পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার রোল মডেল হবে ভোমরা স্থল বন্দর

পদ্মার বুকে জমে থাকা হাজারো দীর্ঘশ্বাস এখন আবেগের অশ্রু হয়ে জমা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চোখে। আগামী ২৫ জুন চালু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ এই সেতু চালু হলে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্থলবন্দর হিসেবে নতুন মাত্রা পাবে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। ভাগ্য বদলের আশায় আছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সাতক্ষীরা জেলা ছাড়াও দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সাথে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যেকোন বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধাবোধ করেন। বর্তমানে বন্দরটিতে আমদানি ও রপ্তানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। আর প্রতিদিন এই বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়ায় ১১০০ কোটি টাকায়।
তবে বন্দর প্রতিষ্ঠা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বন্দরটিতে নানা ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় আমদানিকৃত পচনশীল কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে পণ্যের উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হওয়ায় লোকশানের সম্মুখীন হন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
তবে পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভোমরা স্থল বন্দরের মাধ্যমে দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে বলে ধারণা বন্দর কর্তৃপক্ষের।
ভোমরা স্থল বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বলেন, ‘সকাল হলেই আমদানি ও রপ্তানির বিভিন্ন কার্যক্রমে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। সিএন্ডএফ এজেন্ট, কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন, শ্রমিক মিলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে বন্দরটিতে। বর্তমানে পণ্য আমদানির পর এখান থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। ফেরিতে অনেক সময় এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। দুর্যোগকালীন সময়ে ফেরি না পাওয়ায় এই নদীর পাড়েই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতেকরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। আবার ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পেরে পণ্যের উপযুক্ত দামও পাওয়া সম্ভব হয় না।
তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে জানিয়ে’ তারা বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে ভারত থেকে পণ্য আমদানির পর রাজধানীতে পৌঁছে যাবে ৫-৬ ঘণ্টায়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে খরচও কমে আসবে বহুলাংশে। এতে পাল্টে যাবে ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অতীত প্রেক্ষাপট।’
পরিবহণ শ্রমিকরা বলেন, ‘পদ্মার সঙ্গে তাদের কষ্টের স্মৃতির শেষ নেই। বর্তমানে মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ফেরিতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। আর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতো। সমস্যা হলো, ঘাটে গিয়েই ফেরিতে উঠার নিশ্চয়তা নেই। সময় মতো ফেরি না পাওয়ায় এই নদীর পাড়েই তাদের কেটে গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঝড়, বর্ষা, নদীর প্রবল ¯্রােত কিংবা ঘন কুয়াশায় পদ্মার পাড়েই কেটে গেছে দিন-রাত। সময়মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পারেনি বলে শেষবারের মতো দেখা হয়নি মৃত স্বজনের মুখ।’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকরা বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে ভোমরা স্থল বন্দর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের সময় ৫-৬ ঘণ্টা কমে আসবে। তখন পথপাড়ি দিতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি যাত্রাও সহজ হবে। ’
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ‘প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পদ্মা সেতু চালু হলে এসমস্ত আমদানিকৃত পণ্য ৫-৬ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে, যেখানে এখন ফেরিতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। ফেরিতে কখনো এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। কাঁচামাল পচেঁ যায়। এতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। ভোমরা বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। এখানে একটি কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে সকল পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায়ও দ্বিগুণ হবে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সাথে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যেকোন বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে ৫০-১০০ ট্রাক। এতে দৈনিক রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়নে বর্তমানে ভোমরা বন্দরে ১৫ একর জমির ওপরে কার্যক্রম চলছে। আরও ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া বন্দরকে গতিশীল করা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি মাস্টার প্ল্যানও হাতে নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এতে রাজস্ব আদায়ও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এমএসএম / এমএসএম

পারিবারিক কলহের জেরে পিতার হাতে পুত্র খুন

চিলমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

কুড়িগ্রামে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে জেলা পরিষদের শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান

ডায়াগণস্টিকে স্বাক্ষর জালিয়াতি : খাবারে নেই মেয়াদ, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা, অভিযোগের তীর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে

সাঘাটা খাদ্য বান্ধব ডিলার এসোসিয়েশনের কার্য্যনির্বাহী কমিটি গঠন

পঞ্চগড়ে প্রাঃ শিক্ষা অফিসারের অর্থ কেলেঙ্কারি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি কতৃপক্ষের

সাতক্ষীরা শহরের ৯নং ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ

গোদাগাড়ীতে উন্নত জাতের মাসকলাই বীজ ও সার বিতরণ

কাজ শেষে না করেই লাশ হলো দুই বন্ধু, ট্রাকের ধাক্কায় দুই তরুণের মৃত্যুতে চলছে শোক

ঠাকুরগাওয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মানোন্নয়নে ইন্টারফেইজ সভা
