুরবিপ্রবিতে।চির সবুজের দেশ খ্যাত বাংলাদেশের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় বশেমুরবিপ্রবির অববাহিকায়, সবুজের সমারোহে মুগ্ধতা বয়ে আনে মানব মনে। বিখ্যাত ক্যালিফর্নিয়া রোডের দুপাশ যেন সবুজে নুয়ে পড়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় এক চিলতে রোদের সোনালী আলো।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের শোভা বর্ধন করতে ভূমিকা পালন করছে। বনলতা সেন রোড স্বাক্ষী হয়ে আছে অনেক অসম্ভব সুন্দর ভালবাসার গল্পের।ভিসি মহোদয়ের বাসভবনের পাশ ঘেঁষে জন্ম নেওয়া  লেক পাড়ের প্রেমে মজে শিক্ষার্থীরা।মন খারাপের বিকালে লেক পাড়ের মনোরম দৃশ্য  ভালো করে দেয় বেখেয়ালি মন।অসংখ্য শিক্ষার্থীর মন খারাপের গল্প জমা আছে লেক পাড়ে। কৃত্রিম পাহাড়ের বিমুগ্ধ দর্শনার্থী এবং এডমিশন টেস্ট দিতে আসা শিক্ষার্থীরা।

 ২০০১ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হলেও  বিভিন্ন বাধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।নানা বাধা বিপত্তি ও চড়াই উতরাই পেরিয়ে ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকার এসআরও জারি করে। যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে একসময় এটি বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। 

প্রায় ৫৫ একর জমি নিয়ে বশেমুরবিপ্রবি যাত্রা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর একনেকে ৯১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়। অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে একাডেমিক ভবন,তিনটি ছাত্র হল, দুইটি ছাত্রী হল, প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, ক্যাফেটারিয়া, মসজিদ,মন্দির, ভিসির বাসভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য দুইটি ডরমিটরি, কর্মচারীদের কোয়ার্টার, পানি শোধনাগার, সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি। শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এসব অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

বর্তমানে ছাত্রদের জন্য স্বাধীনতা দিবস হল", "বিজয় দিবস হল" "শেখ রাসেল" নামে ০৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল" "শেখ রেহেনা"  নামে দুটি হলে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে একুশে ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরি ভবন করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দুইটি ডরমিটরি, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী কোয়ার্টার, লাইব্রেরি ভবন, উপাচার্যের বাসভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়া, সীমানা প্রাচীর এবং প্রশাসনিক ভবন রয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে। এখানে রয়েছে আধুনিক ল্যাবরেটরি এবং দ্রুত গতির ইন্টারনেট (ব্রডব্যান্ড ও ওয়াই ফাই) সংযোগের ব্যবস্থা। গড়ে তোলা হয়েছে ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ল্যাব।

 হাটি হাটি পা পা করে ২৪ তম বর্ষে পদার্পণ করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখনো নানা সমস্যা দানা বেঁধে আছে বশেমুরবিপ্রবিতে।তাই বশেমুরবিপ্রবিকে নিয়ে কিছু প্রত্যাশা ও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে এক বুক ভরা আশা পূঞ্জীভূত করে। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কল্পনার অন্তঃবিন্দু থাকে না। কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা যায় ক্যাম্পাসে পা রাখার পরে, প্রত্যাশিত অনেক কিছুই অনুপস্থিত থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী প্রাপ্তির ঝুলি একদম তলানিতে।ক্লাশ রুম সংকট এখনো কিছুটা রয়েছে, মাঝে মাঝেই দেখা যায় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মধ্যে ক্লাস রুম নিয়ে সমস্যা বাঁধে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লাস বিনির্মাণ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক ডিপার্টমেন্টেই রয়েছে শিক্ষক ঘাটতি। পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে অনেক ডিপার্টমেন্ট সঠিকভাবে তাদের একাডেমিক পাঠদান কর্মসূচি পালনে হিমশিম খাচ্ছে।বশেমুরবিপ্রবিতে অধ্যাপক যেন সোনার হরিণ। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে অন্তত একজন করে অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। মানসম্মত শিক্ষকের উপস্থিতি শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতে সহায়ক হবে। গবেষণা খাতে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি, একটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একাডেমিক কার্যক্রমী সীমাবদ্ধ থাকেনা, অবশ্যই গবেষণাটা অনেক বেশি জরুরী। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় বিষফোরা হলো হতাশা। হতাশার পিছনে অন্যতম কারণ সেশনজট নাম অভিশাপ। এই অভিশাপের কবলে রয়েছে বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, পারিবারিক চাপ, ও সেশন জোটের যাঁতাকলে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন হয়ে উঠছে বিপন্ন। তাই সেশনজট নিরসন করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সম্পর্ক অনেকটা দা কুমড়ার মতো।পান থেকে চুন খসলেই বেঁধে যায় তুমুল কান্ড। ছোট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসন না থাকায় বাইরে থাকতে হয়।হল বৃদ্ধি করার ফলে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বৃদ্ধিতে নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান বিচারে শিক্ষার দিকে নজরদারি বাড়ানো উচিত।এতে শিক্ষার্থীরা অচিরেই জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন জোরদার করতে টিএসসি স্থাপন করতে হবে। অডিটরিয়াম নির্মাণ করলে শিক্ষার্থীদের কপাল‌ থেকে মুছে যাবে চিন্তার ভাঁজ। তাছাড়া চলমান মেইন গেট এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দ্রুত সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির ওপর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে।

লেখকঃ জুবায়েদ মোস্তফা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব