ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

পুলিশের ভূমিকা এবং জনগণের অভিযোগ


মো. কামাল উদ্দিন photo মো. কামাল উদ্দিন
প্রকাশিত: ১-৮-২০২৪ বিকাল ৬:০

বাঙালি জাতির শোকের মাস শুরু হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি আজ, ১৫ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখাটি লিখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও দেশের সব পুলিশের আচার-আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করা সম্ভব নয়, তবে আপাতত আমি বোয়ালখালী থানার এসআই মিনহাজ এবং কোতোয়ালি থানায় আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ব্যবসায়ী আব্দুল মাবুদের বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলার উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই নিশ্চিত ভাবে চট্টগ্রামের পুলিশি হয়রানি। 

আনু মিয়া চৌধুরীর নাতি আব্দুল মাবুদ চৌধুরীর মিথ্যা মামলার ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন,চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বাংলাদেশের পুলিশি কার্যক্রমের দিকে এক ধরনের অশনি সংকেত প্রদান করছে। সদরঘাটস্থ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য আনু মিয়া চৌধুরীর নাতি আব্দুল মাবুদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে তিনটি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, বোয়ালখালী থানার সেকেন্ড অফিসার মিনহাজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও গ্রেফতার বাণিজ্যেসহ সাধারণ মানুষকে পুলিশিং হয়রানির  অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যে তিনি বিভিন্ন সময় অযথা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছেন এবং তাদের থেকে টাকা আদায় করছেন। এই ধরনের অপকর্মের ফলে সাধারণ জনগণ অসহায় হয়ে পড়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলো ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এই দিকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ আব্দুল মাবুদ চৌধুরীর মত একজন নিরীহ ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং পুলিশের এই ধরনের কর্মকাণ্ড জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনার ফলে পুলিশের উপর আস্থা কমে যাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি অবিলম্বে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে, পুলিশের কর্মকাণ্ড ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পরিপন্থী না হয়। মিথ্যা মামলা এবং পুলিশিং হয়রানির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, সমাজে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এজন্য, সরকারের উচিত দ্রুত তদন্ত ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার  পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্যদের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে পুলিশিং নির্যাতন ও অপব্যবহার রোধ করা যায়।

মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত জনসাধারণের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন পূরণ করবে।কোটা আন্দোলন ও গ্রেফতার বাণিজ্য বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলন যে দেশের যুবসমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, তা নিঃসন্দেহে সবার কাছেই স্পষ্ট। আন্দোলনকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করছে, যা তাঁদের মৌলিক অধিকার। এই আন্দোলনের নামে কিছু উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং অরাজকতার উদ্ভব হওয়া এক দুঃখজনক বিষয়, তবে, পুলিশের ভূমিকা এখানে একেবারেই প্রশংসনীয় নয়।

কোটা আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে পুলিশের কার্যক্রম সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ যখন নিরীহ ও অসহায় মানুষকে গ্রেফতার করে, তখন সাধারণ মানুষের সমর্থন লাভ করার বদলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে। এ ধরনের পরিস্থিতি যখন ঘটে, তখন এটি পুলিশী কার্যক্রমের সঠিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের জন্ম দেয়।এখনকার পরিস্থিতিতে পুলিশি গ্রেফতার বাণিজ্য এবং অসংগতিপূর্ণ গ্রেফতার প্রক্রিয়া মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে। অনেক সময় পুলিশি গ্রেফতার কেবলমাত্র সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে চাইলে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি অবশ্যই একটি গুরুতর সমস্যা এবং সরকারের কাছে এটি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

জনগণের মনে এই ধরনের অভিযোগ ওঠা সরকারের বিরুদ্ধে জনমত ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ যদি নিজেদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে না, তাহলে এটি সরকারের বিরুদ্ধে জনমতকে আরো তিক্ত করে তুলবে। এজন্য, পুলিশের উচিত শুধু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নয়, বরং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করা। অতএব, বর্তমানে পুলিশি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে সরকার ও পুলিশকে একযোগে কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই কেবল দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সামাজিক শান্তি সম্ভব।

মিথ্যা মামলা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ও জনগণের উদ্বেগ বাংলাদেশের আদালত পাড়ায় বর্তমানে মিথ্যা মামলায় আসামিদের পরিবারের হতাশা এবং কষ্ট অবর্ণনীয়। বিশেষ করে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশের কর্মকাণ্ডের কারণে এই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা জাতির সামনে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আমাদের সমাজে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে লিপ্ত হন, তখন তা শুধু আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন করে না, বরং পুরো সরকারের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার করা এবং তাদের পরিবারকে অনিরাপদ ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া, এরই একটি উদাহরণ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক, এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নতি বিশ্বমঞ্চে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে, কিছু অসতর্ক পুলিশি কার্যক্রম এবং মিথ্যা মামলা জনগণের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা সরকারের সার্বিক ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। এই বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক বিষয়ও। অতএব, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের অপব্যবহার বন্ধ করা উচিত। মিথ্যা মামলা ও অবৈধ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।

এছাড়াও, সমাজের প্রতিটি স্তরে আইনের প্রতি সম্মান এবং ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধা স্থাপন করতে হবে। তবেই, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সবাই একযোগে কাজ করতে পারবে এবং একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আব্দুল মাবুদ চৌধুরীর পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছে
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা এলাকায় সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে, সদরঘাটস্থ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য আব্দুল মাবুদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় তার পরিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

পরিবারটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাদের দাবি জানাবে এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করবে। তারা আশা করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন এবং পুলিশের অসদাচরণ ও মিথ্যা মামলা ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও  টেলিভিশন উপস্থাপক
মহাসচিব চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া

মানবিক সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব