কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের বন্ধুখ্যাত দোয়েল
গ্রাম বাংলায় কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত অন্যতম পাখি দোয়েল। দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হলেওবর্তমানে নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় ও কালের বিবর্তনে চিরচেনা সেই পাখির সংখ্যা প্রকৃতি থেকে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
একসময়ে পাখির কলরবে মুখরিত গ্রামবাংলা এখন প্রায় পাখি শূন্য। গ্রাম-গঞ্জ, মাঠ-ঘাট, বন-জঙ্গল, গাছ-লতায় নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও বিভিন্ন কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ অন্যান্য দেশীয় প্রজাতির পাখি। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি অথচ কালের বিবর্তনে দিন দিন সুন্দর এই পাখিটি অস্তিত্ব হারিয়ে বইয়ের পাতায় ও ভাষ্কর্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, পাখির বিচরণক্ষেত্র নষ্ট ও খাদ্য সংকট এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও গ্রামের প্রবীণদের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, কৃষকের ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকড় দোয়েলের প্রধান খাদ্য হওয়ায় পোকামাকড় দমন করতে এক সময় কৃষকদের আলাদা কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে হতো না। মূলত এ কারণেই দোয়েল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। আগে গ্রামাঞ্চল ছাড়াও শহরাঞ্চলের বাড়ির ছাঁদ ও বাড়ির আশপাশে দেখা যেত পাখিটি। এরা ঘন বন জঙ্গল কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভালো বাসে না। তাই বসতবাড়ির আশপাশে গাছের কোটর, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গা, দেয়ালের ফাঁক ও সবজির মাচায় বাসা বাঁধে। এখন আর আগের মতো গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে দোয়েলের ডাক শোনা যায় না।
উপজেলার মোয়াটি গ্রামের ৭০ বছর বয়সী কৃষক জজ মিয়া বলেন, 'প্রথম জীবনে আমি যখন কৃষি কাজ শুরু করি, তখন সার-ওষুধের নামও শুনিনি। খেতের পোকামাকড় মারার জন্য আমাদের কোনো কষ্ট করতে হয়নি। দোয়েল, বুলবুলি, ফিঙ্গে, শালিকসহ বিভিন্ন পাখি খেতের পোকামাকড় শিকারের জন্য গাছের ডালে ফাঁদ পেতে বসে থাকত। পোকামাকড় দেখলেই খেয়ে ফেলত। এতে কৃষকের ফসলও ভালো হতো। এখন আর আগের মতো গাছপালা নেই, পাখিও নেই।'
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভগের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক জানান, দোয়েল প্যাসেরিফরম (চড়ুই প্রতিম) বর্গের অন্তর্গত একটি পাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম -Copsychus saularis। এ জাতীয় পাখি সাধারণত বন, চাষাবাদকৃত জমির আশেপাশে ও জনবসতিতে মানুষের কাছাকাছি দেখতে পাওয়া যায়। দোয়েল আকারে ১৫-২০ সে:মি: বা ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা। পুরুষ দোয়েলের শরীরের উপরিভাগ ও গলার নিচে কালো রঙের, পেট সাদা। ডানার দুই পাশে সাদা রঙের প্যাঁচ আছে। স্ত্রী দোয়েলের উপরিভাগ ও গলার নিচে ছাই-রঙা হয়। পেটের অংশ পুরুষ দোয়েলের মত উজ্জ্বল নয়, বরং কিছুটা ফিকে সাদা। দোয়েলের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুলাই। ডিম দেয়ার এক সপ্তাহ আগে এরা গাছের কোটরে বা ছাদের কার্ণিশে বাসা বানায়। সাধারণত ৪/৫টি ডিম দেয়। ডিমের রং ফিকে নীলচে-সবুজ, তার উপর বাদামী ছোপ থাকে। স্ত্রী দোয়েল ডিমে তা দেয় (৮ থেকে ১৪ দিন) পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ও সংগীতশিল্পী কান্তি রঞ্জন রায় চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হয়ে যেতো গ্রামাঞ্চলের কর্মব্যস্ততা। দোয়েল নিয়ে অনেক গান রচিত হয়েছে যা আমরা এখনও গাই। কিন্তু দিন দিন পাখির ডাক হারিয়ে যাচ্ছে, এখন গাছ-গাছালিতে আর পাখির ডাক নেই। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই।’
কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ও পাখিপ্রেমী ফেরদৌস আহমেদ বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নির্বিচারে পাখি শিকার হচ্ছে। বন উজাড় করে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। তা ছাড়াও ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলেও পাখির বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। এতেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখনই পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দোয়েলসহ অন্যান্য জাতের পাখি সংরক্ষণের জন্য সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
এমএসএম / এমএসএম
জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্সের ৪০ তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদদের স্মরণে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির বিনম্র শ্রদ্ধা
হার্ট টু হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত চক্ষু ও অসংক্রামক রোগের সমন্বিত সেবার অগ্রগতি বিষয়ক বার্ষিক ফোরাম ২০২৫
বগুড়ার শাজাহানপুরে জাল নোটসহ দুইজন গ্রেফতার
জয়পুরহাটে এফএনবি এর পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ
উপকার করলে থাকে না পিঠের ছাল, বাস্তব প্রতিচ্ছবি অর্জুন গাছ
মহান বিজয় দিবসে আনোয়ারা প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধা নিবেদন
লাকসামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী’র উদ্যোগে বিজয় দিবসে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মনপুরায় চরে চরে চর ঘেরা জালের বিচরণ নেই মৎস্য অফিসের কার্যকর তদারকি
নালিতাবাড়ীতে মাদ্রাসায় নেই বিজ্ঞান শাখা, তবুও কম্পিউটার ল্যাব এসিস্ট্যান্ড ও সহকারী নিয়োগ
বগুড়া-৫ শেরপুর-ধুনটে কে হচ্ছেন আট দলের প্রার্থী
মাগুরায় রাজাকার ঘৃণা স্তম্ভে জুতা–স্যান্ডেল ও থুতু নিক্ষেপ,