ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

ডিএএম’র প্রকল্পের ফাঁদে আলুচাষিরা কাঁদে


মহাদেবপুর প্রতিনিধি photo মহাদেবপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১-৮-২০২৫ দুপুর ৩:৯

 খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর কৃষক সানোয়ার হোসেন। গতবছর ভাল দাম পাওয়ায় এবারও করেছেন আলুর চাষাবাদ। ফলনও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) পরামর্শে উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করেছিলেন ‘অহিমায়িত মডেল ঘরে’। হিমাগার ভাড়া বাঁচিয়ে লাভের আশায় বুকবাঁধে এই কৃষক। কিন্তু তার সেই আশায় গুঁড়ে বালি। প্রায় ১০০ মণ আলু পঁচে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তিনি। শুধু জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন নয়, অপরিকল্পিত এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকেই। 
কৃষকরা বলছেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে গৃহীত সরকারি প্রকল্পে কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তাহলে আর তাদের যাওয়ার মতো কোনোই জায়গা নেই। বাজারে ব্যাপক দরপতন ও কৃষি উপকরণের বাড়তি দরে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর আগে থেকেই লোকসান গুণতে হচ্ছে আলুচাষিদের। লাভের আশায় প্রকল্পের মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণ করে পঁচে নষ্ট হওয়ায় এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কৃষিবিদরা বলছেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে খরা পীড়িত বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁর তাপমাত্রা বেশি। এই আবহাওয়ায় হিমাগার ব্যতীত আলু সংরক্ষণ একেবারেই অযৌক্তিক। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মাধ্যমে আলুর উপযুক্ত সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহুমূখী ব্যবহার এবং বিপণন ব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর বিপুল আলু বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আলুর বহুমূখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আলু সংরক্ষণে দেশীয় প্রযুক্তিতে কৃষকের বসতবাড়ির উঁচু, খোলা ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে বাঁশ, কাঠ, টিন, প্লাস্টিকের নেট, কর্কশীট, ইটের গাঁথুনি ও আরসিসি পিলারে ২৫ ফুট দৈর্ঘ এবং ১৫ ফুট প্রস্থে নির্মিত হবে এসব মডেল ঘর। প্রকল্পটির আওতায় নওগাঁ সদর, বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৩৬টি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যেখানে ১০-১৫ জন কৃষক ২৫-৩০ মেট্রিক টন আলু ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে মে-জুন পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ মাস সংরক্ষণ করা যাবে দাবি সংশ্লিষ্টদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলার ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে ৭টি, যার ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন।
জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রকল্প থেকে আলু সংরক্ষণে অহিমায়িত মডেল ঘর পেয়েছেন। দলনেতা হিসেবে তিনি এ ঘরের দায়িত্বে রয়েছেন। এ বছর তিনিসহ তিন জন কৃষক মিলে ৩০০ মণ কাটিনাল ও ডায়মন্ড জাতের আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। জমিতে আলু পরিপক্ক করে নেয়া হয়েছিল। এরপর ভালভাবে বাছাই ও পরিস্কার করে শুকিয়ে নিয়ে মার্চ মাসে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ভাল দাম পেলে বাজারে বিক্রি করা হবে। কিন্তু সংরক্ষণের তিন মাসের মধ্যে প্রায় ১০০ মণ আলু পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে তাদের প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয় বলে দাবি তার । কৃষক সোহেল রানা বলেন, সরকার যে মডেল ঘরটি কৃষকদের সুবিধার জন্য দিয়েছে; সেখানে সংরক্ষণ করে যে কোন সময় ভাল দাম পেলে বিক্রি করা হবে। কিন্তু আলু পঁচে নষ্ট হওয়ায় উল্টো কৃষকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হলো। সরকারের প্রকল্পটি অপরিকল্পিত মনে হয়েছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকায় তৈরি ঘর জলে যাওয়ার মতো অবস্থা। একই গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ডায়মন্ড ও কাটিনাল জাতের আলু রোপণ করেছিলাম। যার ১৩০ মণ আলুর পুরোটাই এ মডেল ঘরে সংরক্ষণ করেন। কাটিনাল আলু পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ ঘরে আলু আর রাখবো না। নওগাঁ সদর উপজেলার হুগলবাড়ী গ্রামের কৃষক মামুন বলেন, মডেল ঘর গত দুই বছর আগে একটি নির্জন স্থানে তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাব থাকায় সেখানে আমরা আলু রাখতে আগ্রহী না। আবার পঁচে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থেকেও অনেকে আলু রাখতে আগ্রহী নয়। তবে শুরুতে আমাদের নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল, কিভাবে আলুগুলো মডেল ঘরটিতে সংরক্ষণ করা হবে। এখন কোন কিছুই কাজে আসছে না। তিলোকপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার জাহিদুল ইসলাম রিংকু। এ ইউনিয়নের ডাকাহার গ্রামে তার নামে একটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর ৩০০ মণ আলু কিনে সংরক্ষণ করা হয়। কিছু আলু নষ্ট হয়েছে। ১০০ মণ বিক্রি হয়েছে। নিরাপত্তা ও পঁচে যাওয়ার শঙ্কায় অনেকে আলু রাখতে চাইনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প নেয়ার আগে ভালো মতো স্টাডি করতে হয়। সব কিছু বিবেচনা করতে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) ভালো হতে হবে। প্রকৃতিতে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর ওপরে উঠলে আলু পঁচে যাবে। সংরক্ষণ মৌসুমে নওগাঁর তাপমাত্রার পারদ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর অনেক বেশি ওপরে উঠে। আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে শুষ্ক অঞ্চলে এই প্রকল্প একেবারে অযৌক্তিক। এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার বলেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল যখন দাম বৃদ্ধি হবে; কৃষক তখন আলু বিক্রি করতে পারে এজন্য ৩-৪ মাস আমাদের এই ঘরগুলোতে সংরক্ষণ করবে। ডায়মন্ড ও কাটিনাল একটু কম সময় থাকে। দেশি জাতের আলু বেশি সময় থাকে। পঁচন ধরলে বিক্রি করে দিতে হবে। দেখভাল করতে না পারায় কিছু আলু পঁচে গেছে। এ বছর আবহাওয়া জনিত কারণে কিছু আলু পঁচে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

এমএসএম / এমএসএম

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে : শফিকুল আলম

নাগরপুরে যমুনা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে জরিমানা ও জাল ধ্বংস

হাটহাজারীর অননুমোদিত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের উপর তৈরি হচ্ছে বিশাল স্থাপনা

এইচএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ষষ্ঠ অবস্থান অর্জন করলেন কাপ্তাইয়ের পরমা চৌধুরী

শিবচরে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক কিশোরের মৃত্যু

হাতিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অভিভাবকদের হতাশা

মিরসরাইয়ে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বই বিতরণ

তালাকের তিন মাস পর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে টুঙ্গিপাড়ায় নারীর মামলা

শালিখায় রবিউল ইসলাম নয়নের গণমিছিলে হাজারো মানুষের ঢল

তানোরে যুবদল নেতাকে ফাঁসাতে ফাঁদ পেতেছে আওয়ামী লীগ নেতা

চন্ডিডহরে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবিতে তিন উপজেলার মানুষের বিশাল মানববন্ধন

হাটিকুমরুলে শ্রমিক লীগ নেতা এখন জামায়াত নেতা

চন্দনাইশে পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে তামাশার প্রতিবাতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন