সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে শতভাগ রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে চান ডা. আনিসুর রহমান
সুনামগঞ্জ জেলার ১০ লাখ মানুষের একমাত্র উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল। সেখানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন শত শত অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালে নানান ভোগান্তি ও হয়রানির চিত্র ফুটে ওঠে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে লোকবল সংকটের কারণে। এখন সেটি আর আগের মতো নেই। প্রায় ৭ মাস আগে থেকে যতই দিন যাচ্ছে ডাক্তার ও নার্স সংকরে মধ্যে যেন উন্নত সেবাদানে পিছিয়ে নেই সদর হাসপাতাল। বছরখানেক আগেও যেখানে দেখা যেত রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি, সেখানে এখন উন্নত চিকিৎসার রোল মডেলে পরিণত হচ্ছে স্বপ্নের মতো। কী করে সম্ভব হচ্ছে ডাক্তার ও নার্স সংকটের মধ্যে রোগীদের উন্নত সেবা প্রদান, সেটি এখন ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে!
তবে এসব ভাবনার অবসান ঘটাতে সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে রয়েছেন নবনিযুক্ত সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিসুর রহমান। তার আগমনে এবং সঠিক নেতৃত্বে সদর হাসপাতালে এখন রোগীদের সঠিক সেবা ও উন্নত চিকিৎসার স্বপ্নপূরণে বাস্তব রূপে পরিণত হচ্ছে। এটি একমাত্র সম্ভব হচ্ছে ডা. আনিসুর রহমানের সঠিক চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ সদর হাসপতালে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান আলহাজ এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়াম্যান আলহাজ নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং নবাগত সদর হাসপতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. আনিসুর রহমান হাসপাতালের রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে খোজঁ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে ডাক্তার সংকটের মধ্যে রয়েছ হাসপাতালটি। যেখানে সরকারের মঞ্জুরিকৃত ৬৪টি পদের মধ্যে মাত্র ১৭টি কর্মরত পদ রয়েছে, তার মধ্যে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন ১ জন এবং অনুপস্থিত রয়েছেন ১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে সংযুক্তিতে কর্মরত সহকারী সার্জন রয়েছেন মাত্র ৯ জন এবং স্থানীয় আদেশে সংযুক্তিতে কর্মরত সহকারী সার্জন রয়েছেন মাত্র ১১ জন। মাত্র ২০ জন ডাক্তার দিয়ে সারাজেলার রোগীদের চিকিৎসা দিতে কতটুকু সেবাই নিশ্চিত করা যায়, সে ভাবনা হাসপাতালে রয়েছে বরাবরের মতোই । কবে পূরণ হবে শূন্যপদের সংখ্যা, আশার আলোয় ফুঠে উঠবে উন্নত চিকিৎসায় সদর হাসপাতাল, সেই ভাবনা থেকেই যায়। এছাড়াও নার্সদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সেবা তত্ত্বাবধায়কের পদটি ও উপসেবা তত্ত্বাবধায়কের পদটি রয়েছে শূন্য। নার্সিং সুপারভাইজর ৫ জনের মধ্যে ৩টি পদ শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৪৭টি পদের মধ্যে কর্মরত ১০৪ জন, শূন্যপদ রয়েছে ১৪৩টি এবং এরমধ্যে ৬৫ জন রয়েছেন বদলির আদেশাধীন।
টেকনোলজিস্ট তথ্য অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১৪টি পদের মধ্যে ১০টি রয়েছে শূন্যপদ। এতসব শূন্যপদ থাকার পরও রোগীদের সেবা প্রদান করতে হচ্ছে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের। বছরখানেক আগে হাসপতালে ছিল প্রতিনিয়ত রোগীদের চিকিৎসার নানান জটিলতা। সেটি এখন কমতে শুরু হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক যোগদানের পর মাত্র ৮ মাসেই সদর হাসপাতালের চেহারা পাল্টে গেছে, উন্নত চিকিৎসার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে হাসপাতালে।
জানা যায়, গত ১৮ মার্চ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা. মো. আনিসুর রহমান। যোগদানের পর প্রথমে তিনি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা গ্রতিশীল করার লক্ষ্যে হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর করার চিন্তা-ভাবনা করেন এবং প্রথমে হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিছন্নতার আওতায় আনেন। বর্জ্য ব্যবস্থপনা নিশ্চিত করেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সাথে কথা বলে কুশল বিনিময় করেন প্রতিনিয়ত এবং তাদের সুচিৎিসার ব্যবস্থাও করেন। এছাড়াও সমস্ত হাসপাতাল নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার আওতায় আনেন, বন্ধ থাকা এক্স-রে বিভাগটি পুনরায় চালু করে প্যাথলজি সেবার পরিধি বৃদ্দি করেন। বন্ধ থাকা ডায়ালেসিস ইউনিট পুনরায় চালু করেন, করোনা রোগীর সেবা প্রদানের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্প্রসারণ করেন। লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করেন। জনবল বৃদ্ধির জন্য বিশেষ চিকিৎসক ও নার্স জনবল বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখছেন। রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য সেবা করতে ইচ্ছুক এমন স্বেচ্ছাসেবীদের হাসপাতালে সেবা প্রদানের সুযোগ করে দেন। রেফার্ড করা রোগীরাও এখন সিলেট থেকে টেস্ট করে এসে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন সদর হাসপাতালে। আর এ সবকিছু সম্ভব হচ্ছে নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমানের জন্য। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় হাসপাতালে এখন উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন রোগীরা।
সদর হাসপাতালের নবনিযুক্ত উপ-পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিসুর রহমানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, ২৫০ শয্যা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আমি শতভাগ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই। বর্তমান সরকার এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা ও ডাক্তার হিসেবে আমাদের ওপর থাকা দায়িত্বগুলো যদি সবাই সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করি তাহলেই রোগীদের শতভাগ সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। তাই রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য।
এমএসএম / জামান