সাভারে ইউএনওর এক বছর পূর্তিতে উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা

ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভার যেন এক নতুন ইতিহাস লিখছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একের পর এক কার্যক্রম হাতে নিয়ে বদলে দিচ্ছেন জনপদের চেহারা। তাঁর পদক্ষেপে কোথাও পরিবেশ রক্ষায় কঠোর অভিযান, কোথাও উন্নয়নকাজের দ্রুত বাস্তবায়ন, আবার কোথাও মানবিক উদ্যোগ—সব মিলিয়ে সাভারে তৈরি হয়েছে নবজাগরণের আবহ।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি
উন্নয়ন কার্যক্রমে এসেছে গতিশীলতা। সাভার উপজেলা ও পৌরসভায় প্রায় ৫০০ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার স্থানীয়দের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করেছে। যেখানে সমস্যা, সেখানেই সমাধান—এ নীতিতে এগোচ্ছে প্রশাসন।নগর ব্যবস্থাপনায় এসেছে আধুনিকতা। পৌরসভার যানবাহনের জন্য পার্কিং সেড, ৬৩৫টি ওয়েস্ট বাসকেট বিতরণ, নন-মটরাইজড ভ্যান ও ডিপিপি প্রণয়ন করে বর্জ্য অপসারণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।এ ছাড়া কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক ব্যাগ বিতরণ ছিল একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। স্থানীয়রা বলছেন, আগে যেখানে বর্জ্য অপসারণে দিন লেগে যেত, এখন অনেক দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় রাজস্ব আহরণে এনেছেন স্বচ্ছতা। অস্থায়ী পশুর হাট উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দিয়ে বিগত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। স্থানীয় সরকার কর্মকর্তারা বলছেন, এটি সাভারের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
শিক্ষা ও যুব উন্নয়ন
শিক্ষার মানোন্নয়নেও ইউএনওর পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং মেয়েদের জন্য আধুনিক হাইজেনিক কর্নার স্থাপন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণে তিনি ছিলেন কঠোর। এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ চলাকালে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে এক প্রতিষ্ঠানের সাতজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়।
তরুণ প্রজন্মকে মাদকমুক্ত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, প্রতিযোগিতা আয়োজন ও তারুণ্যের উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় কলেজশিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, “ক্রীড়ায় অংশগ্রহণে আমাদের নতুন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে প্রশাসন।”
মানবিক উদ্যোগ
অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতেও পিছপা হননি ইউএনও। লটারির মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ১৪৪টি সাবমার্সিবল টিউবওয়েল বিতরণ, বেদে সম্প্রদায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শীতবস্ত্র ও সরকারি উপহার প্রদান করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ১৩ হাজার ৫২০ পরিবারে ভিজিএফ চাল বিতরণ হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান মিলিয়ে ২১৭টি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে সরকারি অনুদান। স্থানীয়রা বলছেন, এর ফলে সুবিধাবঞ্চিতদের আস্থা বেড়েছে প্রশাসনের প্রতি।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ
জুলাই শহীদদের কবরস্থান সংরক্ষণ, তাঁদের স্মরণে রাবার স্ট্যাম নির্মাণ এবং কর্ণপাড়া খাল খননের উদ্যোগ স্থানীয় ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে এসব পদক্ষেপ তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিমধ্যেই প্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে।
শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কঠোরতা
শৃঙ্খলা রক্ষায় ইউএনওর ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সরকারি নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা এ বছর সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদে উদ্যাপিত হয়েছে। স্থানীয় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, “এত সুশৃঙ্খলভাবে পূজা আগে কখনো হয়নি। ইউএনও সাহেবের কঠোর নজরদারির কারণেই সব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন
পরিবেশ রক্ষায় একদিনে এক লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ছিল নজরকাড়া। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন, মডেল মসজিদে ছাদবাগান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সোলার প্যানেল স্থাপন এবং পাবলিক লাইব্রেরি সংস্কার সাভারের অবকাঠামোয় যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাভার ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, “উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগও যে সমান্তরালে চলছে, এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।” সাবারের সামগ্রিক উন্নয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে কাজ করছেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ওনার সময়োপযোগী দিক নির্দেশনায় আমরা জনপ্রতিনিধিরাও স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারছি।
এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ঢাকা জেলার সেক্রেটারি মোঃ আফজাল হোসাইন বলেন,বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রায় ১৬ বছর আমাদের নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কোন সুযোগ ছিল না। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা এই ইউএনও মহোদয়কে পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি তার কাছে আসা সেবা প্রত্যাশীদের কথা শুনেন, বুঝেন এবং সাধ্য অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে আমাদের এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার নেই। তিনি সাভারে যোগদানের পর থেকে রাস্তাঘাট,সবুজায়ন, পরিবেশ দূষণের হাত থেকে সাভারকে রক্ষা করা সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন এবং কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন যেটি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে যেহেতু জনপ্রতিনিধির কাজগুলো উনাকেই করতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে এত বড় উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাকে পরতে হয়। সবমিলিয়ে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে তিনি ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন, যেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
পরিবেশ রক্ষায় কঠোর অভিযান
সাভার থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবেশ রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেন ইউএনও। হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ৩২টি ইটভাটা ভেঙে দেন তিনি। পাশাপাশি আমিনবাজার থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ফুটপাত উচ্ছেদ, অবৈধ শিসা ফ্যাক্টরি বন্ধ এবং মাটি কাটার ভেকু অপসারণ করা হয়।
পরিবেশবিদদের মতে, এসব পদক্ষেপ সাভারের ধুলো–ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পরিবেশকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে।
আমার কাছে মনে হয়েছে ইউএনও একজন সৎ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তা এবং তিনি জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করেন।আমার নিজের একটি ইটভাটা ছিল সেটিও তিনি গুড়িয়ে দিয়েছেন। আমি সাভারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি একবারের জন্যও আমাকে সময় দেওয়া কিংবা জিজ্ঞেস করার পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করেননি। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন সাহসিকতা এবং দায়িত্বশীলতাকে আমি স্বাগত জানাই। সরকারি কর্মকর্তারা এমন দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক আচরণ করবেন এমন স্বপ্নই দেখেছিলাম,আমার কাছে মনে হয়েছে বর্তমান ইউনএনও সাহেব সাভারে যোগদানের পর থেকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সাভারবাসী স্থায়ী ভাবে লাভবান হবে।
নতুন সাভারের স্বপ্ন
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাভারে যে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে তা টেকসই হলে পুরো উপজেলা নতুন রূপ নেবে। সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন খান নঈম বলেন, “উন্নয়ন কেবল অবকাঠামো নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে কিনা সেটাই আসল বিষয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সরকারের নেতৃত্বে সাভারে বর্তমানে যে কার্যক্রম চলছে, তা বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে।”কঠোরতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে সাভারে তৈরি হচ্ছে নতুন স্বপ্নের জনপদ। পরিবেশ সুরক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবিকতা মিলেমিশে সাভারকে রূপ দিচ্ছে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও প্রাণবন্ত উপজেলায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি একজন মানবিক মানুষ। তার কাছে কোন সমস্যা কিংবা প্রয়োজনে গেলে তিনি সাধ্যমত চেষ্টা করেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে শুনে সেটির সমাধানে কাজ করার। বর্তমান সময়ে কোন জনপ্রতিনিধি না থাকায়, জনপ্রতিনিধিদের সব কাজও উনাকে একাই সামলাতে হয়, তারপরও আমরা তাকে ক্লান্ত হতে কিংবা কোনরকম দায়িত্বে অবহেলা করতে দেখিনি। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সাভার অচিরেই দেশের উন্নয়নের মডেলে পরিণত হবে।
এমএসএম / এমএসএম

চাঁদপুরে মাদক কারবারি ইউপি সদস্যের স্ত্রীসহ আটক ২

ঝিনাইদহে মহিলা রোগীর গালে থাপ্পড় মারলেন ডাঃ দেবাশীষ বিশ্বাস; অন্তরালে যা ঘটেছিল

বড়লেখায় দুই সিএনজি-অটোরিক্সা চুর আটক, গণপিটুনিতে নিহত-১

সাতক্ষীরায় কথিত সাংবাদিকের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সকলে

সাভারে ইউএনওর এক বছর পূর্তিতে উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা

নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির "ফল-২০২৫" ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

নাচোলে রাতের আঁধারে আমের ডাল কর্তন ও চুরি ক্ষতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা

রায়গঞ্জে এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ালো শিক্ষার্থী শেখ রিয়াদ

বাউবিতে প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান

নড়াইলে ইব্রাহিম মোল্যাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার নাটকের অবসান : ভিকটিম উদ্ধার, নারীসহ গ্রেপ্তার ৪

শালিখায় অবৈধ মৎস্য সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস

পঞ্চগড়ে রুটিতে বিষ মিশিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা, ৮ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন
