অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে বালাসীঘাটে

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালাসীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন ৪০-৫০টি কাঁকড়া ও বালুবাহী গাড়ি দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহণ করছে একটি চক্র। যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে বালাসীঘাটে চলমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হুমকির মুখে পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করছে।সেই সাথে নদী-তীরবর্তী গ্রামের মানুষের বসতভিটা ও আবাদি জমি ভাঙনের সম্মুখিন হয়ে পড়বে। প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে বালাসীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা অনেকটা মগের মুল্লুকের মতো। নিজের ইচ্ছা মতো বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে একদল মানুষ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, আর অন্যদিকে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে।ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয় এবং নদীর পাড় ভেঙে যায়। অর্থাৎ নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান,গুটিকয়েক লোকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এভাবে সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষতি রোধ করতে হবে। তাদের দাবী,অবিলম্বে এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি না, সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কঞ্চিপাড়া ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে তার ভাই লিটন মিয়া ও মিলন মিয়া সহ একটি চক্র বালাসীঘাটের অদুরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে শ্রমিক দিয়ে অবাধে বালু তুলে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা করছেন। আর বালু বা মাটি বিক্রির জন্য তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেননি। বালু ব্যবসায়ীর এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত নদী থেকে প্রতিদিন বালু তুলছে। এসব বালু বিক্রি করছে বিভিন্ন এলাকায়। বালু তোলার ফলে বালাসীঘাটে চলমান ফেরীঘাট টার্নিমাল সহ প্রায় চারশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে বালু তোলা অব্যাহত থাকলে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই শত শত বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি ব্রহ্মপুত্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আর প্রতিদিন কাঁকড়া (ট্রাক্টর) ও ট্রাকে করে অবৈধভাবে বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজনের জমি দখল করে কাঁকড়া ও ট্রাক গাড়ী চলাচলের অভিযোগও রয়েছে।
বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই প্রভাবশালী বলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। দিন-রাতে ৪০-৫০টি কাঁকড়া ও বালুবাহী গাড়ি দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহন করা হয়। একটি কাঁকড়া প্রতিদিন ৭/৮ বার বালু পরিবহন করে। ২০০ টাকা হিসেবে একটি কাঁকড়া প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার বালু পরিবহন করে। এক ট্রাক ৫০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন একটি ট্রাক ৫/৬ হাজার টাকার বালু পরিবহন করে। সে হিসেবে বালাসীঘাটের একটি স্থান থেকে প্রতিদিন বালু বিক্রি হয় লক্ষাধিক টাকার। এহিসেবে শুধুমাত্র বালাসীঘাট থেকে ৭ মাস বালুর ব্যবসা চললে বছরে দুই কোটি টাকার উপরে বালু বিক্রি করে চক্রটি।
কিছুদিন আগে গাইবান্ধা-বালাসী সড়কে কাঁকড়া দিয়ে বালু পরিবহণে বাঁধা দেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর বালু ব্যবসায়ীরা দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে আবারও বালুর ব্যবসা চালু করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়,গাইবান্ধা-বালাসী সড়কে অন্তত ৭টি স্থানে প্রভাবশালীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছে চক্রটি। এরমধ্যে বালাসীঘাটের চৌরাস্তা মোড়ে এক সাবেক ইউপি সদস্যের দুইভাই, ভাষারপাড়া এলাকায় ডাকাতি মামলায় কারাবন্দি একজনের জন্য, কঞ্চিপাড়া ডিগ্রী কলেজ মোড়ে এলাকায় যুবলীগ,একাডেমী বাজার মোড়ে ছাত্রলীগ,হোসেনপুর মোড়ে বিএনপির যুবদল ও মদনেরপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের নামে নেতাকর্মীরা প্রতিরাতে বিভিন্ন অংকের চাঁদা তুলছেন। এছাড়াও পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা শহরের কিছু সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বালাসীঘাটে গিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় জমির মালিক বলেন, কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বালু ও মাটি উত্তোলন। এ বালু দিয়ে বাড়ি, রাস্তাসহ বিভিন্ন ভরাট কাজের ব্যবসা করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদীতে গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে তার খেসারত দিতে হয় নদী ধারের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির। অনেক গাছপালা যায় নদীগর্ভে।বালু ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন,আমার মতো অনেকেই বালু উত্তোলন করছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া আমাদের জমিতে চর জেগে উঠেছে,আর সেখান বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছি। তাছাড়া আমি একা না সবাইকে সম্পৃক্ত করেই বালু উত্তোলন করছি।
ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, বালু ব্যবসার সাথে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি।
ফুলছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন,বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া রাতে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। খুব শীঘ্রই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাফিন / জামান

সাজিদা ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর মোঃ লিয়াকত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

শান্তিগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাফনদীর মোহনায় ট্রলার ডুবি, ৭জেলে উদ্ধার

বালিয়াকান্দিতে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বাউফলে চেয়ারম্যান পরিবহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

আদমদীঘিতে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে পৌর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিতের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

দৌলতপুরে মুখ বাঁধা অবস্থায় নারীর মরদেহ উদ্ধার

কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উদ্ধারকৃত মোবাইল-অর্থ হস্তান্তর: মেহেরপুর জেলা পুলিশের জনবান্ধব উদ্যোগ

ভূরুঙ্গামারীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করছে উপজেলা প্রশাসন

পাবনায় ট্রিপল মার্ডারের রায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

গলাচিপা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে জামায়াতের এমপি পদ প্রার্থীর মত বিনিময় সভা

ত্রিশালে মসজিদে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত
Link Copied