বারহাট্টায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু

ফসলের মাঠ জুড়ে তপ্ত বাতাসে দোল খাচ্ছে কাঁচা-পাকা আমন ধানের শীষ। সোনালী রঙের ধানের উপর রোদের ঝিলিক, বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে এখন হলুদ-সবুজে একাকার। ফসলের ক্ষেতে এই দৃশ্যে আনন্দ ফুটে উঠেছে বারহাট্টার কৃষকদের মুখচ্ছবিতে।

কার্তিকের গন্ডি পার হয়ে বাংলার বুকে এসেছে অগ্রহায়ণ। আর অগ্রহায়ণ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। আবহমান এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পহেলা অগ্রহায়ণ দিনটি 'নবান্ন উৎসব' হিসেবে পালন করে আসছে এদেশের কৃষিতান্ত্রিক পরিবারগুলো। আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটা আর মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রকোনা বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকার কৃষাণ-কৃষাণীরা।

সরেজমিনে উপজেলা সদর, সাহতা, রায়পুর, চিরাম ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জনান, চলতি রোপা আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে আমন চারা লাগাতে কিছুটা বিলম্ব হলেও পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও উল্লেখ যোগ্য সার সংকট না হওয়ার কারণে ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। সর্বত্রই চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও ধান সিদ্ধ করে তা শুকানোর ব্যস্ততা। তবে বন্যার কারণে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিছু জাতের ধানের ফলন কম হয়েছে। সেই সঙ্গে ধান বিক্রি করে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে ধানের দাম আরও কমার আশঙ্কা তাদের। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে সরকারের পদক্ষেপসহ ধানের ন্যায্যমুল্য চান তারা। এদিকে ধান চাষে কৃষকদের বিভিন্ন সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা সদরের কাশবন গ্রামের ধান চাষি অরুণ সরকার ও তপন দাস সকালের সময়কে জানান, শেষ সময়ের বন্যায় আমাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকায় ফসলের ক্ষতি হলেও উঁচু এলাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে আগাম জাতের কিছু রোপণকৃত ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পর থেকে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। আশা করছি এবার বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ মণ ধান ফলন হবে। জমিতে ধানের শীষ দেখে আমাদের কাছে অনেক আনন্দ লাগছে।

রিপন মিয়া নামের বাউসী ইউনিয়নের মোয়াটি গ্রামের এক কৃষক বলেন, আমি এবার দুই কাঠা জমিতে বিআর-৫০ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে বন্যার পানি আসায় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা কৃষকরা যদি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা ধানের দর পাই তাহলে আমরা উপকৃত হব। বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী, মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। ধানের দামটা যদি একটু ভালো থাকে তাহলে আমরা কৃষকরা লাভবান হব।

সহতা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সলতু মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার আমি বিনা-১৭ ধান জাতে ধান রোপণ করেছি। কারণ এটা একটু আগে কাটা যায় এবং ধান কাটার পর অন্য একটি ফসল আমরা আবাদ করতে পারি। তবে এ বছর বন্যার পানির কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারের ধান ব্যবসায়ী চঞ্চল দত্ত বলেন, বর্তমানে এই এলাকায় সতেরো, পঞ্চাশ, ধানী গোল্ড ধান বিক্রি করতে আসছেন কৃষকরা। এসব ধান প্রতিমণ ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ২৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খারাপ ধানে দাম কিছুটা কম আছে।

বারহাট্টা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উচ্ছ্বাস পাল জানান, বারহাট্টায় এবার দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হয়। সে জন্য তাদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। তাছাড়া এখানকার মাটি আগাম জাতের ধান ও আমন ফসল চাষের উপযোগী। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, চলতি বছর বারহাট্টা উপজেলায় ১০ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। মাঠে ধানের শীষ অনেক বড় হযেছে। উপজেলায় মোট ৫০ হাজার মে.টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সম্প্রতি অক্টোবরের বন্যায় রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।