ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

সিডিএ’র ২৭৭৯ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার


এসএম পিন্টু photo এসএম পিন্টু
প্রকাশিত: ৬-৭-২০২৪ বিকাল ৫:১০

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্মিত ২৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই খালের মুখে রেগুলেটরের ভিমে ফাটল, পানি প্রতিরোধের জন্য বসানো ব্লক ভেঙ্গে গেছে অনেক জায়গায়। সরেজমিনে দেখতে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। অর্থসংকটে স্থবিরতা বিরাজ করছে চলমান কাজের। তবে নিম্নমানের বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইছেন প্রকল্প পরিচালক রাজিব দাশ।  এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি প্রকল্পের কাজ দেখতে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ৪ জন মিস্ত্রীকে কাজ করতে দেখা গেছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রায় ৭০ জন লেবার নিয়ে চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে কাজে এসেছেন, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ না থাকায় বেশিরভাগ শ্রমিক কাজ করতে পারছেননা। সময়মত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে জানান শ্রমিকেরা। খালের মুখে রেগুলেটরের দেয়ালের কয়েকটি স্থানে ফাটল ও ব্লক ফেটে যাওয়া ও ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, প্রয়োজন মতো বালি ও সিমেন্ট মিশিয়ে কাজ করলে ফেটে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবেনা। বালির তুলনায় সিমেন্টের পরিমাণ কম হলেও ফেটে যেতে পারে এমনকি ভেঙ্গেও যেতে পারে। আবার বালি ও সিমেন্টের ভালো মন্দ আছে। মান এবং পরিমান দুটোর দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। এই প্রকল্পে সবকিছু ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলে এসব নিয়ে কথা বলা মানা আছে বলে এড়িয়ে যান তারা।  
স্থানীয়দের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কর্মকর্তা ও ঠিকাদার মিলে কাজে চরম অনিয়ম করছে। প্রকল্পে নতুন ও মানসম্পন্ন ইট এবং বালু ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করছে তার উল্টো। বিভিন্ন স্থান থেকে পুরোনো ভবনের পচাঁ ইট, পলেস্তরা, রাবিশ ও মাটি ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এসব নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে কাংখিত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে জনসাধারণ। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে বরাবরই উদাসিন। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তাদের সাথে ঠিকাদারের সাথে কোন অনৈতিক লেনদেনের সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। এদিকে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে এখন কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স।


এলাকাবাসী  জানান, ‘প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও ঠিকাদাররা যোগসাজশে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছে মূলত সরকারি অর্থ লোপাট করার জন্য। প্রকল্প নেওয়ার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় নির্ধারিত থাকে। সেই অনুসারে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয় না কেন? তিন থেকে চারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে কেন? এর কারণ হচ্ছে প্রকল্পে অনিয়ম আর হরিলুট করা।
প্রকল্প পরিচালক জানান, নানা জটিলতায় কাজ চলছে ধীরগতিতে, ২৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭০ একর জমি একোয়ার করছে সিডিএি। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ জমি সরকারি মালিকানাধিন বন্দরের। বাকী ২০ শতাংশ (৩৪ একর) জমির মধ্যে এই পর্যন্ত ৭০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকিগুলো একোয়ারের প্রক্রিয়া চলমান। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ কাম সড়ক প্রকল্পটির নিচের অংশে ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট প্রস্থ এবং ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতা হবে। ফলে এটি শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে কাজ করবে। 

এবিষয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ বলেন, ”নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। আমরা সবকিছু ল্যাবে টেস্টের পর ব্যবহারের  অনুমতি দিয়ে থাকি।” খালের মুখে রেগুলেটরের দেয়াল ফাটলের বিষয়ে তিনি বলেন, ”এগুলো স্ট্রাকচারাল কিছু নয়, সম্ভবত আস্তর ফেটে গেছে। আর ব্লক ফাটলের ব্যপারে তিনি বলেন, এগুলো পরিবহনের সময় কিছু ভাঙতে পারে।” পরিবহনের সময় হয়তো কোনা ভাঙতে পারে, কিন্তু এতবড় ফাটল (কিছু ফাটলের ভিডিও দেখিয়ে) হওয়ার পেছনে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার দায়ী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমরা যেহেতু এখনো কাজ বুঝে নেইনি তাই কোনকিছু নষ্টা হলে বুঝিয়ে দেয়ার আগে ঠিক করে দিবে”। ঠিক করে দেওয়াটা বড় বিষয় নয়, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হলে কিছুদিন পর আবারো ভাঙবে। তারা কতবার ঠিক করে দিবে জানতে চাইলে তিনি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। অর্থসংকটের ব্যপারে তিনি বলেন, অর্থের কোন সংকট নেই, তবে আমরা কাজের গতি অনুযায়ী আস্তে আস্তে অর্থ ছাড় দিচ্ছি।  
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শেষ করার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন গেছে মন্ত্রণালয়ে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে ব্যয় ৪৬৯ কোটি টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর শুরু করে সিডিএ। নগরীর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউজ স্থাপনের কথা রয়েছে প্রকল্পের অধীনে। বর্তমানে ১০টি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউজ বসানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুটি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কাজ চলমান আছে। সিডিএ’র এই প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়ে  ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। এরই মধ্যে ব্যয় না বাড়িয়ে  ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এমএসএম / এমএসএম

কুমিল্লায় ইউটার্নে দুর্ঘটনা একই পরিবারের ৪ মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, বন্ধ হলো ইউটার্ন

পাঁচবিবিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আদিবাসী যুবকের আত্মহত্যা

সবজির দামে ঊর্ধ্বগতি, নিম্ন আয়ের মানুষের হিমশিম

অবিলম্বে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার করতে হবেঃ রফিকুল ইসলাম খান

ক্ষেতলালে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৩

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ময়মনসিংহের ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পিআর পদ্ধতি কি কোনো জনগণ বলতে পারবে-রুহুল কবির রিজভী

ভূরুঙ্গামারীতে উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি গঠন

পাঁচবিবির আওলাই ইউনিয়নে বিএনপির গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

রৌমারী উপজেলায় রিভার প্রকল্পের স্কুল কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন

ছায়া নামক অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয় জুলেখাকে

দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রকাশ্যে খোকসা উপজেলা বিএনপি'র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

কুতুবদিয়ায় পিলটকাটা খালে অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদ, ‎অভিযোগকারীর উপর হামলার অভিযোগ