লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিউজপ্রিন্টের দাম
হুমকির মুখে দেশের সংবাদপত্র প্রকাশনা

বাংলাদেশে নিউজপ্রিন্টের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নিউজপ্রিন্ট হচ্ছে দেশের সংবাদপত্র শিল্পের অন্যতম উপকরণ। গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিউজপ্রিন্ট তৈরির উপকরণ বা কাাঁচামারের সংকট দেখা দিয়েছে। আর সেজন্যই কাগজ তৈরির মিলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দিন দিন নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মাস আগে যে নিউজপ্রিন্টের মূল্য ছিল টনপ্রতি ৩৪ হাজার টাকা, গত মাসে তা এসে দাঁড়িয়েছিল প্রতি টন ৬৭ হাজার টাকা। আবার এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি টন এক লাফে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাগজ উৎপদানকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে চেয়েও নিউজপ্রিন্ট সংগ্রহ করতে পারছেন না ডিলারগণ। মিল মালিকরা নিউজপ্রিন্ট তৈরির কাঁচামাল সংকট ও ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধের উপক্রম। ক্রেতা বা সংবাদপত্রের মালিকদের কাছে মার্কেটের কাগজের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারাও বাড়তি মূল্যের জন্য সংকটে পড়েছেন। ডিলারগণ বলছেন, মিলগুলো দাম বাড়তি নিলেও চাহিদামতো কাগজ দিচ্ছে না।
নয়াবাজার এলাকার নিউজপ্রিন্টের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটে চলার মতো এবার নিউজপ্রিন্ট ব্যবসায়ও সংকট দেখা দিয়েছে। সংদবাদপত্র প্রকাশনার মূল উপাদান হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট। আর এই নিউজপ্রিন্টগুলো দেশীয় কাঁচামাল হতেই উৎপাদন করা হয়। দেশের অভ্যন্তরে নিউজপ্রিন্টের চাহিদাও কম নয়। সরকারি অপেক্ষা বেসরকারি পর্যায়ে নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন বেশি। আর এজন্যই উৎপাদনকারী মিলের মালিকগণ নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী খেয়াল-খুশিমতো নিউজপ্রিন্টের মূল্য বৃদ্ধির অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
সূত্র জানায়, গত এক বছরে কয়েক দফায় সংবাদ পত্রের এবং প্রকাশনা ব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপুর্ণ উৎপাদন নিউজপ্রিন্টে অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সংবাদপত্র হুমকির মধ্যে পড়েছে। দেশের সংবাদ পত্রের বিকাশে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো হতে প্রায় সহস্রাধীক সংবাদপত্র প্রকাশ হয়। সংবাদপত্রের পাঠক, নিউজপ্রিন্টের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে নিউজপ্রিন্ট সংগ্রহ দুরূহ হচ্ছে। আবার সংবাদপত্র প্রকাশনা অব্যাহত রাখাও কষ্টের বিষয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ালেখার বই, খাতাসহ অপরাপর উপকরণের জন্য নিউজ প্রিন্টের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই নিউজপ্রিন্ট নামক পণ্যের মূল্য দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে বাড়ছে।
সূত্র জানায়, করোনা সংকটকালীন সময়ে দেশে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়তে শুরু করে। যদিও করোনার সময় দেশের ছোট ছোট এবং মাঝারি ধাচের অধিকাংশ সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হয়নি। করোনা আর লক ডাউনে বড় বড় সংবাদপত্র বা সার্কুলেশন বেশি তারা নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করেছিল। কারণ তখনও দেশে নিউজপ্রিন্টের কাঁচামাল পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিল। এছাড়া, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি বা ট্রান্সপোর্ট খোলা থাকার কারণে পত্রিকাগুলো সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে নিউজপ্রিন্ট কিনতে পারতো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে নিউজপ্রিন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানী ব্যয়বহুল হওয়ায় নিউজপ্রিন্ট শিল্পের সাথে জড়িতরা কাঁচামাল আমদানী করতে পারছেন না। নিউজ প্রিন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সাভারের ভুঁইঞা পেপার মিল, আল নূর পেপার মিল, বগুড়ার বিএসএল, ইকো পেপার মিল, রাজা পেপার মিলসহ বেশ কয়েকটি নিউজপ্রিন্ট মিল কর্তৃপক্ষ এই দাবি করছেন।
