ঢাকা শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫

বাড়তি টাকা দিলে কাগজপত্র ছাড়াই বাসায় পৌঁছে যায় ট্রেড লাইসেন্স


মাহমুদুল হাসান  photo মাহমুদুল হাসান
প্রকাশিত: ৩১-৭-২০২৫ দুপুর ২:৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১০ এ ট্রেড লাইসেন্স নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ইন্সপেক্টর কাউছার মিয়ার বিরুদ্ধে অভিনব উপায়ে লাইসেন্স বিক্রির রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে ইন্সপেক্টর কাউছার মিয়া নিজেকে নিরাপদ রাখতে আবুল কালাম আজাদ নামে একজন বেসরকারি ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে নিয়োগ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই লাইসেন্স বাণিজ্যের পেছনের গল্প। ট্রেড লাইসেন্স আবেদনকারী ও সেবা গ্রহণকারী অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের আলাপকালে ভয়ংকর কিছু তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, কেবল সরকার নির্ধারিত ফি ও ভ্যাট জমা দিলেই ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায় না, এর জন্য আরও অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। সঠিক ইন্সপেকশন করে নির্ধারিত ইন্সপেক্টরের রিপোর্ট দিলেই সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে গ্রাহক ট্রেড লাইসেন্স পান। কিন্তু সব কিছু ঠিক থাকার পরেও গ্রাহককে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। কদমতলী থানাধীন ভুক্তভোগী মোঃ রুবেল হোসেন (সবুজ ছায়া ফার্মেসী) জানান, তিনি তার ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে বিরাট বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে অফিসে থাকা স্টাফ ও ইন্সপেক্টর বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করান। অবশেষে তিনি দুই দিন ঘুরে পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে দুইগুণ টাকার বিনিময়ে একদিনেই কাঙ্ক্ষিত লাইসেন্স পেয়ে যান। মেরাজনগরের আরেক ভুক্তভোগী শাহিন আহম্মেদ বলেন, বাড়তি টাকা না দিতে চাইলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে অফিস আবেদনপত্র গ্রহণ করে না। বাধ্য হয়েই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয় লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। জনৈক একজন দালাল বলেন, বাড়তি টাকার সত্তর শতাংশ অফিসের কর্মরতদের দিতে হয় এবং দালালরা সামান্যই পেয়ে থাকেন। এমনকি বাড়তি টাকা দিলে যেকোনো প্রকার লাইসেন্স পাওয়া যায়, কোনো প্রকার ব্যবসা বা কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না বলেও অভিযোগ।

এরই সূত্র ধরে গত ১০/০৭/২০২৫ ইং (বৃহস্পতিবার) সাংবাদিক মোঃ আরিফুর রহমান একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরির উদ্দেশ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল ১০ এর ধলপুরস্থ কার্যালয়ে ট্রেড লাইসেন্স ইন্সপেক্টর জনাব কাউছার মিয়ার কক্ষে যান। তখন তিনি এনআইডি ও দরখাস্ত ইন্সপেক্টর কাউছার মিয়ার নিকট জমা দিতে চাইলে তিনি নেননি। সামনের চেয়ারে বসে থাকা তার ব্যক্তিগত সহযোগী আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে দিয়ে তিনি তার সাথে কথা বলতে বলেন। তখন জনাব আজাদ কাগজ রেখে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর আবুল কালাম আজাদ বাইরে এসে বলেন, "চলুন আমি আপনার সাথে কারখানা ভিজিটে যাবো।" বিকেলে এনআইডিতে উল্লিখিত ঠিকানায় রায়েরবাগ আসার পর আরিফুর রহমানকে "আপনার প্রতিষ্ঠান কোনটি?" প্রশ্ন করলে, আরিফুর রহমান বলেন, "আমার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। লাইসেন্স পাওয়ার পর আমি ব্যবসা শুরু করব।" তখন আজাদ বলেন, "এনআইডি, কারখানা, ভাড়ার চুক্তিপত্র, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি, বিএসটিআই কিছুই নাই আপনার। আমি এভাবে পারবো না, কিন্তু একটি উপায় আছে। যদি ইন্সপেক্টরকে ম্যানেজ করা যায় তাহলে লাইসেন্স করে দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে টাকা লাগবে পঁচিশ হাজার। এখন কিছু অ্যাডভান্স দিলে রবিবার তিনি নিজে এসে লাইসেন্স ডেলিভারি দিয়ে যাবেন এবং আরিফুর রহমানকে অফিসে আসতে হবে না।" তখন আরিফুর রহমান আজাদকে কিছু টাকা অ্যাডভান্স দিলে তিনি চলে যান। রবিবার সন্ধ্যার পর আজাদ রায়েরবাগে এসে লাইসেন্স ডেলিভারি দিয়ে টাকা নিয়ে যান।

গত ২৩ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখ দুপুরের পর অঞ্চল ১০ এ দৈনিক সকালের সময় এর সাংবাদিক ইন্সপেক্টর কাউছার মিয়ার নিকট জানতে চান, "আপনি আপনার সামনে চেয়ারে বসা ব্যক্তিগত নিয়োগকৃত সহযোগী আজাদকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ফি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিচ্ছেন ও কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়া লাইসেন্স দিচ্ছেন, এটা লাইসেন্স নীতিমালার মধ্যে পড়ে কিনা।" তার ব্যাখ্যায় কাউছার মিয়া বলেন, "আমি একা সামলাতে পারি না তাই আজাদকে নিয়োগ দিয়েছি। তাছাড়া আমার জনবল কম থাকায় আমি এই পন্থা অবলম্বন করেছি। আমার ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিন।" তারপর জনাব কাউছার পত্রিকাতে নিউজ না করার জন্য সাংবাদিককে অনুরোধ করেন, অতঃপর অফিসের দরজা বন্ধ করে সাংবাদিককে ম্যানেজ করার অনেক চেষ্টা ও অনুরোধ করেন।

প্রতিবেদক তার এলাকায় চলে আসার এক ঘণ্টা পর ইন্সপেক্টর কাউছার মিয়া ও আজাদ সাংবাদিকের সাথে দেখা করার কথা বলেন এবং দ্বিতীয়বার ম্যানেজ করার জন্য অর্থ অফার করেন। সাংবাদিক তা প্রত্যাখ্যান করেন। কাউছার মিয়ার এক আত্মীয় সাংবাদিক পরিচয়ে মুঠোফোনে এই বিষয়ে তদবির করেন।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইতিপূর্বে কাউছার মিয়া নগরভবনে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল ১০ এ ট্রেড লাইসেন্স শাখায় তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন যাবত এই দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত। সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, দুর্নীতির টাকায় কেরানীগঞ্জে ও তার জন্মস্থানে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। এবছর তিনি পবিত্র হজ পালন করেছেন, দুটি ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। দুই বছর পর তার অবসরে যাবার কথা।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রেড লাইসেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা, রাজস্ব ফাঁকি, অবৈধ ব্যাংক ঋণ উত্তোলন, মানি লন্ডারিংয়ের মতো বহু দুর্নীতির প্রথম ধাপ। যা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে না। সাধারণ মানুষের চোখের সামনে অথবা আড়ালে চলছে এই অনিয়ম দুর্নীতি, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পরিপন্থী মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল ১০ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলীর নিকট কাউছার মিয়ার অনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, "এই বিষয়টা তো পেশাদারিত্বের অপব্যবহার। তিনি কখনোই ব্যক্তিগত সহযোগী রাখতে পারেন না। যা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।" তিনি সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। তাই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে কাউছার মিয়াকে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা ও চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিক ও ভুক্তভোগীরা।

এমএসএম / এমএসএম

স্টেডিয়াম এলাকায় সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান

তুরাগে রাজউকের খালি প্লট দখলের অভিযোগ সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে

ই-কমার্স খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বাফেসাপ আইকনিক অ্যাওয়ার্ড পেল ই-ক্রয় ডটকম

পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় নারীর অংশগ্রহণ শীর্ষক আলোচনা সভা

জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র পরিষদের আলোচনা সভা

বাড়তি টাকা দিলে কাগজপত্র ছাড়াই বাসায় পৌঁছে যায় ট্রেড লাইসেন্স

অডিট আপত্তির ভিত্তিতে রেলওয়ে মহাপরিচালকের অপসারণ বেআইনি : রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

জুলাই সনদের দাবি নিয়ে শাহবাগ অবরোধ

আড়াইহাজারে বিএনপি'র অফিসের ভাড়া চাওয়ায় ঘর মালিককে হত্যা

ডেমরায় জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কর্মসূচি

জুলাই গণঅভূখ্যান দিবস উপলক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতা বৃদ্ধি

তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাসিনার পতন ত্বরান্বিত হয়

সাব-ইন্সপেক্টরদের প্রতি পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতার আহ্বান ডিএমপি কমিশনারের