হরিরামপুরে ভাঙন আতংকে পদ্মাপাড়ের শত শত পরিবার

পদ্মায় জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পদ্মাতীরবর্তী কাঞ্চনপুর, গোপীনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, বয়ড়া, হারুকান্দি ও ধূলশুড়া ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ভাঙন আতংকে দিন অতিবাহিত করছে নদীতীরবর্তী শত শত পরিবার। ধীরগতিতে জোয়ারের পানি আসা শুরু হলেও প্রায় দুই মাস যাবৎ ছোট ছোট ঢেউ আর স্রোতের তোড়ে এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিলে আতংক ছড়িয়ে পড়ে পদ্মা তীরবর্তী মানুষের মাঝে।
জানা গেছে, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া হতে গৌরবিরদিয়া এলাকায় প্রায় তিন মাস আগে থেকেই ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাটির চাপ ভেঙে এ এলাকার প্রায় আধা কি.মি. দৈর্ঘ্য ও ২০০ ফুট প্রস্থ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অনেক গাছপালা ও সমতল ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদীতীরের বসতবাড়ি। গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় জিও ব্যাগসহ নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে সমতল ভূমি, অসংখ্য ফসলি জমি ও গাছ পালা। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, বকচর, আলগীচর, জগনাথপুর ও ভাওয়ারডাঙ্গী, বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক, খালপাড় বয়ড়া, দাসকান্দি বয়ড়া এবং হারুকান্দি ইউনিয়নের খৈজনগর ও ধূলশুড়া ইউনিয়নের আলিয়ানগর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
রোববার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা যায়, গত বছর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালিতলার উজান হতে কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত এবং গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। প্রায় দুই মাস ধরে এ এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হলে জিও ব্যাগসহ নদীর পাড় ধসে যেতে দেখা যায়। যেসব এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়নি ওই এলাকার ভাঙন চিত্র অনেকটাই তীব্র আকার দেখা গেছে।
সাংবাদিক পরিচয় পেতেই কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালীতলা ও কোটকান্দি পশ্চিমপাড়ার নারী-পুরুষ ছুটে আসেন এবং অভিযোগ করে বলেন, গত বছর জিওব্যাগের কাজটি আশানুরূপ ভালো না হওয়া, অপরিকল্পিত ড্রেজিং এবং চলতি বছরে জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ছোট ছোট ঢেউয়ের বাড়িতেই জিওব্যাগসহ নদীর পাড় ধসে পড়ছে।
তারা আরো জানান, শুকনা মৌসুমে নদীর ভেতর থেকে জিওব্যাগ ফেললে ভাঙন অনেকটাই রোধ হতো। কিন্তু জিওব্যাগ ফেলে বর্ষাকালে। বর্ষাকালে জিওব্যাগ ফেলায় তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। এমনও আছে, অনেক জায়গায় জিওব্যাগই ঠিকমতো পড়েনি। এছাড়াও চাহিদার তুলনায় জিওব্যাগও কম হয়েছে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ৮৫ বছরের বৃদ্ধ হাশেম মল্লিক জানান, ‘পঞ্চাশ দশক থেকে এ পর্যন্ত চারবার বাড়ি ভাঙছে আমার। ভিটাবাড়ি, জমিজমাসহ প্রায় ১০০ ফাহির িউপরে এই গাঙ্গে চইল্যে গ্যাছে। অহন এই ১৩ শতাংশের ওপর এই বাড়িই আমার শেষ সম্বল। যেভাবে ভাঙন লাগছে তাতে এও এবার আর থাকব না।’
নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ওসমান সরদারের স্ত্রী ছালেহা বেগম নদীভাঙনের দৃশ্য দেখিয়ে বলেন, ‘এই দেহেন জিওব্যাগসহ নদীর পাড় কিভাবে ভাঙতেছে। ১৫ দিন আগেও গাঙ ওইখানে আছিল। আইজ দেহেন কোনে আইছে। সরকার যদি তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা না নেয়, তাইলে এবার বর্ষার আগেই আমার এই বাড়ি থাকব না।’
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে স্থানে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে সে এলাকায়ও ভাঙছে। আসলে এই ভাঙন রোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। তাই যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এবারও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের বাদশা জানান, গত বছর এখানে সামান্য এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু এবার জোয়ারের পানি আসা শুরু হতেই জিওব্যাগসহ নদীতে ধসে পরছে। জনমনে আবার সৃষ্টি হয়েছে ভাঙন আতংক। দ্রুত স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা না হলে এ বছরও অনেক ভিটেবাড়িসহ ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, বকচর, আলগীচর, জগনাথপুর ও ভাওয়ারডাঙ্গী এলাকায় এখনো কোনো জিওব্যাগ ফেলা হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি আসার শুরুতেই ছোট ছোট ঢেউয়ের আঘাত ও স্রোতের তোড়ে এ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থায়ী বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা না হলে পদ্মাতীরবর্তী প্রায় ৬টি ইউনিয়নই এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে জানান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বকচর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান।
উপজেলা সদরের বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাট থেকে খালপাড় বয়ড়া ও দাসকান্দি বয়ড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। খালপাড় বয়ড়া নদীর পাড়ে বিকেলে ঘুরতে আসা বলড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ তোফায়েল আহমেদ লিটন জানান, সাধারণত বৈশাখের শুরুর দিকে নদীতে জোয়ারের পানি আসা শুরু হয়। জোয়ারের পানি আসা শুরু হতেই আমাদের এখানে পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। গত সাত দিন আগেও এখানে কিন্তু ভালো ছিল। অথচ আজ ঘুরতে এসে দেখলাম অনেকখানি জায়গা নদীতে চলে গেছে। আমি মানিকগঞ্জ- ২ আসনের সাংসদ মমতাজ আপাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তা না হলে এই হরিরামপুরের অনেক এলাকাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
ধূলশুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জায়েদ খান মুঠোফোনে জানান, আমার ইউনিয়নে জিওব্যাগ ফেলা এলাকায় এখনো ভাঙন দেখা দেয়নি। তবে আলিয়ানগর এলাকায় এখনো জিওব্যাগ পড়েনি। জোয়ারের পানিতে ওই এলাকায় কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। আলিয়ানগরের পার্শ্ববর্তী লাগাতার এলাকা হারুকান্দি ইউনিয়নের ফৈজনগরেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে এখনো জিওব্যাগের কাজ হয়নি।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ মমতাজ বেগম বলেন, মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আামার কথা হয়ছে। আমাদের স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি শিগগিরই ভালো কিছু হবে।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে নদী ভাঙনের বিষয়টি আমি উত্থাপন করি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, গত বছর বাজেট স্বল্পতার কারণে কাঞ্চনপুর ও গোপীনাথপুরে যে পরিমাণ ডাম্পিং প্রয়োজন ছিল তাতে আশানুরূপ ডাম্পিং করা সম্ভব হয়নি। তারপরেও যতটুকু হয়েছে, তাতে কিন্তু ভাঙনরোধে অনেকটাই কাজে এসেছে। তারপরেও গত প্রায় এক মাস আগে এই দুই স্থানে পুণরায় ডাম্পিং এর জন্য অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে নোট দিয়েছি। কিন্তু এখনও অনুমোদন হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি রামকৃষ্ণপুর থেকে গোপীনাথপুর পর্যন্ত ৪ কি.মি. স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে। এছাড়াও ধূলশুড়াতে ১২০০ মিটার ডাম্পিং এর কাজ চলমান রয়েছে। আসলে এই ভাঙনরোধে যে পরিমাণ বাজেট দরকার সে পরিমাণ বাজেট আমরা পাচ্ছি না বলেই বেশি সমস্যা হচ্ছে। তবে খুব তাড়াতারিই ধাপে ধাপে পুরো হরিরামপুরেই ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
এমএসএম / জামান

মিরসরাইয়ে দাড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় নিহত হেলপার

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কুষ্টিয়ায় মাসিক রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত

রায়পুরে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা, উচ্ছেদে ধীরগতি

জমির জন্য বৃদ্ধ দম্পতিকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

শ্রীপুর পৌর শহরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান

আত্রাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

জয়পুরহাটে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

মেহেরপুরে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হাটহাজারী সাব রেজিস্টার অফিসে মূল দলিলের পাতা গায়েব করে ভুয়া পাতা সংযুক্ত

আগামী নির্বাচনে তারেক রহমানকে সংসদীয় ৫ আসনে উপহার দিতে মীর হেলাল উদ্দিনের বিকল্প নাই -গিয়াস উদ্দীন

১৪৫ কোটি টাকার ফেরিঘাটে নেই ফেরি, সরকারের নতুন চিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবল: স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সন্দ্বীপে কর্মশালা
