সুনামগঞ্জ পৌর শহরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কর্তৃক গলায় ফাঁস লাগিয়ে গৃহবধূকে হত্যার চেষ্টা
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুলতানপুর কলেজ রোড এলাকায় এক নিরীহ গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঘনাটি ঘটে বুধবার (২৯ সেপ্টম্বর) বিকেল ৫টার দিকে পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা কাসেম মিয়ার বাড়িতে। আহত গৃহবধূক উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। গৃহবধূর নাম পিয়ালী বেগম, তিনি হাসননগর ময়নার পয়েন্ট এলাকার দিনমজুর মকলেছ মিয়ার মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রের জানা যায়, ৩ বছর আগে পিয়ালী বেগমকে অপহরণ করে নিয়ে বিয়ে করে পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের কাসেম মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (২৫)। পিয়ালী বেগমকে বিয়ে করায় মেয়েটির বাবা তখন মামলায় যাননি। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন কর্তৃক পিয়ালী বেগমের ওপর যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন। বারবার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নীরবে সহ্য করে সংসার করে চলছেন অসহায় মেয়েটি।
বাবা দিনমজুর হওয়ায় যৌতুক দিতে না পারায় দিনের পর দিন অমানবিক অত্যাচার শুরু হয় মেয়েটির ওপর। বর্তমানে মেয়েটির এক বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকে গৃহবধূ পিয়ালী বেগম। কিন্তু শ্বশুর কাসেম, ননদ জুমা বেগম, ফুফুশাশুড়ি আয়শা বেগম, মামাশ্বশুর হামিদ, দেবর শিপন, শাশুড়ি রিনা বেগম, ভাশুরের স্ত্রী ও স্বামী রিপন মিয়া মিলে গৃহবধূ পিয়ালী বেগমের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। অবশেষে গতকাল বিকেলে পরিকল্পিতভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার জন্য করে মারধর শুরু করে। গৃহবধূর বাবার বাড়ি পাশাপাশি হওয়া পিয়ালী বেগমের মা মেয়েকে দেখতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘরে প্রবেশ করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। এ সময় পিয়ালী বেগমের চিৎকার শুনতে পান মেয়ের মা। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পিয়ালী বেগমের মাকে মারধর করতে এগিয়ে আসলে তিনি বাড়িতে চলে আসেন।
অপরদিকে গৃহবধূকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার জন্য গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মারধর করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পিয়ালী বেগমের গলায় পচণ্ড আঘাতের কারণে কথা বলার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো রকম প্রাণে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করে দৌড়ে ওই গৃহবধূ আশ্রয় নেয় শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় এক সাংবাদিকের ঘরে। সেখানে গিয়েও রেহাই পায়নি মেয়েটিকে। ঘরবন্দি করে মারধর করতে থাকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এদিকে খবর পেয়ে মেয়েটির স্বজনরা গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ সময় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সহিদুর রহমানকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানালে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পুলিশ সদস্যরা মেয়েটিকে দেখতে যান এবং জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু মেয়েটির গলায় পচণ্ড আঘাতের কারণে কথা বলতে পারেনি। একটি কাগজে লিখে পুলিশকে তার ওপর অত্যাচার ও মেরে ফেলার পরিকল্পনার বর্ণনা দেয় মেয়েটি। পুলিশ সদস্যরা তার স্বজনদের থানায় মামলা দায়ের ও চিৎিসার পরামর্শ দেন। মেয়েটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নির্যাতিত গৃহবধূর স্বজনরা চিকিৎসা শেষে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এমএসএম / জামান