নয়াবাজারের সোনালী ট্রেডাসের ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান জানান, নিউজ প্রিন্ট তৈরীর কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে। কাগজ তৈরীর মিলারগণ ওয়ার্ডার নেওয়ার পর কাগজ তৈরী করতে পারছেন না। মিলের মালিকগণ রমেটেরিয়াল পাচ্ছেন না। এই রমেটেরিয়াল আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এখন বিদেশ থেকে আনতে খরচ বেশী হওয়ায় আমদানী করা হয় না। আর এগুলো পঁচা-ছেঁড়া কাগজ দিয়েই নিউজ প্রিন্ট তৈরী করা হয়। গত দুই বছর করোনার কারণে দেশের স্কুল- কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এজন্য শিক্ষার্থীরা বই, খাতা তুলনামূলক নগন্য ক্রয় বা ব্যবহার করেছে। ফলে পুরাতন কাগজপত্রের সংকট দেখা দেওয়ায় এই অবস্থা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ নিউজপ্রিন্টের অর্ডার দেওয়া হয়, তার ১০ ভাগের এক ভাগ মিলাররা এখন দিচ্ছেন। এ অবস্থায় সামনে কাগজের সংকট আরও হাহাকার অবস্থায় পড়বে।
আলামিন ট্রেডার্সের ম্যানেজার সকালের সময়কে জানান, করোনার প্রকোপ যখন বেশি ছিল, তখন লক ডাউনের সময় যে সংকট হয়নি, এখন তার চেয়েও বেশী সংকট দেখা দিয়েছে। পত্রিকা ছাড়াও সাদা কাগজ টন প্রতি ৯২ হাজার টাকা গত মাসে বিক্রি করা হলেও এখন লাখের উপরে। মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিটন ১ লাখ ২ হাজারের উপরে। গত কয়েক মাস আগে ৩৪ হাজার টাকা টন মূল্যে নিউজপ্রিন্ট কেনা হয়েছে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। আর এখন সেই নিউজপ্রিন্ট প্রতি টন ৮০ হাজার টাকায় মিল থেকে আনা হচ্ছে। আর এরপরও তো আমাদের খরচ আছে। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীদের কিছুই করার নাই। অনেক সংবাদপত্র আমাদের উপর নির্ভরশীল। ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে নিউজপ্রিন্টের কাঁচামাল আমদানী করা বন্ধ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত দরে বড় পত্রিকার মালিক বা বড় ডিলাররা কাগজ কিনলেও চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে কাগজ সরবরাহ করছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিউজপ্রিন্ট ও সংবাদপত্র শিল্পের মুখ থুবড়ে পড়বে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। সিলভার এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, দেশে টাকার মানের তুলনায় ডলারের দাম বাড়তি হওয়ায় এই নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েছে। এই সংকট থেকে দ্রুত উত্তোরণের জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারত থেকে আগে একটি আইটেম ৯শ ডলারের আমদানি করতাম। এখন সেই আইটেমটি ১১শ ডলারে আমদানি করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি এই শিল্পের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ না নেন, তাহলে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মত সংবাদপত্র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাবে কাগজ ব্যবসায়ী বলছেন।
উল্লেখ্য, কাগজ সংকটের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার দুটি অন্যতম দৈনিক পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে সংবাদমাধ্যমের ওপর ধাক্কা বলছেন সে দেশের সংবাদপত্রের মালিকগণ। ব্যক্তিমালিকানাধীন ইংরেজি দৈনিক দ্য আইল্যান্ড নিউজ প্রিন্টের কাগজ এবং আর্থিক ঘাটতির কারণে প্রকাশ হচ্ছে না। তবে শুধু অনলাইন সংস্করণ খোলা থাকবে বলে ঘোষণায় জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ মার্চ সংবাদপত্র দুটির মালিকপক্ষ বার্তা সংস্থা এএফপি’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে কাগজ সংকটের কারণে দেশটির প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয় সে দেশের শিক্ষা বিভাগ।
এমএসএম / এমএসএম

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ
