ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

তারেকউজ্জামান খানের স্বপ্নের উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩-৯-২০২৫ বিকাল ৬:৩৬

ঢাকার উত্তরা শহরের কোলাহল, নির্মম যান্ত্রিকতা আর ব্যস্ততম নগর জীবনের মাঝেও একটি শান্ত, মননশীল আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটির অবস্থান উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরের ১ নাম্বার রোডের ৪ নাম্বার বাসায়। এই পাঠাগার কেবল বই পড়ার জায়গা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে এক সৃজনশীল আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র, মানুষের মানসিক জগতের জাগরণস্থল। যার পেছনে আছেন একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ, সমাজ-সংস্কৃতির নিরব যোদ্ধা— মোহাম্মদ তারেকউজ্জামান খান।

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে এই পাঠাগারটি। তখন হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি, কয়েক বছরের ব্যবধানে এটি হয়ে উঠবে উত্তরার সংস্কৃতি ও জ্ঞানের বাতিঘর। সাধারণ পাঠাগার যেমন নিছক বইয়ের তাক আর টেবিল-চেয়ারে সীমাবদ্ধ থাকে, এই লাইব্রেরির চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এটি একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আত্ম-উন্নয়নমূলক আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে।

গ্রন্থাগারের উৎপত্তি ও গুরুত্ব নিয়ে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন বই মানুষের মনে আলো জ্বালায়, চিন্তা-চেতনার খোরাক জোগায়, সমাজের বিবেককে জাগিয়ে তোলে। প্রাচীন ব্যাবিলন, মিশর কিংবা তিব্বতের গ্রন্থাগার থেকে শুরু করে মুসলিম সভ্যতার বাগদাদ, স্পেন কিংবা মিশরের জ্ঞানভাণ্ডার—সবই প্রমাণ করে একটি জাতির উন্নয়নের মূলে রয়েছে পাঠচর্চা। তারেকউজ্জামান খান ঠিক এই কথাই বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন, একটি বই একজন মানুষকে বদলে দিতে পারে; আর সেই মানুষ বদলে দিতে পারে পুরো সমাজকে।

উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে এমনই একটি দর্শনকে সামনে রেখে। এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক, সমাজকল্যাণমূলক পাঠাগার। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন পাঠক আসেন। এ পাঠাগারে রয়েছে প্রায় বিশ হাজার বই। বসার জায়গা মাত্র ৫০টি, তবে জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত মানুষদের কাছে এই জায়গাটুকুই হয়ে ওঠে আশ্রয়।

লাইব্রেরির সময়সূচিও শহুরে জীবনের সাথে দারুণ সামঞ্জস্যপূর্ণ—প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা। প্রতিটি কক্ষই সিসি ক্যামেরার আওতায়, বিদ্যুৎ চলে গেলেও আইপিএস-এর মাধ্যমে পরিষেবা অব্যাহত থাকে। এখানে শুধু পুস্তক ধার নেয়া বা পড়ার সুযোগই নয়, আছে পত্রিকা পাঠ, তথ্য অনুসন্ধান, পরামর্শ, এমনকি ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাও। তরুণ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে লাইব্রেরিতে রয়েছে মাসিক সাহিত্য আসর, কুইজ, রচনা, বিতর্ক, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে শিক্ষাবিষয়ক সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন।

এই পাঠাগারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য—এটি থেমে থাকে না। এটি চলমান, প্রগতিশীল এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকানো এক স্বপ্নময় সংগঠন। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে আয়োজন করা হয় মা, বাবা, কুরআনে হাফেজ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, নারী ও শিশুদের নিয়ে বিশেষ সম্মাননা অনুষ্ঠান। সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে লাইব্রেরি আয়োজন করে ঈদ সামগ্রী, শীতবস্ত্র কিংবা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম।

তারেকউজ্জামানের দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি চান—এই পাঠাগার হোক একটি লাইফ চেঞ্জিং সেন্টার, যেখানে একদিকে যেমন থাকবে বইয়ের সুবাস, অন্যদিকে থাকবে প্রযুক্তি, দক্ষতা আর উদ্ভাবনের প্রশিক্ষণ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ, আধুনিক অডিটোরিয়াম, বুক ক্যাফে, কম্পিউটার ল্যাব, ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র, স্টেশনারি স্টোর, এমনকি পাঠকদের জন্য জিমনেশিয়াম স্থাপন।

এই প্রতিষ্ঠান শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফল নয়, এটি একটি দর্শন, একটি স্বপ্ন—যেখানে পাঠাগার মানে কেবল মেঝেতে বসে বই পড়া নয়; বরং একটি জাতির বিবেক গঠন, মূল্যবোধ জাগ্রত করা, আর একটি প্রজন্মকে সুস্থ সংস্কৃতির মাধ্যমে তৈরি করা। লাইব্রেরিটির উদ্দেশ্য শুধুই বই দেয়া নয়, বইয়ের মাধ্যমে মনন গঠন, চরিত্র গঠন এবং সমাজের জন্য উপযোগী মানুষ গড়ে তোলা।

আজকের তরুণদের মধ্যে যখন মোবাইল, গেমস ও সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি বাড়ছে, তখন উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির মতো একটি প্রতিষ্ঠান আশার আলো হয়ে এসেছে। এটি প্রমাণ করে, এখনও বইয়ের জগতে মানুষ ফিরতে চায়—যদি তাকে একটু সাহচর্য, প্রেরণা ও সঠিক পরিবেশ দেয়া যায়। আর এই দায়িত্বটাই নিরবে পালন করে চলেছেন তারেকউজ্জামান খান ও তার লাইব্রেরি।

‘সৃজনশীল মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে’এই স্লোগান শুধু একটি বাক্য নয়, এটি যেন এক নিরব প্রতিজ্ঞা। সেই প্রতিজ্ঞা থেকেই প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় স্টাডি সার্কেল, সাহিত্যচর্চা, গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, গ্রন্থ পাঠ আয়োজন। শিশুদের মেধা বিকাশে আয়োজিত হয় প্রতিযোগিতা, কর্মশালা, অনুপ্রেরণামূলক সভা। পাঠাগারের একেকটি আয়োজনে যেন উঠে আসে আগামী প্রজন্মের ভরসার প্রতিচ্ছবি।

তারেকউজ্জামানের চোখে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়—এটি একটি স্বপ্ন, একটি আন্দোলন, একটি অবিরাম যাত্রা। তার এই স্বপ্ন আজ উত্তরার অজস্র পাঠকের প্রেরণা, নির্ভরতা এবং আত্মউন্নয়নের প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে। এই যাত্রা থামার নয়। যতদিন পর্যন্ত একটি শিশু, একটি কিশোর বা একটি যুবক বইয়ের পাতায় ভবিষ্যৎ খুঁজবে, ততদিন উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি তার দীপ্ত আলোকবর্তিকা হয়ে সমাজে আলো ছড়িয়ে যাবে—নিরব, নিঃশব্দ, অথচ গভীর এক প্রভাব নিয়ে।

এই পাঠাগার একটি প্রমাণ—স্বপ্ন দেখলে, ভালোবাসলে এবং নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করলে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি সেই বদলের গল্প, যেটি শুরু হয়েছে একজন মানুষ দিয়ে—কিন্তু যার আলো ছড়িয়ে পড়ছে শত শত মানুষের জীবনে।

এমএসএম / এমএসএম

মোজো সরবরাহ কর্মীকে আক্রমণ করতে ঝাঁপিয়ে পরলো আর রহমান ফার্মাসীর ৩ কর্মচারী

তারেকউজ্জামান খানের স্বপ্নের উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি

মানবপাচার চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার, তদবির বানিজ্যে এএসআই কাইয়ুম

কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু, নতুন দিগন্তে পর্যটন শিল্প

খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা

পিসি সাহাব উদ্দীনের নেতৃত্বে, দালালমুক্ত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নাগরিক সুবিধা থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না: মোস্তফা জামান

বিমানবন্দরের কাওলা এলাবাসীর মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ

যতবার বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে ততবার আলেম সমাজ নিরাপদে ছিল: মোস্তফা জামান

উত্তরায় শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভ উদ্বোধন

‎আবাসিক ভবনে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম : নকশাবিহীন ভবনের বিরুদ্ধে রাজউকের নীরবতা

ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক থেকে আহবায়ক পদে মনোনীত হলেন দক্ষিণখানের হেলাল তালুকদার

বজ্রসহ মুষলধারার বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট অস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন