ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় আশ্রয়ন প্রকল্পে মানবিক সংকট


বাদল রায় স্বাধীন, সন্দ্বীপ photo বাদল রায় স্বাধীন, সন্দ্বীপ
প্রকাশিত: ১৮-১০-২০২৫ দুপুর ২:১৭

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে, সাগর, মেঘনা আর চরের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা এক নিঃশব্দ গ্রাম দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন। নদী ভাঙনের পর নতুন ভাবে জেগে উঠা এই চরে কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে সরকারি তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্প, তার মধ্যে একটির নাম “কমরেড মুজফফর আহমদ আশ্রয়ন প্রকল্প”। নতুন জীবনের আশায় যারা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের মুখে আজও ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তার ছাপ। মাথার ওপর ছাদ আছে ঠিকই, কিন্তু তার নিচে নেই নিশ্চিন্ত জীবন। বাইরে থেকে দেখলে সারি সারি পাকা দেয়াল ঘর—দেখতে যেন এক নতুন চমৎকার বসতি। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে দেয়ালচূর্ণ, চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির পানি, ভাঙা দরজা আর ভেজা মেঝে। পুরোনো ল্যাট্রিনগুলোর অধিকাংশই অচল, কমোড দেবে গেছে নিচের দিকে, ঘরের ছাদে ফাটল, দরজার লোহা মরিচা পরে শেষ। অনেকে এখন কাঠ পেরেক গেঁথে সেই দরজার কোনো মতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। এক নারী বাসিন্দা চোখ মুছতে মুছতে বলেন—রাতে ঘুমোতে ভয় লাগে—চারদিকে সাপের ভয়, বিদ্যুতের আলোও নাই। মাঝে মাঝে বখাটেদের উঁকি মারা। আগে গরমের কারণে বাইরে শুয়ে থাকতাম এখন ঘরের মধ্যেই ভয়ে থাকি। এ যেন আশ্রয়ের ভেতরে বন্দি জীবন—যেখানে ঘর আছে, কিন্তু নিরাপত্তা নেই।

প্রকল্পের কয়েকটি টিউবওয়েল এখন অকেজো, কিছু পাইপ ভাঙা, কিছুতে একফোঁটা পানি ওঠে না। গরমে শুকিয়ে যায় পানির স্তর, বর্ষায় ডুবে যায় চারপাশ। ড্রেনেজ বা পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা কাদায় মিশে যায়। দুর্গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শিশুরা পানিতে পড়ে যায়, ঘরে ঘরে মশার উৎপাত। রাতে দীর্ঘাপাড়ের আকাশ নেমে আসে অন্ধকারে। বিদ্যুতের খুঁটি দুটি প্রকল্পে আছে, অন্যটিতে এখনো স্থাপন হয়নি। কোনোটিতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। কারণ মিটার কেনার ডকুমেন্টস ও টাকা নেই তাদের। কিছু ঘরে সৌরবাতি টিমটিম করে জ্বলে, বাকিরা কেরোসিনের ধোঁয়ায় দিন কাটায়। অন্ধকারে সাপের ভয়, রাতে শিশুর কান্না—এই নিঃস্তব্ধতার মধ্যেও তারা টিকে থাকে। তাদের কাছে “রাত” মানে বিশ্রাম নয়, বরং আরও এক পর্ব লড়াইয়ের। প্রকল্পের বাইরে পা রাখলেই শুরু হয় কাদা-পানির যুদ্ধ। নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার বা চিকিৎসাকেন্দ্র—সবই ৫–৬ কিলোমিটার দূরে। কয়েকজন শিশু মাঝে মাঝে ভিজে ও হেঁটে স্কুলে যায়, কখনো কাঁদায় পড়ে যায়। একদিন গেলে এতোদূর হাঁটার ভয়ে চিরতরে শেষ হয় তার শিক্ষা জীবন। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে প্রায় হাজার টাকায় নিয়ে যেতে হয় ১২/১৪ কিলোমিটারের দূরের হসপিটালে। এই কষ্টে অনেকেই বর্ষাকালে প্রকল্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যান, আবার ফিরে আসেন, অনেকে না বুঝে আসেন বসবাস করতে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে, কয়েকদিন পর হতাশ হয়ে চলে যায়, কারণ উপার্জনের কোনো ব্যবস্থা নেই, নিরুপায়রা আবার ফিরে আসে—নতুন আশায়, হয়তো এবার কিছু বদলাবে। জীবনের মতো মৃত্যুতেও অবহেলা। তিনটি প্রকল্পে প্রায় চার শত নব্বই পরিবার থাকলেও নেই কোনো কবরস্থান। কেউ মারা গেলে মরদেহ কাঁধে তুলে দূরের গ্রামে নিতে হয়। মৃত্যুর পরও যেন শান্তি নেই—এই দৃশ্য হৃদয় ভারী করে তোলে। স্থানীয়রা জানান, কিছু ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, যারা এখানে থাকেনই না। আবার প্রকল্পের পাশে থাকা জলাশয়গুলো দখলে চলে গেছে তাদেরই হাতে। যেখানে সাধারণ মানুষ মাছ চাষ করতে পারত, সেখানে এখন অন্যের বাঁধা। সরকারি প্রকল্পের জমিতে যেন আবারও অসহায়রা কোণঠাসা।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রকল্পবাসীরা দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে সাংবাদিক ও সিএসও প্রতিনিধিদের কাছে তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। তারা জানান, এসব মৌলিক সমস্যা ও মানবিক সংকটের স্থায়ী সমাধান চান তারা। তাদের দাবি—সিসিআর প্রজেক্টের মাধ্যমে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ফোরামে যেন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এসডিআই ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের পার্টনারশিপ প্রকল্প “ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (CCR)”–এর আয়োজনে সিএসও সদস্য ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রকল্পবাসীরা যে ১৬ দফা দাবিগুলো তুলেছেন, তা শুধু উন্নয়নের নয়—মানবিক বেঁচে থাকারই দাবি। দাবিগুলো হলো: ১. একটি ব্যারাককে কমিউনিটি ক্লিনিকে রূপান্তর করে সপ্তাহে দুই দিন চিকিৎসক বসানোর ব্যবস্থা; ২. স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু; ৩. নির্ধারিত স্থানে কবরস্থান নির্মাণ ও বাউন্ডারি ঘেরা করে উঁচুকরণ; ৪. দখলকৃত জলাশয় উদ্ধার করে বাসিন্দাদের মাছচাষের সুযোগ দেওয়া; ৫. বাজারে টিনশেড মার্কেট স্থাপন; ৬. পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী ঘর বরাদ্দের পুনর্বিন্যাস (সর্বোচ্চ দুটি করে ঘর প্রদান, যেহেতু প্রায় অর্ধেক ঘর খালি থাকে); ৭. ভোটার এলাকা স্থানান্তর করে সরকারি সুবিধা (ভিজিএফ, ভিজিডি) প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; ৮. ন্যায্যমূল্যের চাল বিতরণের জন্য সরকারি ডিলার নিয়োগ; ৯. প্রতিটি পরিবারকে ৫ কড়া জমির দলিল প্রদান; ১০. নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন; ১১. বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় খুঁটি স্থাপন ও সব ঘরে বিনামূল্যে মিটার সংযোগ; ১২. পুরোনো ঘর ও ল্যাট্রিন সংস্কার, রং ও মেরামত; ১৩. দরজা ও ল্যাট্রিনের কমোড নবায়ন; ১৪. নারীদের গবাদিপশু বা ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহায়তা; ১৫. চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি উঁচু ও পাকা করে মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করা; ১৬. প্রকল্পের চারপাশে জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে টেকসই লোনা বেড়িবাঁধ নির্মাণ। এই মানবিক বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস কামাল বাবু, ইলিয়াস সুমন, সমাজকর্মী মো.শাহাদাত, বিপ্লব দাম সহ সিএসও সদস্যরা। সমগ্র কার্যক্রমের সমন্বয় করেন সিসিআর প্রজেক্ট–এসডিআই এর কমিউনিটি মোবিলাইজার, কবি ও সাংবাদিক বাদল রায় স্বাধীন। দীর্ঘাপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই মানুষগুলো এখনো বাঁচে আশায়—একদিন হয়তো তাদের সন্তানরা কাদা-পানিতে ভিজে ৪/৫ কিঃ মিঃ দূরের স্কুলে যাবে না, অসুস্থ হলে ঘরে বসেই চিকিৎসা পাবে, রাতে আলো জ্বেলে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে, নারীরা পাবে উপার্জনের পথ। তাদের এই নীরব আবেদন যেন পৌঁছে যায় প্রশাসনের কানে, নীতিনির্ধারকদের হৃদয়ে—কারণ আশ্রয় শুধু মাথার ওপর ছাদ নয়, আশ্রয় মানে বেঁচে থাকার অধিকার।

এমএসএম / এমএসএম

টিসিবির পণ্য নিয়ে আর ফেরা হলো না বৃদ্ধ নাসির উদ্দীনের

অমিমাংসিত জায়গায় ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতাসহ আহত-৬

রায়গঞ্জে হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

জয়পুরহাটে বিএনপি নেতার বিনামূল্যে চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন

জয়পুরহাটে ব্র্যাকের উদ্যোগে স্বপ্নসারথি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

অভয়নগরে ইকুভমেন্ট হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের শাখা অফিস উদ্বোধন

রায়গঞ্জ রাইডার্সের ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রেসক্লাবের সম্পাদক পলাশের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

ভরাডুবি ফলাফলের মাঝেও আলো ছড়াল বৃষ্টির একমাত্র জিপিএ–৫

দাউদকান্দিতে দীর্ঘদিন সংস্কারহীন ১০০ মিটার সড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদ

বোয়ালমারীতে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নতুন কমিটির সভাপতি মাজেদ সহসভাপতি রাসেল আহমেদ

নবীনগরে টেকনিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল গড়বেন প্রবাসী নজরুল ইসলাম নজু

কুড়িগ্রামে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস পালিত