নীরব ভূমিকায় স্থানীয় প্রশাসন
নোয়খালীর সেনবাগ রাস্তার মাথায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য
কিশোর গ্যাং কালচার এখন নিছকই এক সমস্যা নয়, এটা এখন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নানাভাবে, নানা মাত্রিকতায় প্রকাশিত হচ্ছে। এই কিশোর গ্যাং শুধু কিশোরদের সমন্বয়ে গড়ে উঠছে তা নয়, বিভিন্ন বয়সের যুবকরাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। তারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে। এমন কিশোর গ্যাং সারাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলায়ও তাদের বিস্তার ঘটেছে। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ঘটনা ঘটানো তাদের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, গত ১৯ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে সেনবাগ রাস্তার মাথায় ওমর সানি (২১) নামে এক কিশোরকে তার স্কুল বন্ধু শাকিলের আপ্যায়ন নামক চা দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে কথা বলার সময় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাদ্দাম হোসেন ওরফে কসাই সাদ্দাম (৩০), পিতা মৃত আব্দুল হাই, সাং আজিজপুর কসাই খালেক বাড়ি ও তার সহযোগী মারুফ হোসেন (২৩), পিতা তবারক আলী, সাং মহিদিপুর আতরআলী বলি বাড়ি এবং অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন ওই দোকানে এসে পায়ের উপর পা দিয়ে বসাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলোপাতাড়ি মারধরসহ চাকু দিয়ে নাকে ও ডান চোখের উপরে গুরুতর জখম করে চলে যায়।
ওই ঘটনায় পর গত ২৩ মে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানায় জখমী ওমর সানির পিতা ওমর ফারুক বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন, যা সেনবাগ থানার মামলা নং-১৬, তাং-২৩/০৫/২০২১, ধারা-৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ দঃবিঃ।
উক্ত মামলার বাদী ওমর ফারুক জানান, ঘটনার পূর্বে বর্ণিত আসামিদের কাউকে তিনি কিংবা তার ছেলে চিনত না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী অনেকে জানান, কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. ইলিয়াসের ছেলে গিয়াস উদ্দিনের (৩৮) নেতৃত্বে আজিজপুরের সাদ্দাম হোসেন ওরফে কসাই সাদ্দাম (৩০), মহিদিপুরের মারুফ হোসেন (২৩), আরিফ হোসেন (২৪), গিয়াসউদ্দিন রতন (২৮), জাহিদুল ইসলাম জাবেদসহ (২৭) ১৪-১৫ জনের একটি কিশোর গ্যাং সেনবাগ রাস্তার মাথা এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। কথায় কথায় লোকজনদের মারধর করে। সেনবাগ রাস্তার মাথায় অবস্থিত ব্যবসায়ীরা কমবেশি ওই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ওই কিশোর গ্যাং কর্তৃক প্রতিনিয়ত অনেক ঘটনা ঘটলেও তাহাদের ভয়ে থানায় কিংবা কোর্টে কেউ অভিযোগ দেয়ার সাহস করেন না বলে স্থানীয়রা জানান।
তারা আরো জানান, স্থানীয় প্রশাসন ওই কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে অবগত থাকলেও কিশোর গ্যাংটি স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থাকার কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে।
শারীরিকভাবে নির্যাতিত কিশোরের পিতা ওমর ফারুক বলেন, তিনি তার পরিবার নিয়ে দীর্ঘ চার বছর যাবৎ তার মেয়ে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী উপ-পরিদর্শক জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। তিনি নিজেও অসুস্থ। ওমর সানি তার একমাত্র পুত্রসন্তান। ঘটনার দিন তার ছেলে ঈদ উপলক্ষে বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য সেনবাগ রাস্তার মাথা তাদেরই আরেক স্কুল বন্ধুর চা দোকানে বসে কথা বলাকালীন উক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ ঘটনা ঘোয়। অল্পের জন্য তার ছেলের চোখ রক্ষা পেয়েছে। তার ছেলের মতো নিরপরাধ কেউ যেন উক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হতে না হয় সেজন্য তিনি উক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের শনাক্তপূর্বক প্রশাসনের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এমএসএম / জামান