ঢাকা বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫

সাতক্ষীরায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পালকি এখন বিলুপ্তির পথে


এস কে কামরুল হাসান, সাতক্ষীরা photo এস কে কামরুল হাসান, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১-১১-২০২২ বিকাল ৫:৩৬

সাতক্ষীরা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে প্রচলন ছিল পালকির। আশির দশক থেকে শুরু করে এই পালকিই ছিল একমাত্র বিবাহের বর-বৌ নিয়ে যাওয়ার একমাত্র বাহন। আধুনিকতা আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ এগিয়ে চলেছে। এরই সাথে হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী অন্যতম সংস্কৃতি পালকি।  এই তো কয়েক বছর আগেও যখন বর-বৌ বাহনের তেমন কোনো মাধ্যম ছিল না,  তখন একমাত্র ব্যবস্থা ছিল পালকি।

পালকি! বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এ পালকি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিলাসবহুল বাহন হিসেবেই এর পরিচিতি ও ব্যবহার ঠিক কত আগে শুরু হয়, বছরের মাপকাঠিতে তা বলা মুশকিল। মিসরীয় ও মায়া সভ্যতার চিত্রলিপিতে পালকির ছবি পাওয়া গেছে। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে লেখা বাল্মিকীর রামায়ণেও পালকির কথা এসেছে বহুবার।

এ দেশের সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতেও পালকির আছে এক বিশেষ মর্যাদা। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর বিখ্যাত ‘পালকির গান’ নামের ছড়ায় তুলে ধরেছেন এ দেশের গাঁয়ের পথে চলা পালকির এক অবিস্মরণীয়  যারা পালকি বহন করে তাদেরকে বেয়ারা বলে। পালকি সাধারণত কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়। কাঠমিস্ত্রীরা সেগুন, শিমুল কাঠ, গান কাঠ প্রভৃতি দিয়ে পালকি তৈরির কাজ করে। বটগাছের বড় ঝুরি দিয়ে তৈরি হয় বাঁট বা বহন করার দন্ড। পালকি সচরাচর তিন ধরনের হয়ে থাকে যেমন সাধারণ, আয়না ও ময়ূরপঙ্খি। সাধারণ পালকি আয়তাকার।

চারদিক কাঠ দিয়ে আবৃত এ পালকির বাইরের দিকে আলপনা আঁকা থাকে। আয়না পালকিতে আয়না লাগানো থাকে। ভিতরে চেয়ারের মতো দুটি আসন ও একটি টেবিল থাকে। ময়ূরপঙ্খি পালকির আয়তন সবচেয়ে বড়। এটি ময়ূরের আকৃতিতে তৈরি করা হয়। ভিতরে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল ও তাক থাকে। এর বাঁটটি বাঁকানো। বাইরের দিকে কাঠের তৈরি পাখি, পুতুল ও লতাপাতার নকঁশা থাকে।

এক সময় জমিদারদের প্রত্যেকেরই পালকি ছিলো, যদিও সাধারণ মানুষের ছিলো না। তবে পালকি ভাড়া দিতো একটা সম্প্রদায় । আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে ধারক বা বাহন ছিলো এই পালকি। গ্রাম বাংলার প্রকৃতির সাথেই যেন মিশে গেছে পালকি। গ্রামের মেঠো পথ ধরে বেয়ারারা গানের সুরে পালকি বেয়ে চলেছেন, চার বেহারার পালকি রে, যায়রে কন্যা স্বামীর ঘরে। পালকির ভিতর থেকে নববধু উঁকি মেরে দেখছে, এ যেন এক অপরুপ দৃশ্য। কান্না ভেজা নয়ন তবু জেনো নতুনত্বের এক স্পন্দন। এক সময় এই পালকি ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেতো না, গরীব, ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেরই একটাই বাহন পালকি। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পালকির প্রচলন উঠে গেছে সমাজ থেকে।

গ্রামগঞ্জে বহুকাল ধরে একটি প্রথা চালু ছিলো যেটা হচ্ছে পালকিতে চড়িয়ে নতুন বধূকে ঘরে আনা।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজকাল পালকির দেখা অনেকটাই কল্পনাতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোনো এক সময় দেখা যেত, বর যদি কনের বাড়িতে পালকি নিয়ে যেতো তাহলে আশেপাশের হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুসহ সকল শ্রেণির মানুষ এক নজর সেটি দেখতে যেতো। তাদের কাছে পালকির বিয়ে কতই না উৎসব আর আমেজের ছিলো। বর্তমান সময়কার ছেলেমেয়ের কাছে এগুলো রুপকথার গল্পের মতো মনে হবে। বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মানুষ এখন অতি সৌখিনতা অবলম্বন করার ফলে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোকে হারাতে বসেছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে এগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতার অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে।

ছোটবড় যানবাহন বাড়ার সাথে সাথে দিনদিন পালকির মতন পশুচালিত যানবাহনগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। যেমন, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন মানুষ যাতায়াতে বিভিন্ন ধরনের বাস, মাইক্রোবাস,সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে কেউ কেউ হেলিকপ্টার নিয়েও বিয়ে বাড়িতে যায় কনেকে নিয়ে আসার জন্য।

পালকিতে চড়িয়ে নববধূ নিয়ে আসা সুজন আরেফিন বলেন, আমাদের অঞ্চলে ২০-২৫ বছরের মধ্যে পালকিতে চড়িয়ে নববধূ আনতে দেখিনি। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো পালকিতে চড়িয়ে নববধূ ঘরে আনবো। তাই বগুড়া থেকে ২২ হাজার টাকায় পালকি ভাড়া করি। তিনি আরও বলেন, আমাদের এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখা উচিত।

 কালিগঞ্জ উপজেলা মৌতলা   গ্রামের রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ৩৫-৪০ বছর আগে পালকিতে চলাফেরা করতো।পরবর্তী সময়ে আর পালকির দেখা পাইনি। এখন আর পালকির প্রচলন তেমন চোখে পড়ে না।

বর্তমানে পালকিকে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই ধরা হয়। বেহারাদের কাঁধ থেকে পালকির স্থান হয়েছে এখন বিভিন্ন জাদুঘরে। সভ্যতা এবং বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে পালকিকে হয়ত আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে পালকির কথা ভুলে না যাই সেদিকে আমাদের সুদৃষ্টি রাখা একান্ত প্রয়োজন।

এমএসএম / জামান

আদমদীঘির কাঞ্চনপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম ৯ আসনে শামসুল আলমকে বিএনপি’র মনোনয়নের দাবি ১৫ সংগঠনের

গোপালগঞ্জে গ্রাম আদালত উন্নয়নে ডিএমআইই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

সিরাজদিখানে প্রবাসীর স্ত্রী শিউলি আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু

ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়

নরসিংদীর চরাঞ্চলে খেয়াঘাটে টাকা আদায় নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

ভোলায় ৬৭৮ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ

মহেশপুরে আলমসাধুর ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক কলেজ ছাত্র নিহত

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান

‎সংবাদ প্রকাশের পর ডালারপাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে উপজেলা প্রশাসনসহ নৌপুলিশ

হাতিয়ায় ৬ হাজার ৪০০ কেজি জাটকা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড

আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করায় চাঁদপুরের পুরাণবাজারে বিক্ষোভ মিছিল

রায়গঞ্জে সেতুর অভাবে প্রতিদিনের যাতায়াত দুর্ভোগ, অর্ধলাখ মানুষের দুর্দশা